More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

অ্যালিসনের স্বর্ণালী মস্তক

অতিরিক্ত সময় ৪ মিনিটও শেষ। রেফারি অপেক্ষায় আছেন কর্নার কিক নেওয়ার, কিকের ফলাফল এলেই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিবেন তিনি। এমন সময় লাল, সাদা-নীল খেলোয়াড়ের মাঝে কালো জার্সিধারী অ্যালিসনকে দেখে হঠাতই পিলে চমাকাবার অবস্থা হয়েছিল সকলের। ট্রেন্টের মাপা কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে এবার শুধু লিভারপুল নয়, পুরো বিশ্বের ফুটবল সমর্থকদের পিলে চমকে দিলেন অ্যালিসন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গোলরক্ষক হিসেবে হেড করে গোল দেওয়ার রেকর্ড এখন শুধুমাত্র তাঁরই।

গোলবার ছেড়ে গোলরক্ষকদের এগিয়ে আসা নতুন কিছু নয়। সুইপার কিপার হিসেবে খেলা ম্যানুয়েল নয়্যার ম্যাচের অনেকটা সময়ই কাটান ডি-বক্সের বাইরে। গোলবার ছেড়ে গোল করতে আসতে দেখাটাও নতুন কিছু নয়। শেষ মিনিটে গোলরক্ষকদের সাধারণত বেড়িয়ে আসতে দেখা যায় নক-আউট ম্যাচে। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে যখন প্রয়োজন একটামাত্র গোল, তখন ভাগ্যের ছোঁয়া পেতে হলেও প্রতিপক্ষ ডি-বক্সে হানা দেন গোলরক্ষকেরা। লিভারপুলের জন্য অবশ্য একদিক দিয়ে ম্যাচটা নক-আউটেই পরিণত হয়েছিল।

গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল নিজেদের। একের পর এক ইঞ্জুরি, পুরো ব্যাকলাইন হারিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপও কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একসময় তো মনে হয়েছিল ইউরোপাতে সুযোগ পাওয়াও তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পরবে। কিন্তু নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই আবারও দৌড়ে ফিরেছে লিভারপুল। আর সে কারণেই ওয়েস্টব্রমের বিপক্ষে ম্যাচটা ফাইনাল হয়ে উঠেছিল তাদের জন্য।

ads

তাদের সাথে শেষ চারের লড়াইয়ে থাকা দলগুলোর বাজে ফর্ম এখনও স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে ক্লপের। কিন্তু সেই স্বপ্নে প্রথম পেরেক ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন রবসন-কানু। ১৫ মিনিটের গোল পিছিয়ে দিয়েছিল লিভারপুলকে। কিন্তু ৩৩ মিনিটে সালাহর গোল ফিরিয়েছিল তাদের ম্যাচে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন ডেডলক খুলতে পারছিল না লিভারপুল। একের পর এক আক্রমণ, সব যেন এসে ফুরিয়ে যাচ্ছিল ফাইনাল থার্ডে। সালাহ, মানে ফিরমিনো; কেউই ত্রাতা হতে পারছিলেন না অল রেডদের জন্য।

শেষ মিনিটের কর্ণার। ইয়ুর্গেন ক্লপের মাথায় তখন হাজারো চিন্তা, হাজারো সমীকরণ। এই ম্যাচ ড্র করে ফেরা মানে নিজেদের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্ন থেকে আরো এক পা পিছিয়ে যাওয়া। আর হারলে তো বাদই। প্রশ্নটা বাঁচা-মরার। সেই লড়াইয়ে সামিল হলেন অ্যালিসনও। ডিফেন্স উদোম রেখে গোলবার ছেড়ে উঠে এলেন গোল করার জন্য। এক কথায় সেই মুহূর্তে লিভারপুলের অর্ধে নেই কেউ।

ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের নেওয়া মাপা কর্নার ছিল ডেড-অন, অ্যালিসন আর ভুল করেননি। তার হেডার ওয়েস্ট ব্রমের জাল খুঁজে নিতে ভুল করেনি। গোল দেখে বেমালুম উদযাপন করতেই যেন ভুলে গিয়েছিলেন ক্লপ। হবে নাই বা কেন? এমনটা আগে কখনও দেখেনি কেউই। সবকিছু বুঝে উঠার পরে ক্লপের চওড়া হাসিই প্রমাণ করে দিয়েছে, গোলটা কত প্রশান্তির ছিল।

গোলকিপারদের জন্য গোল করা নতুন কিছু নয়। অন্তত ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষকদের জন্য তো নয়ই। রদ্রিগো চেনি গোলকিপারের জার্সি গায়ে দিয়ে করেছেন একশর উপরে গোল। কিন্তু তার সব গোলই এসেছে সেট পিস থেকে। ফ্লামেঙ্গোর বর্তমান ম্যানেজার সাও পাওলোর জার্সিতে ছিলেন দলের সেরা সেট পিস টেকার। যে কারণে তার গোল সংখ্যাটাও বেড়েছে হুঁ হুঁ করে। কিন্তু অ্যালিসন যেটা করেছেন এমনটা দেখা গিয়েছে খুব কমই, কালে ভদ্রে। সামনে এগিয়ে এসে জটলার মধ্যে থেকে গোল দেওয়ার রেকর্ডই আছে কিন্তু সবাইকে সরিয়ে জায়গা করে নিয়ে মাথা ছুইয়ে গোল দেওয়ার রেকর্ড প্রিমিয়ার লিগে এখন শুধু মাত্র অ্যালিসনেরই।

প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত গোলরক্ষক হিসেবে গোল করার রেকর্ড আছে অ্যালিসনসহ মোটে ৬ জনের। এর মধ্যে কেউই হেডে গোল করতে পারেননি। শেষ গোলরক্ষকের পা থেকে প্রিমিয়ার লিগ গোল দেখেছিল ৮ বছর আগে ২০১৩ সালে, আসমির বেগোভিচের পা থেকে। গোলকিক থেকে সরাসরি গোল করেছিলেন তিনি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সবচেয়ে দূরপাল্লার গোলের রেকর্ড গড়েছিলেন সেদিন। তবে অ্যালিসনের মতন এমনটা করতে দেখা গিয়েছিল শেষ রিয়ালের থিবো কর্তোয়াকে। শেষ মিনিটে গোলের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন বটে কিন্তু তার হেড জালে ঢুকেনি, বরং বেনজেমার পায়ে লেগে তা পরিণত হয়েছে এসিস্টে। অ্যালিসন এখানেই ছাড়িয়ে গিয়েছেন এখানে।

মৌসুমটা খুব একটা ভালো যায়নি অ্যালিসনের। প্রতিদিন গোল বাঁচানোই তার কাজ। কিন্তু দলের ডিফেন্স লাইনের ছন্নাছাড়া অবস্থার প্রভাব পড়েছিল তার উপরেও। কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝি এসে হারিয়েছেন নিজের বাবাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে রহস্যজনক ভাবে বাবার মৃত্যুবরণের পর থেকে আর নিজেকে খুঁজেই পাচ্ছিলেন তিনি। বাজে ফর্মের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছিলেন তিনি। আজ শেষ মিনিটের গোলটা তার জন্যও ছিল প্রশান্তির, গোলটাও উৎসর্গ করেছেন বাবাকে।

লিভারপুলের এই ২-১ গোলের জয় প্রিমিয়ার লিগের শেষ চারের সমীকরণ আরো জটিল করে তুলল। লিগের লড়াই একাই শেষ করে দিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা নিয়ে তিনি ধরাছোয়ার বাইরে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও নিজেদের কাগজে কলমে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিয়ে গিয়েছে। লড়াইটা এখন লেস্টার সিটি, লিভারপুল, চেলসি আর টটেনহ্যামের মধ্যে। প্রিমিয়ার লিগের শেষ ২ রাউন্ডের খেলায় এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত করার সুযোগ আছে কাগজে কলমে চার দলেরই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link