More

Social Media

Light
Dark

জয় না আসলেও জয়মাল্য প্রাপ্য

ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের সম্ভাবনার ম্যাচে উত্তেজনার পারদ আকাশ ছোঁয়। সেই পারদ আর নিচে আসেনি এক মুহূর্তের জন্যে। মারুফার বলে যখন মেঘনা সিং জ্যোতির হাতে ক্যাচ দেন, তখন ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র এক রান।

উত্তেজনার তৃতীয় ওয়ানডে শেষ হয় কোন ফলাফল ছাড়াই। সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র। নারীদের ক্রিকেটে এই নিয়ে নবম ওয়ানডে ম্যাচের ফলাফলে নেই কোন বিজয়ী।

টস ভাগ্য আবারও বাংলাদেশের পক্ষে। এবার নিগার সুলতানা জ্যোতি আগে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত নিলেন। বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে বেশ পরিবর্তন।

ads

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পান ফারজানা হক পিংকি। তার সঙ্গী শামীমা সুলতানা। এই জুটির সফলতার মুখ দেখে। শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের।

একটু ধীরস্থির শুরু। তবে তা কার্যকর। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৯৩ রান। এই পার্টনারশিপে চালকের আসনে ছিলেন শামীমা। তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ৭৮ বলে ৫২ রানে আউট হয়ে ফেরেন শামীমা। তবে ফারজানা অপর প্রান্তে এদিন দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে যান।

একটা প্রান্ত আগলে রাখেন তিনি একা হাতে। তাতে অবশ্য রানের চাকা সচলই থাকে বাংলাদেশের মেয়েদের। শামীমার পর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির সাথেও ছোট একটা জুটি গড়েন পিংকি। স্নেহা রানার দ্বিতীয় উইকেটে পরিণত হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অধিনায়ক।

কিন্তু তখনও ইতিহাস গড়ার দিকেই নজর ফারজানা হকের। তিনি নিজের টেম্পারমেন্ট আর লক্ষ্য স্থির রেখেছিলেন। রিতু মনি সঙ্গ দিতে পারেননি ঠিক। কিন্তু সোবাহানা মোস্তারিকে সাথে নিয়ে পিংকি ছুঁয়ে ফেলেন নিজের ব্যক্তিগত শতরান।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম শতক। ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখার পাশাপাশি ফারজানা নিজ দলকে শক্ত রানের ভিত গড়ে দেন।

ভারতকে ২২৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। এটি আবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বিশাল এই রান বোর্ডে তুলে যেন খানিকটা নির্ভার হতে চেয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।

তবে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই, নির্ভরতার ছিল না কোন সুযোগ। নিজেদের প্রক্রিয়া মেনে বোলিং করে যেতে থাকেন বাংলাদেশের মেয়েরা।

মারুফা ও সুলতানার আঘাতে ৩২ রানে দুই উইকেট হারায় ভারত। সাজঘরে তখন শেফালি ভার্মা ও স্বস্তিকা ভাটিয়া। কিন্তু তাতে ভারত খুব একটা বিচলিত হয়নি। কারণটা সম্ভবত অভিজ্ঞতা। দলের হাল ধরেন দুর্ধর্ষ ব্যাটার স্ম্রিতি মান্দানা ও হারলিন দেওল।

দুই জন মিলে গড়ে তোলেন ১০৭ রানের ব্যাটিং দূর্গ। তবে সেই দূর্গের পতন ঘটান ফাহিমা খাতুন। ফেরান ৫৯ রান করা মান্দানাকে। তখনও বাংলাদেশের জয় বেশ দূরের পথ।

সেটাকে আরও কঠিন করে তুলছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কর। কিন্তু নাহিদা আক্তারের শিকারে পরিণত হন তিনি। তখনও উইকেটে সেট ব্যাটার হারলিন দেওল।

ফাহিমা খাতুনের দুরন্ত এক থ্রো-তে খেলার মোড় ঘুরে যেতে শুরু করে। হারলিনের ঠিকানা হয় বাউন্ডারির বাইরে। এরপর দ্বীপ্তি শর্মা রান আউট হলে ১৯২ রানে ৬ উইকেট হারায় ভারত।

সেখান থেকে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে জ্যোতির দল। তাদের সেই স্বপ্নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর আপ্রান চেষ্টা চালান জেমিমাহ রদ্রিগেজ। তাতে সফলও হন।

তবে জয় ছিনিয়ে নিতে পারেননি জেমিমাহ। আগের দিনের ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় এদিন ভারতকে ম্যাচ জেতাতে হন ব্যর্থ। ৪৯.৩ ওভারে মেঘনা সিং দশম উইকেট হিসেবে মাঠ ছাড়েন।

আর তাতে টাই হয়ে যায় ম্যাচের ফলাফল। দারুণ এক ম্যাচের পরিসমাপ্তিতে জয় না পাওয়ার বিন্দু পরিমাণ আক্ষেপও অন্তত থেকে যাবে বাংলাদেশের মেয়েদের।

ঘরের মাঠে ভারতের মত পরাশক্তিকে হারানোর সুযোগ অন্তত প্রতিদিন আসে না। খুব কাছে গিয়েও বেশ খানিকটা দূরেই রয়ে গেল জ্যোতিদের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। আইসিসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের এই সিরিজটি তবুও স্মরণীয় হয়ে রইবে বাংলাদেশের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link