More

Social Media

Light
Dark

চোয়াল ভাঙে, শিরদাঁড়া না

অ্যান্টিগা টেস্টের মাঝে একটা একটা করে গুগলি আর লেগস্পিন আছড়ে পড়ছে বাইশ গজে, মাথা থেকে চোয়াল অবধি সাদা ব্যান্ডেজে মোড়া, ডান গাল থেকে হালকা কালসিটের দাগ স্পষ্ট হচ্ছে রোদ লেগে, চোয়ালের চিন লাইনবোন ভেঙে গেছে মার্ভেন ডিলনের বলে, রক্তটা মুছে নিয়ে ব্যাটিং করতে গিয়েছিলেন আবার, ড্রেসিংরুমে ফিরে দুঃসহ যন্ত্রণা, প্রয়োজন ইমার্জেন্সি সার্জারি।

অধিনায়ক সৌরভ বলে দিলেন ব্যাঙ্গালুরুর ফ্লাইট ধরতে, তবু সকলকে চমকে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে – ‘দ্য জাম্বো’!

১৭ বছর কেটে গেছে। কমেন্ট্রি বক্স, মিডিয়া, পেপার হেডলাইন কোত্থাও সেভাবে নেই তিনি, বিরাট-শচীন-সৌরভ-রোহিত-বুমরাহদের আলোর ভিড় থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের সেই সিংহ হৃদয় বহু বহুদূরে।

ads

অনিল কুম্বলে রয়েছেন ফিরোজ শাহ কোটলায় আঙুলের মুড়কিতে গুগলি-লেগস্পিনে ১০ উইকেট তুলে নেওয়ার ইতিহাসে, অনিল কুম্বলে রয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলির চোখ বন্ধ করা ভরসার নাম হয়ে, অনিল কুম্বলে রয়েছেন নিজের ভাঙা চোয়াল নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের দেওয়াল মজবুত করার শ্রেষ্ঠ গাঁথুনি হয়ে, অনিল কুম্বলে রয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটে স্পিন যাদুকর ওয়ার্ন-মুরলির পাশে তেরঙ্গা তুলে ধরার বিনিদ্র সেপাই হয়ে, অনিল কুম্বলে রয়েছেন ম্যাচ শেষে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তির মধ্যে-

‘আমি জানতাম আমার চোয়াল ভেঙে গেছে, তবে এখন আমি এই শান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি যে আমি আমার চূড়ান্ত চেষ্টাই করেছি।’

আজ যখন আঙুল বা হ্যামস্ট্রিং বা এলবো ইনজুরি পেয়ে কুলদীপ-ভুবি-শামি-ধাওয়ানরা বাইরে চলে যান তখন মনে পড়ে জাম্বোর কথা, শচীন টেন্ডুলকার সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি ভারতীয় খেলোয়াড়দের শেখাতে চাই কীভাবে চোট নিয়েও দেশের জন্য সার্ভিস দিয়ে যেতে হয়, ওরা ও একদিন শিখে যাবে!’

সৌরভ-শচীন-দ্রাবিড়-যুবির উজ্জ্বল উপস্থিতির পাশে কুম্বলে এক বিষ্ময়ের নাম যার ক্রিকেটবোধ ছিল আসলে এক সাধনা, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস বই-এর ক’পাতা এই মানুষটির জন্য বরাদ্দ হবে জানা নেই, আদৌ মহাকাব্যিক নায়কদের পাশে কোনোদিন কেউ মনে রাখবে কিনা ব্রায়ান লারার উইকেট তুলে নেওয়া সেই ডেলিভারিটা জানা নেই, সেই ফতফতে জামা পরে একটা লোক ক্রিকেটে বিশ্বাস রেখে মাঠে নামত বুকে তিনরঙা পতাকা নিয়ে।

কোনো অধ্যায় দিয়ে তাকে বাঁধা যাবে কিনা তা-ও জানা নেই কারণ তিনি ক্রিকেটের নায়ক নন, তিনি ভারতীয় পতাকার বিনিদ্র প্রহরী, নিজের সর্বস্ব দিয়ে যিনি ভারতের হয়ে বিশ্বের কাছে ছুঁড়ে দিতেন গুগলি, নিজের ভাঙা আর রক্তাক্ত চোয়াল নিয়ে মজবুত করেছিলেন ভারতের ক্রিকেট প্রাচীর, লাল রঙে লিখেছিলেন লড়াই-এর নতুন ইতিহাস, কারণ অনিল কুম্বলেদের চোয়াল ভাঙে, শিরদাঁড়া না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link