More

Social Media

Light
Dark

বাবর-রিজওয়ান: দুয়োধ্বনি থেকে জয়োধ্বনি

মোক্ষম এক জবাব? নাকি মহাকাব্যিক এক ক্যামব্যাক? বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি নিয়ে এই মহূর্তে আপনার প্রতিক্রিয়া কি? 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০০ রান চেজে কোনো উইকেট না হারিয়ে পাক্কা ১০ উইকেটে ম্যাচ জয়, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঘটলোই এই প্রথমবার। এমন রেকর্ড সঙ্গে নিয়ে তাই বীরদর্পেই মাঠ ছেড়েছেন বাবর-রিজওয়ান জুটি। সাথে সঙ্গী হয়েছে করাচির উচ্ছ্বসিত গ্যালারির উন্মাদনা। 

টি-টোয়েন্টতে বাবর-রিজওয়ান জুটি বরাবরই সফল ছিলেন। এ ম্যাচের আগে ৩৪ ইনিংসে ৪৯.৭২ গড়ে তাদের জুটি থেকে এসেছিল ১৬৭১ রান, এর সাথে ছিল ৬ বার শতরানের জুটি। তবে বাবর আজমের অফফর্ম আর দু’জনই মন্থর গতিতে ব্যাটিং করার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচিত হচ্ছিল বাবর-রিজওয়ান জুটি। পাকিস্তানের সাবেক কোচ মিকি আর্থার তো বাবরকে ওপেনিং থেকে নেমে এসে একটু নিচে ব্যাটিং করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সুরে সুর মিলিয়ে ছিলেন শোয়েব আখতারও। 

ads

তবে সবার আলোচনা সমালোচনার মোক্ষম জবাব হিসেবে আবার স্বরূপে ফিরে এলেন তাঁরা। ২০০ রানের বড় রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। এ নিয়ে সপ্তম বারের মতো ১০০+ রানের জুটি গড়লেন তাঁরা। এর মধ্যে ৫ বারই তারা ১৫০+ রানের জুটি গড়েছেন। যেটা ওপেনিং জুটির দিক দিয়ে একটা রেকর্ডও বটে।

আর টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান এ নিয়ে যে দুই বার ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতলো সেই দুই জয়ের সারথি হয়ে থাকলো বাবর-রিজওয়ান জুটি। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এই জুটির কীর্তিতেই ১০ উইকেটের জয় পেয়েছিল পাকিস্তান।   

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটের ম্যাচ জয়ের দিনে পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে ১০ম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাবর আজম। একই সাথে পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটার হিসেবে পেয়েছেন দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শতকের দেখা। এর চেয়েও পাকিস্তান শিবিরে স্বস্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবরের দুর্দান্ত ভাবে রানে ফেরা। এশিয়া কাপ থেকেই রান খরায় ভুগছিলেন এ ব্যাটার। নিজের সেঞ্চুরির দিনে যেভাবে ফিরে এলেন তাতে যেন বুঝিয়ে দিলেন, বাবরের রাজত্ব এত তাড়াতাড়ি শেষ হবার নয়। 

এদিকে রিজওয়ানের রানক্ষুধা যেন থামছেই না। ফিফটি করাটা যেন রীতিমত নিজের অভ্যাস বানিয়ে ফেলছেন তিনি। ৫১ বলে ৮৮ রানের ইনিংস খেলার মাধ্যমে শেষ ৩ ম্যাচে তিনটিতেই হাফসেঞ্চুরি করলেন তিনি। আর গত ২ বছরের হিসেবে সে সংখ্যাটা ৩৮ ম্যাচে ১৭ টি হাফসেঞ্চুরি৷ আর রিজওয়ানের স্ট্রাইকরেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল।টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারদের র‍্যাংকিংয়ে এই মুহূর্তে আছেন শীর্ষে। তবে প্রতিনিয়ত দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে যেন নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়েছেন এই ব্যাটার। 

বাবর-রিজওয়ান জুটিকে নিয়ে এতদিন সমালোচকরা আরেকটা বিষয় নিয়েও সমালোচনায় মুখর ছিল। সেটি হলো, তাদের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট। অবশেষে সে সমালোচনারও জবাব দিয়েছেন এ দুই ব্যাটার।  এ দিনের ম্যাচে রিজওয়ানের স্ট্রাইকরেট ছিল ১৭২.৫৪। আর বাবরের স্ট্রাইকরেটও ছিল ১৫০-র উপর, ১৬৬.৬৬। অর্থাৎ বড় টার্গেটের সামনে যে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করার সামর্থ্য তাদের আছে সেটিও তারা বুঝিয়ে দিল।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাবর-রিজওয়ান জুটির একসাথে ফিরে আসাটা পাকিস্তানের জন্য খুবই দরকার ছিল। বিশেষত, ব্যাটিং লাইনআপে তাদের অধিকাংশ ম্যাচই নির্ভর করে এই জুটির উপর। বাবর তাঁর স্বরূপে ফিরেছে, বাবর-রিজওয়ান জুটির প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছে দুর্দান্ত। তাই আপাতত পাকিস্তানের ক্রিকেট আকাশে কালো মেঘটা সরে গেছে। তবে সে আকাশ স্বচ্ছ রাখতে বাবর-রিজওয়ানের এখনো বহু পথচলা বাকি। সে পথচলা তাদের কতটা নির্বিঘ্নে হয় সেটাই এখন দেখার পালা। 

  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link