More

Social Media

Light
Dark

প্রমাণের মিশন কিংবা ফেরার প্রত্যয়

জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে হ্যাভিয়ের কাবরেরা ২৩ জনের দল ঘোষনা করেছেন ফিফা প্রীতি ম্যাচের জন্য। সেখানে দুজন চমক রয়েছে, একজন মারাজ হোসেন অপরজন ইসা ফয়সাল। আর সর্বশেষ দলে আলোচিতদের মধ্যে বাদ পড়েছেন মাহবুবুর রহমান সুফিল, মতিন মিয়া, সাদ উদ্দিন, বিশ্বানথ ঘোষের মতো খেলোয়াড়রা। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে নাসিরুল ইসলাম, রায়হান হাসানদের দলে ফেলার বিষয়টি।

কোচ দল ঘোষনার আগে অনেকটা পরিস্কার করেই বলেছিলেন বয়স কিংবা অভিজ্ঞতা নয় পারফম্যান্সই হবে দলে সুযোগ পাওয়ার প্রধান উপজীব্য। অবশেষে হলোও তাই। পারফরম্যান্স করলে যে একটা না একটা সময় সুযোগ মিলবে সেটা মারাজ ও ইসার সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো। বাংলাদেশের ফুটবলে নিকট অতীতেও মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হাসান এমিলি, জাহিদ হোসেন, জামাল ভুইয়া, সোহেল রান, ইয়াসিন খান, ইয়ামিন আহমেদ চৌধুরী মুন্নাদের মতো তরুণ ডিফেন্ডার নাসিরুল ইসলাম নাসিরও ছিলেন জাতীয় দলের অন্যতম ভরসার নাম ছিলেন। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি ওভারল্যাপ করে আক্রমণেও ভূমিকা রাখতেন এই খর্বকায় ফুটবলার।

চলতি মৌসুমে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোয় ৫ বছর পর ফুলব্যাক হিসেবে আবারও জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন নাসির। মূলত সর্বশেষ মৌসুমে চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সেবারের লিগে বসুন্ধরা কিংসকে একমাত্র পরাজয় উপহার দিয়েছিল চট্টলার দলটি। সেই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছিলেন তিনি।

ads

নাসির তাই প্রত্যাশা করেছিলেন আবারো জাতীয় দলে ফেরার, ’জাতীয় দলে নিয়মিত না হলেও ঘরোয়া ফুটবলে খেলে গেছি। কয়েক বছর পর হলেও আবার জাতীয় দলের স্বাদই আলাদা। এর সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।’ বছর পাঁচেক আগেও অপরিহার্য এই ডিফেন্ডার ইনজুরির সাথে অফ ফর্ম মিলিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেননি। ত্রিশোর্ধ্ব নাসির ফিরতে চান পুরোনো আর প্রিয় জায়গায়। শ্রীলঙ্কায় চারজাতি টুর্নামেন্টের জাতীয় দলের ক্যাম্পে তুললেও পরে কোচের তালিকায় নাম না থাকায় অনেকটা কষ্ট নিয়ে বাইরে চলে যেতে হয়েছিল। একই অভিজ্ঞতা ছিল সাইফের আরেক ফুটবলার মারাজ হোসেনের অপিরও, তবে এবার আর দুজনের কাউকে হতাশ হতে হয়নি।

কয়েক মৌসুম ধরে সাইফ এসসিতে খেলা মারাজকে যারা দেখেছেন তারা ভবিষ্যতের জন্য জাতীয় দলের ফুটবলার হিসেবে তাকে চাইছিলেন। মূলত এই ক্লাবে খেলেই নিজের টেকনিক আর ট্যাকটিকসে পরিবর্তন আনেন। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর মারাজ বলেন, ‘এর আগে বয়সভিত্তিক দলে খেলেছি, জাতীয় দলে প্রথমবার মতো ডাক পেলাম। আশা করি কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে দলে নিয়মিত হতে পারব।’

গাজীপুর থেকে দীর্ঘদিন পর একজন ফুটবলার উঠে এসেছেন। আসা এই ফুটবলার জাতীয় দলে নিজের জায়গা স্থায়ী করার পাশাপাশি প্রমানের মঞ্চ হিসেবে দেখছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে বিদায় নিলেও জেমি ডে’র চোঁখে ফুটবলের ভবিষ্যৎ হিসেবে তিনজন ফুটবলারের নাম বলেছিলেন। সেই তিন নামের একটি হলো মারাজ হোসেন।

