More

Social Media

Light
Dark

খেয়ালি হেলসের হেয়ালি

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ যখন চলমান, অ্যালেক্স হেলস তখন নিজের বাড়িতে বসে আফসোসের বিশাল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। পারফরমেন্স কখনোই আহামরি খারাপ ছিল না তাঁর। বরং সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি বরাবরই দূর্দান্ত। সেবার ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ নিয়ে উদযাপন করতে দেখে নিজের ভেতর একটা জেদ পুষে রেখেছিলেন। তারই বহি:প্রকাশ তিনি ঘটালেন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্য ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অ্যালেক্স হেলস। ব্যাট হাতে যেকোন বোলিং লাইনআপকে তুলোধুনো করবার সক্ষমতা তিনি রাখেন। তাইতো আরও একবার ভারতের বোলিং লাইনআপের উপর চড়াও হলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মাঠের  বাইরের উশৃঙ্খল জীবন। এসব কিছুর প্রতিদান স্বরুপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ব্রাত্য ছিলেন হেলস। তাইতো ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া হয়নি তাঁর।

তবে তিনি সেখানে দমে যাননি। তিনি নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় লেগে পড়েন। তাঁর ধ্যানজ্ঞান পরিণত হয় ইংল্যান্ডের থ্রি লায়ন্স খচিত জার্সিটা পরে তিনি মাতবেন শিরোপা উল্লাসে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে চলমান সকল ফ্রাঞ্চাইজি লিগে নিয়মিত খেলতে শুরু করেন হেলস। তাঁর ফলাফলটাও পেলেন তিনি হাতে নাতে। সব খানেই পারফর্ম করা হেলসের হঠাৎ করেই সুযোগ আসে অস্ট্রেলিয়া গামী বিশ্বকাপ দলে। অবিশ্বাস্য এক কলআপ!

ads

পরিশ্রম তিনি করে গিয়েছেন। ভাগ্যও তাঁর সহায় হয়েছে। নয়ত জনি বেয়ারস্টোর মত নিয়মিত খেলোয়াড় হুট করেই কেন ইনজুরিতে পড়তে যাবে। বাংলা প্রবাদ আছে, ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’। হেলসের জন্য এটা যে পৌষ মাস সেটা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পরে না। তবে এই সুযোগটাই যে হতে চলেছে তাঁর শেষ সুযোগ, সেটা ভাল করেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন হেলস। তাঁকে নিজের অবস্থান ও সামর্থ্যের জানান দিতেই হত।

আর তাইতো টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তিনি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। দুই খানা দুর্দান্ত ইনিংসও তিনি খেলেছেন সেমিফাইনালের আগে। তবে সেমিফাইনালে এসেই যেন দানবীয় রুপটায় অবতীর্ণ হলেন হেলস। তাঁর সাথে সঙ্গ দিল ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা দলের অধিনায়ক জশ বাটলার। তিনিও এই সেমিফাইনালের মঞ্চকেই বেছে নিলেন নিজের প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হিসেবে। দুই জনে মিলে একেবারে তুলোধুনো করেছেন ভারতীয় সব বোলারদের।

তবে বাড়তি নজর নিশ্চয়ই কেড়েছেন হেলস। ভারতের কোন বোলারদের যেন একেবারে পাত্তাই দেওয়ার সময় নেই। প্রতিটা বোলারের বিরুদ্ধে তিনি শট চালিয়েছেন। রান করেছেন প্রায় ১৮৩ স্ট্রাইক রেটে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ভারতের সংগ্রহ বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটে ভর করে দাঁড়ায় ১৬৮। অ্যাডিলেডের বিশাল মাঠে ১৬৯ রানের টার্গেটটাও প্রচণ্ড লড়াকু লক্ষ্যমাত্রা। তবে এদিন যেন ধ্বংসলীলা চালাবেন বলেই পণ করেছিলেন হেলস।

সামনে থাকা বোলার কে সেটা যেন দেখার সময়ই নেই। নিজের দিনে হেলসের তাণ্ডব ঠিক কতটা ভয়ংকর, সেটাই দেখালেন তিনি। সাতটা সুবিশাল ছক্কা দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি। সাথে চারখানা বাউন্ডারিও রয়েছে ৪৭ বলের ইনিংসটিতে। ভারতীয় বোলারদের কাছে যেন হেলস নামক দানবের কোন উত্তরই জানা ছিল না। একেবারে নাকানিচুবানি খাইয়েছেন হেলস তাঁর অধিনায়ক বাটলারকে সাথে নিয়ে।

রীতিমত দিশেহারা করে ছেড়েছেন ভারতীয় বোলারদের। দেড় যুগ ধরে চলা ভারতের আক্ষেপটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলেন হেলস। নিজ দলকে নিয়ে গেলেন অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের। সেমিফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কারটাও তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজের মধ্যে থাকা জেদটা এখনই হয়ত প্রশমিত হয়ে যায়নি হেলসের। আসল কাজটা তো এখনও বাকি।

১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে মেলবোর্নে। সেবারের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল হেলসের পূর্ব পুরুষরা। নিশ্চয়ই সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবেন না হেলস। নিজের সবটুকু উজাড় করে ভারতকে যেমন দশ উইকেটের বিশাল পরাজয় উপহার দিয়েছেন, ঠিক তেমনই আরেক বিধ্বংসী এক ইনিংসে পরাজিত করবেন পাকিস্তানকে। আর এরপর, ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে শিরোপা উল্লাসের আক্ষেপ মোচন করবেন অ্যালেক্স হেলস। ভক্ত-সমর্থকদের মত তিনিও হয়ত তেমনটাই প্রত্যাশা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link