More

Social Media

Light
Dark

এক মালান বীরত্বেই মলিন স্বপ্ন

মিরপুরের পিচ বড্ড রহস্যময়। কোচ সালাউদ্দিন তো একবার বলেছিলেন, ‘মিরপুরের উইকেটে মাঝে মধ্যে ভূত নেমে আসে। সেই কল্পিত ভৌতিকতার ছায়া দেখা গেল বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড মধ্যকার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও। শুরুতে উইকেট দেখে মনে হল বাউন্সি পিচ। কিন্তু ইনিংস কিছুদূর না গড়াতেই দেখা মিলল সেই চিরচেনা স্পিন বিষের দৃশ্য।

আদিল রশিদের লেগ স্পিন ভেলকিতে যেন আবর্তিত হলেন শেন ওয়ার্ন। আর মইন আলীও বনে গেলেন পুরোদস্তুর অফস্পিনারের ভূমিকায়। এতেই ইংলিশদের পেস আগ্রাসন আর স্পিন ঘূর্ণিতে দিশেহারা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। কোনোমতে দুইশো পেরোনো স্কোর পায় টাইগাররা।

কিন্তু মিরপুরের পিচ বলে কথা। বেলা ফুরোনোর সাথে ততক্ষণে বাউন্সি পিচ হয়ে উঠেছে স্পিনারদের জন্য স্বর্গরাজ্য। তাই তাইজুল, সাকিবদের নিয়ে লড়াইয়ের আশাটা তখনও জিইয়ে ছিল। হয়েছেও তাই। বাংলাদেশের দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতে ইংলিশ ব্যাটারদের রীতিমত ঘাম ছুটে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জয় এসেছে ৩ উইকেটে।

ads

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এ দিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ২০২ দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকা তামিমের কাঁধে আবারো ইনিংস শুরুর দায়িত্ব। শুরুটাও ভালই করলেন। জোফরা আর্চার, মার্ক উডের পেস সামলালেন ঠিকঠাক ভাবেই। কিন্তু ইনিংস আর বড় করতে পারলেন না। ৩২ বলে ২১ রান করে উডের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন তিনি।

অবশ্য ইনিংসের প্রথম আঘাতটা হানেন ক্রিস ওকস। দুর্দান্ত এক সুইংয়ে লিটন দাসকে ফেরান তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসে এ দিন উইকেট আঁকড়ে ধরেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতককে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ৫৮ রানেই শেষ হয় শান্তর ইনিংস। শান্তকে সঙ্গ দিয়ে উইকেটে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ব্যাট হাতে এ দিন বড্ড খাপছাড়া আর অগোছালো ছিলেন তিনি। আদিল রশিদের বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে মার্ক উডের তালুবন্দী হন মুশফিক।

মুশফিকের মতো সুইপ শট খেলতে গিয়ে সাকিবও এ দিন ফেরেন দ্রুতই। মইন আলীর বলে বোল্ড হয়ে ৮ রানে ফিরে যান তিনি। শান্তর পরে বাংলাদেশের ইনিংসে হাল ধরেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ৩১ রান করেই বিদায় নেন তিনি। আর এরপরেই খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। লোয়ার মিডল অর্ডারে এ দিন আফিফ, মিরাজও তেমন সুবিধা গড়তে পারেননি। লোয়ার অর্ডারে তাইজুল, তাসকিনদের কল্যাণে কোনোমতে দুইশো পার করে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ১৬ বল বাকি থাকতেই ২০৯ রানে অল আউট হয় টাইগাররা।

২১০ রানের সহজ লক্ষ্য। কিন্তু সেটিই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশি স্পিনারদের স্পিন ভেলকিতে। ইনিংসে শুরুর আঘাতটা হানেন সাকিব। প্রথম ওভারেই তামিম ইকবালের কাছে ক্যাচ বানিয়ে জেসন রয়কে প্যাভিলিয়নে ফেরান তিনি। এরপরের দৃশ্যপটা তোলা ছিল তাইজুলের জন্য। ফিলিপ সল্টকে বোল্ড করার পর জেমস ভিন্সকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি।

ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলারও এ দিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাসকিনের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কিছুটা ব্যাকফুটে ইংলিশরা। তবে একপ্রান্ত উইকেট আগলে রেখে ইনিংস মেরামতের কাজটা ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছিলেন ডেভিড মালান। সাথে উইল জ্যাকসও তাঁর সাবলীল ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ২৬ রানে মিরাজের বলে আফিফের তালুবন্দী হন তিনি।

উইল জ্যাকসের পর মইন আলী, ক্রিস ওকসরাও ইংল্যান্ড ইনিংসে তেমন রান যোগ করতে পারেননি। তবে এ দিন যেন লড়াইটা একাই চালিয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড মালান। ব্যক্তিগর অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পর এ দিন তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারও স্পর্শ করেন তিনি। আর তাতেই ৯ বল হাতে রেখে ইংল্যান্ড পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। মালান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৪৫ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link