More

Social Media

Light
Dark

বারো বছরেই ‘সিনিয়র’!

যে বয়সটা প্রশ্ন করতে করতে কেটে যাওয়ার কথা, যে বয়সটায় চিড়িয়াখানা কিংবা শিশুপার্কের মতো জায়গায় ঘুরের বেড়ানোর কথা সেই বয়সে একটি ছেলের অভিষেক হয় প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট। তাও আবার এমন সময়ে যখন ক্রিকেটে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। যখন মাথায় কেউ হেলমেট অবধি পড়তেন না।

এমন সময়ে মাত্র ১২ বছর ৭৩ দিনে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন রাজস্থানের ছেলে আলিমউদ্দিন। ১৯৪৩ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি রঞ্জি ট্রফি খেলতে নেমেছিলেন আলিমউদ্দিন। তাঁর জন্ম রাজস্থানের আজমের অঞ্চলে, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৩০ সালে। যে বয়সে ছেলেরা পাঠ্যবইয়ে কিংবা ছোটাছুটি, হৈ-হুল্লড়ে ব্যস্ত থাকে সে বয়সে আলিমউদ্দিন নেমে গিয়েছিলেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে।

একটা বার ভেবে দেখুন কি ভীতিকর এক পরিস্থিতি হওয়ার কথা আলিমউদ্দিন নামের ওই ছোট্ট কিশোরের। না কিশোরও ঠিক বলা চলে না, শিশুই। তাঁর অভিষেক হয়েছিলো তৎকালীন অন্যতম সেরা দল বারোদার বিপক্ষে রাজপুতানার হয়ে। বিজয় হাজারের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটার ছিলেন বারোদা দলে।

ads

সবাই হয়ত ভেবেছিলো এই ছোট্ট কিশোর আর কি এমন করবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও এটা সত্য যে অভিষেক ম্যাচের দুই ইনিংসে আলিমউদ্দিন ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দ্বিতীয় ইনিংসে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে অনেক রান যে তিনি করেছিলেন তা নয়। তাঁর দল বারোদার বিপক্ষে পড়েছিলো ব্যাটিং বিপর্যয়ে।

প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫৪ রানে অলআউট হয়েছিলো আলিমউদ্দিনের রাজপুতানা। যেখানে ১২ বছরের কিশোর আলিমউদ্দিন রান করেছিলেন ১৩। সিএস নায়ডু ২০ রানে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। তাঁর সতীর্থ বিজয় হাজারে রাজপুতানার চার উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ১৭ রান দিয়ে।

জবাবে ব্যাট করতে নামা বারোদা শুরতেই বিপাকে পড়ে যায় ২৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে। এমনকি আলিমউদ্দিনও নিয়েছিলেন উইকেট। কিশোর আলিমউদ্দিন পেয়েছিলেন হয়ত তাঁর জীবনের সেরা উইকেট। বিজয় হাজারের খোঁচা লাগা বল তালুবন্দি হয় উইকেটরক্ষকের দস্তানায়। সেই বিপর্যয় সামলে নিয়ে বারোদা ৪৮৯ রানের লিড নিয়ে মাঠ ছাড়ে। জবাবে আবারো সেই ব্যাটিং ধ্বস রাজপুতানা ব্যাটিং লাইনআপে। আলিমউদ্দিন ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে করেন ২৭ রান।

ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটার আলিমউদ্দিন পরবর্তীতে দেখেন দেশভাগ। স্বপরিবারে পাকিস্তানে গিয়ে ওঠেন আলিমউদ্দিন। দেশভাগের পর পাকিস্তানেই নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটার বিস্তার ঘটাতে থাকেন আলিমউদ্দিন। তাঁর খেলা মোট প্রথম শ্রেণি ম্যাচের সংখ্যা ১৪০টি। এ সময়ে সাত হাজারেরও অধিক রান করেছেন আলিমউদ্দিন। ১৪টা সেঞ্চুরি ছাড়াও করেছেন ৩৮টি হাফ সেঞ্চুরি।

প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলেও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন আলিমউদ্দিন। ২৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দুইটি শতক ও সাতটি অর্ধশতক করেছেন। পাকিস্তানের হয়ে হাজার রান ছাড়িয়েছে তাঁর ব্যাটিং ক্যারিয়ারে। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ৪০টা উইকেট থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁর নেওয়া উইকেটের সংখ্যা কেবল একটি।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে নিজের প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন আলিমউদ্দিন। প্রায় দুই যুগের ক্রিকেট ক্যারিয়ার তাঁর। তাছাড়া শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলেছিলেন ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অভিষেকটা হয়েছিলো দেশভাগের বহু পরে ১৯৫৪ সালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link