জেমির পছন্দের ফুটবলার ডাক পেলেন স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার সময়ে এসে। তাহলে পরিস্কার বোঝা গেছে তার প্রতিভা নিয়ে কোন সংশয় নেই। ২০১৫ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন মারাজ। তাঁর ভালো গুণের পাশাপাশি দোষের কথাগুলো সাইফের সাবেক বেলজিয়ামের কোচ পল পুট ও ইংলিশ কোচ স্টুয়ার্ট হল বলতেন, ‘মারাজ অনুশীলনে যা খেলে, ম্যাচে তার অর্ধেক ম্যাচে খেলতে পারলে আরও ভাল খেলোয়াড় হতো।’

মারাজের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবের লেফটব্যাক ঈসা ফয়সাল। তিনিও বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছেন। ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ ও গত বছর খেলেছেন অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে চাকরির সঙ্গে খেলে চলেছেন দলটির হয়ে। রক্ষণভাগ সামলে ওভারল্যাপ করে ওপরে উঠে গোলমুখে ভালো ক্রস করেই কোচের নজরে পড়েন। সে কারণেই পুলিশের রোমানিয়ান কোচ আরিস্তিকা সিওবা বর্তমানে তাঁকে খেলাচ্ছেন লেফটউইঙ্গার হিসেবে।

এরই মধ্যে গোলও করিয়েছেন দুটি। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর ঈসা বলেলন, ‘প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটাকে কাজে লাগাতে চাই। বর্তমানে যেভাবে খেলছি তাতে করে একটা আত্ববিশ্বাস তৈরি হয়েছে, কোচ সুযোগ দিলে সেরাটা দিয়েই নিজের জায়গাটিকে পোক্ত করতে চাইব আমি।’ প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতে তাঁকে লড়াই করতে হবে ইয়াছিন আরাফাত, রিমন হোসেনদের মতো তরুন তুর্কিদের সঙ্গে।

তবে অনেকদিন পর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে আক্ষেপের নাম হয়ে আছে সাদ উদ্দিন। যতদিন তিনি ঢাকা আবাহনী লিমিটেডে খেলেছেন ততদিন জাতীয় দলে নিয়মিতই খেলেছেন। কিন্তু যেই শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে যোগ দিয়েছেন তাতেই যেন মুদ্রার উল্টাপিঠও দেখা হয়ে গেছে তার। অথচ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কলকাতার যুব ভারতী স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে জামাল ভুইয়ার ক্রিস থেকে করা গোলটি স্বরণীয় হয়ে আছে। যদিও ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ।

শুন্যে ভাসিয়ে যে হেড করেছিলেন সেটি অনেকেরই চোঁখে লেগে আছে। গত কয়েক বছরে ইংলিশ কোচ জেমি ডে’র অধীন নিজেকে প্রথম পছন্দের হিসেবে প্রমাণ করা সাদ স্প্যানিশ যুগের শুরুতে বাদ পড়ে গেলেন। এর আগে ২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসে জেমি’র অধীন ফরোয়ার্ড হিসেবে সাদের যাত্রা শুরু হয়। সে বছর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও দলে ছিলেন। এরপর চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়লেও বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দিয়ে আবারো লাল সবুজ জার্সিতে ফেরেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েই নায়ক বনে গিয়েছিলেন।

কিন্তু এখন আর নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। শেখ রাসেল যোগ দিয়ে শুরুতে নিয়মিত একাদশে ছিলেন। এরপর দলের দুরাবস্তার শিকার তাকেও হতে হয়েছে। ৮ ম্যাচে মাত্র ১২ পয়েন্ট পাওয়া রাসেলের ১৩টি গোল হজমও একটি বড় কারণ। একজন ডিফেন্ডার হিসেবে দলের এতগুলো গোল খাওয়ার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না এই রাউড ব্যাক। তাইতো জাতীয় দলে ফিরতে হলে পারফরম্যান্সে বদল আনতে হবে। কোচের মনযোগ আকর্ষনের মতো কিছু করে দেখাতে পারলেই কেবল সুযোগ মিলবে। নয়তো সারাজ হোসেন, ইসা ফয়সালের মতো তরুণদের জায়গা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link