More

Social Media

Light
Dark

আরেক আশাভঙ্গের গল্প

৬ মিনিটের অতিরিক্ত সময়, কর্নার, ফ্রি-কিক; কম সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ দল শেষ মিনিট মিরাকল ঘটানোর।

৬ মিনিটে কাঁটা স্পর্শ করতেই রেফারি রেজাস নাগভেন বাজিয়ে দিলেন তার লম্বা বাঁশি। দশরথ স্টেডিয়ামে তখন কান পাতা দায়। ৩৮ বছর পর শিরোপার ছোঁয়া পাওয়া নেপালবাসীদের প্রতিটি আত্মচিৎকার যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দশরথ স্টেডিয়ামের কোনায় কোনায়। একই মাঠের এক কোনায় নিজেদের তরী ডোবার কষ্টে ডুবে আছেন জামাল ভূঁইয়া- মাশুক মিয়া জনিরা। তাদের কষ্ট এত কাছে এসেও শিরোপা ছুঁয়ে না দেখতে পারার। থ্রি নেশনস কাপের ফাইনাল নেপালের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ২-১ গোলে। ১৭ বছরের প্রতীক্ষা আরো একটু দীর্ঘ হলো।

ads

ম্যাচের শুরুই হয়েছিল চমক দিয়ে। ২ ম্যাচে ২২ জন খেলোয়াড়কেই খেলিয়ে দেখেছিলেন কোচ জেমি ডে। তার মধ্য থেকে পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে বেছে নিবেন ১১ জনকে, এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু একাদশ দিতেই দেখা গেল মাঠে নেই প্রথম ম্যাচে ম্যাচ সেরা হওয়া মিডফিল্ডার সোহেল রানা। বরং জেমির আস্থার পাত্র হয়েছেন এই টুর্নামেন্টে অভিষিক্ত হওয়া রিমন হোসেন, মেহেদী হাসান ও মেহেদী হাসান রয়েল। ফরোয়ার্ড লাইনে ছিলেন মোট ৬ জন। এমনকি মাঝেমধ্যে স্ট্রাইকার সাদ উদ্দিনকে দেখা গিয়েছে নিচে নেমে ডিফেন্সে সাহায্য করতে। ইচ্ছে ছিল জেমি ডের ‘অল আউট অ্যাটাক’ ফুটবল খেলানোর।

কিন্তু মিছে সেই আশা। প্রথম আধ ঘন্টা এক কথায় বল পায়েই নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৭ মিনিটে নেপালের দূর্দান্ত এক অ্যাটাক থামিয়ে দেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। কিন্তু সেখান থেকে পাওয়া কর্নারই কাল হয় বাংলাদেশের। সুনীল বালের কর্নার ক্লিয়ার করেছিলেন ডিফেন্ডার মেহেদী হাসান। কিন্তু রিবাউন্ডে নেওয়া সনজোগ রায়ের জোড়ালো শট থামাতে পারেনি কেউই। বরং মিডফিল্ডার মানিক হোসেনের দুই পায়ের ফাঁক গলে বল চলে যায় জালে। অথচ সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেই প্রথম গোল হজম করতে হতো না বাংলাদেশকে।

দ্বিতীয় গোলের কথা তো না বললেই নয়। পুরো মাঝমাঠ আর ডিফেন্স খালি করে দিয়েছিল বাংলাদেশ নেপালের জন্য। নেপালের লেফটব্যাক রঞ্জিত ধিমালের দূর্দান্ত পাসের গতিপথ আলতো করে বদলে দিয়েছিলেন সনজোগ রায়। আর তাই ফিনিশ করেছেন বিশাল রায়। পুরো গোলে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা ছিলেন মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে। যেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না কী করা উচিত তাদের। অফসাইড ট্র্যাপের ফাঁদে ফেলতে গিয়ে ডিফেন্স ফাঁকা করে নিজেই নিজেদের পায়ে কুড়োল মেরে বসেন।

হাফ টাইমে তিন বদলি টুটুল বাদশা, ইয়াসিন আরাফাত আর মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামান জেমি। এতে করে যেন ছন্দ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। আস্তে আস্তে খেলায় ফিরতে শুরু করে। জামাল ভুইয়ার ডিফেন্সচেরা পাসগুলো ধরতে শুরু করে স্ট্রাইকাররা। ৮০ মিনিটের মাথায় আরো দুইজনকে মাঠে নামান জেমি ডে। মূলত এই পাঁচ বদলির ম্যাচে ফেরাতে শুরু করে বাংলাদেশকে। ৮২ মিনিটে জামাল ভুইয়ার নেওয়া কর্নার থেকে গোল করে ব্যবধান কমান মাহবুবুর রহমান সুফিল। নেপালের মার্কিং ভেদ করে অসাধারণ এক হেডে বাঙ্গালদেশের শুধু ব্যবধানই কমেছে। আর বেড়েছে আক্ষেপ। বাকি ১৬ মিনিট বাংলাদেশ যে কম্বিনেশনে খেলা দেখিয়েছে, তাতে শুধু গোলটাই পাওয়া হয়নি জামাল ভুইয়াদের। প্রথম ৭৫ মিনিটের বাংলাদেশ আর পরের ২০ মিনিটের বাংলাদেশের মধ্যে যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

ম্যাচের একদম শেষ মিনিটে এসে বেশ ভালো জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পেয়েছিলেন জামাল ভুঁইয়া। নেপালের ওয়ালে মাথা না ছুঁয়ে সামানুয় বেরিয়ে না গেলে হয়তো শেষ মিনিটের নায়ক হিসেবে লেখা হতো জামালের নাম।

অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া আর গোলরক্ষক আনিসুর রহমান ছাড়া কেউই নিজের স্বাভাবিক খেলাটা দিতে পারেননি। অথচ গত দুই ম্যাচ দেখে এমনটা মনে হয়নি কারও। ফাইনালের চাপেই কীনা খেই হারিয়ে ফেলেছেন রাকিব হোসেন, মতিন মিয়ারা। পুরো ম্যাচে শেষ ১৫ মিনিট বাদে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে বলবার মতন কিছুই নেই। বরং গোলবারের নিচে দেওয়াল হয়ে জিকো না দাঁড়ালে আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত নেপাল।

কোচ জেমি ডের সমালোচনা না করলেই নয়। নেপালের বিপক্ষে আক্রমণাত্বক ফুটবল খেলানোর জন্য ৫ জন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় নামিয়েছিলেন তিনি। যাতে করে ডিফেন্স পুরোপুরি ছন্নছাড়া হয়ে পরেছে। সাদ উদ্দিনকে নিচে নেমে সাহায্য করতে হয়েছে ডিফেন্সে। কিন্তু ৮০ মিনিটে দলে ৫ বদলি এসে যখন ব্যলেন্স এসেছে, তখনই নিজেদের সেরা খেলাটা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। অথচ শুরু থেকেই এইভাবে খেললে হয়তো ফলাফল ভিন্নও হতে পারত।

কিন্তু তার কোনোটাই হয়নি। দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে তিন জাতি টুর্নামেন্টের সমাপ্তি হলো আরেকটা আক্ষেপ নিয়ে। ১৭ বছরের অপেক্ষা মিটল না বাংলাদেশের বরং মিটল নেপালের ৩৭ বছরের আক্ষেপ। সেই ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল নেপাল এই মাঠেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link