More

Social Media

Light
Dark

এক ‘অভূতপূর্ব’ কোচ

এদগার্দো বাউজাকে বহিস্কার করার পর আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের কোচ হিসেবে হোর্হে সাম্পাওলি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ব্যর্থতার অজুহাতে ছাটাই করা হয় তাকে। আর্জেন্টিনা বোর্ড অর্থের দিক দিয়ে খুব একটা শক্তিশালী না হওয়ায় বেশি বেতন দিয়ে নামকরা কোচ নিয়ে আসার ক্ষমতা তখন ছিল না তাদের।

অনেকে ভেবেছিলেন সাম্পাওলি’র উত্তরসূরি হিসেবে রিভারপ্লেটের হয়ে দুর্দান্ত কাজ করা মার্সেলো গ্যালার্দোর কথা। অনেকে চেয়েছিলেন নিয়ম ভেঙে স্থানীয় কোচ ছেড়ে বিদেশি কোন কোচ আনতে। কিন্তু আর্জেন্টিনা ফুটবলের নীতি-নির্ধারকরা নিয়ে এল অখ্যাত একজনকে। তাই প্রথম থেকে ‘ফ্যান-ফেভারিট’ বলে যে কথা রয়েছে, সেটির দেখা পাওয়া হয়নি তার। সেই অখ্যাত একজন হচ্ছে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের বর্তমান কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা’র যুগ থেকেই বিশ্বজুড়ে আর্জেন্টিনার ভক্তদের উন্মাদনা ঈর্ষণীয়। কিন্তু ওই সময়ের পর, মাঠের খেলায় আর্জেন্টিনাকে খুঁজে পাওয়া শক্ত ছিল। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে কোন ট্রফি জিততে পারেনি তাঁরা। বিশ্বকাপ তো দূরে থাক, কোপা আমেরিকা’র শিরোপাও জেতা হয়নি দলটার। একজন লিওনেল মেসি বারবার টেনে নিয়েছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয়েছিল একরাশ হতাশা নিয়ে।

ads

স্কালোনি তাই শুরু করলেন পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া। পরিবর্তন আনার জন্য দল বাছাই এবং পরিকল্পনায় নিজের প্রজ্ঞার ছাপ রাখলেন স্পষ্ট। আর্জেন্টিনা থেকে ইতালি, স্পেন থেকে ফ্রান্স, এমনকি নেদারল্যান্ডস — কোনো আর্জেন্টাইন আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স দেখাতে পারলেই তাঁকে দলে ডেকেছেন। তবে পুরনো বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের তিনি একেবারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, সেটাও নয়। দলের উন্নতির এই চলমান প্রক্রিয়াতে বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার করেছেন তিনি। দল বাছাই এবং নিজের ফুটবল কৌশলের কার্যকারিতার ফলাফল হাতেনাতে পাওয়া গিয়েছে।

ট্রফি জয়ের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটেছে লিওনেল স্কালোনি’র হাত ধরেই। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা’র ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা খরা কাটায় লাতিন আমেরিকার দেশটি। হ্যাঁ, মাঠের খেলোয়াড়দের অবদান তো রয়েছেই কিন্তু ডাগ আউটের এই খেলোয়াড় না থাকলে আদৌ আলবিসেলেস্তে-রা এতটা গুছানো ফুটবল খেলতে পারতো কিনা তা নিয়ে সংশয় আছেই। দুই দশকের আক্ষেপ ঘুচিয়েও আর্জেন্টিনা থেমে নেই। এখনও জয়ের ধারা বজায় রেখেছে স্কালোনির শিষ্যরা, দিন দিন আরও ক্ষুরধার হয়েছে খেলার ধরণ, আর সেটা দিয়ে আর্জেন্টিানা ৩২ বছর পর নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ জয়।

তার সবচেয়ে বড় অর্জন মেসি-নির্ভরতা কমিয়ে একটি পরিপূর্ণ দল তৈরি করা। তার পূর্বসূরিদের মতো স্কালোনি কখনোই স্রেফ মেসিকে ঘিরে আর্জেন্টিনার একাদশ সাজাননি; বরং তাঁর একাদশে মেসি শুধুই দলের একজন সেরা খেলোয়াড়। মূলত এই ধারণা এবং খেলোয়াড়দের উপর বর্তানো আলাদা দায়িত্ব বদলে দিয়েছে দলের পারফরম্যান্স। এজন্য মেসিকেও আলাদা চাপ নিতে হয়নি; স্কালোনি যখন যেভাবে মেসিকে চেয়েছেন, মেসি নিজেও মাঠে সেভাবেই খেলে যেতে চেয়েছেন। ভারমুক্ত মেসির পারফরম্যান্সেও দেখা গিয়েছে উন্নতি।

স্কালোনি’র কোচিংয়ের অন্যতম শক্তি প্রতিপক্ষকে রিড করতে পারা। প্রতিপক্ষের একাদশ, খেলোয়াড় বিবেচনা করে স্কালোনি নিজের দলের পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বারবার। নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নিয়ে তিনি একাদশ সাজান না। তার নিজের পছন্দের ফুটবল-কৌশল রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ বুঝে তার কৌশল পাল্টে যায়। এমন কি বদলে ফেলেন খেলোয়াড়ও। প্যারাগুয়ে থেকে বলিভিয়া, কিংবা ইকুয়েডর — প্রত্যেক দলের বিপক্ষে তিনি তাদের কৌশল ব্যবহার করে তাদের রুখে দিতে চেয়েছেন। এবং বলাই যায়, তিনি বেশ সফল হয়েছেন।

আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্ব নিয়ে লিওনেল স্ক্যালোনি খুবই কম সময়ের মাঝে অভূতপূর্ব একটা ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু স্ক্যালোনির নাম কোনো পত্রিকার শিরোনামে নেই। ফুটবলের তুমুল আড্ডায় তার নাম আসে না। হয়তো মেসিদের মত তারকা খেলোয়াড়ের দলের সামনে তার মতো আনকোরা কোচের কাজগুলো দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে।

তবে, আলবিসেলেস্তাদের উন্নতির পিছনের কারণ খুঁজতে গেলে স্ক্যালোনি’র মত একজন নক্ষত্র পাওয়া যাবে, যিনি নীরবে আলোকিত করে যাচ্ছেন আর্জেন্টিনাকে। এতগুলো বছর বাদে এভাবে বিশ্বকাপ জয় করা তো আর মুখের কথা নয়। সেই অসাধ্যই সাধন করেছেন স্ক্যালোনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link