More

Social Media

Light
Dark

বিতর্ক ও ব্যর্থতায় ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ

ষোল বছরের আক্ষেপ আরো সুদীর্ঘ হলো বাংলাদেশের। নেপালের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেও সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেলো জামাল-তপুদের। শেষ ২০০৫ ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার ভারতের কাছে শিরোপা হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। তারপর আর ফাইনালে উঠতে পারেনি ফুটবলে ধুকতে থাকা বাংলাদেশ। কে জানে, গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর লাল কার্ড না হলে, কিংবা শেষের দিকে রেফারির ভুলে নেপাল পেনাল্টি না পেলে হয়তো ফলাফলটা ভিন্ন হতে পারতো।

জিতলে ফাইনাল, আর হার কিংবা ড্র করলেও দেশের পথ। এই সহজ সমীকরণ নিয়ে মালদ্বীপের জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে সাফের অলিখিত সেমিফাইনালে খেলতে নামে বাংলাদেশ নেপালের বিপক্ষে। নেপাল তিন ম্যাচ খেলে দুই জয় ও এক হারে সংগ্রহ করেছিল ছয় পয়েন্ট অপরদিকে বাংলাদেশের সংগ্রহ চার। এক জয়, এক ড্র ও এক হারের বদৌলতে। ফাইনালে জেতে জয়ের ব্যতীত আর কোন কিছু নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিলনা বাংলাদেশের। ন্যদিকে ড্র করতে পারলেই ফাইনলে চলে যাবার হাতছানি ছিল নেপালের সামনে।

ড্রয়ের চিন্তা থেকেই নেপাল কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি রক্ষণ আঁটসাঁট করতে ৫-৩-২ ফরমেশনে খেলতে নামান দলকে। কিন্তু জয়ের বিকল্প না থাকায় বাংলাদেশের কোচ অস্কার ব্রুজোন তূলনামূলক আক্রমণাত্মক ৪-১-৪-১ ফরমেশনে দলকে মাঠে পাঠান জামাল ভুঁইয়ার নেতৃত্ব।

ads

বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন এ ম্যাচে অস্কার ব্রুজোন। মতিন মিয়ার পরিবর্তে সুমন রেজা, সোহেন রানার পরিবর্তে  সাদউদ্দিন ও কার্ড সমস্যা কাটিয়ে রাকিব হোসেন ফেরেন দলে। পরিবর্তনগুলো যেন আশীর্বাদে পরিণত হয়। ম্যাচের আট মিনিটের মাথায় নেপাল তাঁদের ডি-বক্সের ডান পার্শ্বে রাকিবকে ফাউল করার সুবাদে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ।

যথারীতি জামাল ভুঁইয়ার নেন ফ্রি-কি। সেই ফ্রি কিক নেপালের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন হলে সেই বলে মাথা ঠেকিয়ে গোল আদায় করে নেন সুমন রেজা। ম্যাচের নয় মিনিটেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ষোল বছরের ফাইনাল খেলার আক্ষেপ মোচনের হাতছানি। ড্র করার পরিকল্পনায় শুরুতেই আঘাতে কিছুটা দিশেহারা হয়ে জমাট রক্ষণের ভাঙ্গন ঘটিয়ে অল-আউট অ্যাটাকে জেতে শুরু করে নেপাল। তবে শুরুর দশ মিনিটে এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ মনোযোগ দেয় রক্ষণে।

খানিকক্ষণ এলোমেলো খেলে নিজেদের খেলা গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে অঞ্জন বিস্টারা। প্রথম অর্ধে ৬৫ শতাংশ বলের দখল নিজেদের কাছে রেখে আক্রমণ চালালেও নেপালের সকল আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন তপু, তারিক, জিকোরা। আর আক্রমণ সামলে চটজলদি পালটা আক্রমণে চলে যেতে শুরু করে সুমন, সাদ, রাকিবরা। বেশ কিছু সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগেতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। দুই দল গোল করতে ব্যর্থ হলে ১-০ গোল ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যাবার আদেশ দেন ম্যাচ রেফারি।

দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ আক্রমনাত্মক মনোভাব নিয়েই খেলা শুরু করে নেপাল। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ যেন ফিরে যযায় তাঁদের পুরোনো কৌশলে। রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। তবে নেপাল শুরুতেই কা৬পন ধরিয়েছিল বাংলাদেশের রক্ষণদূর্গে। আশানুরুপ ফলাফল আসেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ বলার মতো কোন আক্রমণই সাজাতে পারেনি। বরং গোলরক্ষক জিকোর নৈপূর্ণ্যে বিপদের সম্মুখীন হয়নি বাংলাদেশ। এ ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে ত্রাণকর্তারুপে আবির্ভূত হয়েছেন আনিসুর রহমান জিকো।

কিন্তু স্রোতের বিপরীতে ম্যাচের ৭৮ মিনিটে ডি-বক্স থেকে বেড়িয়ে এসে দলকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে গিয়ে নিজের জন্যে বিপদ ডেকে আনেন জিকো। অনিচ্ছাকৃতভাবে বল হাতে লাগলেও, রেফারি কোন কালক্ষেপন না করেই লাল কার্ড দেখান জিকোকে। দশ জনের দল নিয়ে বাকি দশ মিনিত খেলতে হয় বাংলাদেশের। তাঁর বদলে গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নামে আশরাফুল ইসলাম রানা।

রক্ষণাত্মক খেলা খেলতে গিয়ে যেন ভুলের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ম্যাচ মিনিট পাঁচেক আগে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন সাদউদ্দিন। সেই সুবাদে পেনাল্টি পায় নেপাল। নেপালি তারকা ফুটবলার অঞ্জন বিস্টা গোল আদায় করে নেন। বলের লাইনে থাকলেও তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হন বদলি গোলরক্ষক রানা। ১-১ এ সমতা। নেপাল ফেঁটে পড়ে আনন্দ উল্লাসে। তাঁদের তো দরকার ছিল শুধু একটি পয়েন্ট।

শেষমেশ রেফারির বিতর্কিত পেনাল্টি আদেশের ফলশ্রুতিতে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশে। অপদিকে নেপালের ফুটবল ইতিহাসে তাঁরা প্রথমবারের মতো স্বাদ পায় ফাইনালের উঠবার। একদিকে নেপালিদের আবেগের অশ্রুধারা, আরেকদিকে ম্যাচ অফিসিয়ালদের সাথে বাংলাদেশিদের তর্ক-বিতর্ক – এর মধ্যেই শেষ হল বাংলাদেশের ব্যর্থ সাফ যাত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link