More

Social Media

Light
Dark

শরিফুলের আগ্রাসনেই ফিরল আত্মবিশ্বাস

হাজারটা সমালোচনা হয়েছে। হওয়াটাও স্বাভাবিকই। তবে একটা জায়গায় বাংলাদেশ দল যে রীতিমত নিজেদের নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে এতটা ভরসা করবার মত পেস আক্রমণ রয়েছে গুটিকতক। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই পেসারদের রদবদল হয়েছে। তবে প্রতি ম্যাচেই সফলতার মুখ দেখেছে বাংলাদেশের পেসাররা।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পেসারদের সফল হওয়ার ধারায় শেষ সংযোজন শরিফুল ইসলাম। দলে থাকা একমাত্র শরিফুলই প্রথম দুই ওয়ানডের একটি ম্যাচও খেলেননি। সাইডবেঞ্চে বসে তিনি দলের অপ্রত্যাশিত বাজে পারফরমেন্সের চিত্র দেখেছেন।

আর হয়ত অপেক্ষা করেছেন একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপ। দ্বিতীয় দিন হয়ত সেই তেজটা বাড়িয়ে দিয়েছে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ২৫৬ রানের জুটি। তিনি কেবলই বল হাতে নিজের দিনটির অপেক্ষাই করলেন।

ads

এটা আগে থেকেই অনুমিত ছিল, বাংলাদেশের পেস আক্রমণেই হবে পরিবর্তন। তবে এদিন, তিনজন পেসার একাদশের বাইরে। শরিফুলের সাথে আগের ম্যাচে বিশ্রাম পাওয়া তাসকিন আহমেদ যুক্ত হয়েছেন। সাথে নতুন সংযুক্তি তাইজুল ইসলাম।

হোয়াইট ওয়াশের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, গেল কয়েকদিনের সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ‘বাউন্স ব্যাক’ করতেই মাঠে নেমেছিলেন লিটন দাসরা। আর শুরুটাই হয় দূর্দান্ত। কৃতীত্ব পুরোটাই শরিফুলের প্রাপ্য। কিংবা বাংলাদেশের ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রিনিবাসন চন্দরশেখরও পেতে পারেন কৃতীত্ব। কেননা আফগান ব্যাটারদের বাউন্সের দূর্বলতা নিশ্চয়ই তিনি খুঁজে দিয়েছেন।

আর সেই দূর্বলতার সুযোগটাই নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভারটা করলেন দূর্দান্তভাবেই শেষ করলেন শরিফুল। এরপর ফিরে এসেই জোড়া আঘাত। শুরুটা তিনি করলেন আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরানকে সাজঘরে ফিরিয়ে। এই উইকেটে যতটা না শরিফুল দক্ষতার মিশ্রণ ছিল, তার থেকে বেশি ছিল ইব্রাহিমের খামখেয়ালিপনা।

অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটা তিনি কাভার অঞ্চল দিয়ে খেলতে চাইলেন। তাতেই কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। এরপর সেই একই ওভারে শরিফুলের শিকার রহমত শাহ। এবার সেই বাউন্সের ফাঁদ। লাফিয়ে ওঠা বলটা রহমত শাহ বুঝলেন না ঠিক। ক্যাচ আবারও জমা পড়ল মুশফিকুর রহিমের হাতে। টানা দুই ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে থমকে যায় আফগানিস্তানের জয়রথ।

সেখান থেকেই এই ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবারের মত চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ। শরিফুল অবশ্য সেখানেই থেমে থাকেননি। তিনি এরপর আরও দু’খানা উইকেট নিজের করে নিয়েছেন। রাউন্ড দ্য উইকেটে তিনি বোলিংয়ে এলেন। তারপর বলের অ্যাঙ্গেলটা ভেতরের দিকে রাখলেন। তাতেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন মোহাম্মদ নবী।

সাফল করতে গিয়ে তিনি একেবারেই লেগ স্ট্যাম্প উন্মুক্ত করে দিলেন। আম্পায়ারের বিন্দুমাত্র সমস্যা হলো না তাতে। যদিও নবী রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারের জন্যে তার আরও একটি উইকেটের প্রয়োজন ছিল। রান অবশ্য কমই দিয়েছেন তিনি এবার।

এরপর আবদুল রহমান শরিফুলের সেট করা ফিল্ডারের কাছেই ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। ডিপ ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে থাকা তাইজুল সাবলীল এক ক্যাচ তুলে নিলেন। শরিফুল তখন প্রথমবারের মত নিজের ক্যারিয়ারের ফাইফার পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তবে ভাগ্য তার সহায় হলো না।

ভাগ্যকে দোষ না দিয়ে অবশ্য আবহাওয়াকে দোষ দেওয়া যেতেই পারে। চট্টগ্রামে গরমের তীব্রতা যেমন রয়েছে তেমনি আদ্রতাও বেশি। তাতে ক্লান্তি এসে যায়। আর ক্লান্ত শরীরে পেশিশক্তির টান একেবারেই অবধারিত। বিশেষ করে পেসারদের। আগের ম্যাচেও এবাদতের শরীরে ক্লান্তি তাকে নিজের কোটা সম্পূর্ণ করতে দেয়নি।

একইরকম ঘটনা ঘটে শরিফুলের ক্ষেত্রেও। নিজের শেষ ওভার করতে এসেও তিনি করতে পারেননি। মাঝে বিশ্রাম নিলেও পেশির টান থেকে রেহাই পাননি। ৯ ওভারে ৪ উইকেট শিকার করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। রান খরচ করেছেন ২১টি।

 

এমন আগুন ঝরা পারফরমেন্সই দেখতে মুখিয়ে ছিল সবাই। খানিকটা দেরিতে হলেও সেই পারফরমেন্স উপহার দিলেন। একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস খানিকটা হলো জড়ো করতে চাইবে বাংলাদেশ। সেই রাস্তাটা অন্তত শরিফুল ইসলাম করে দিয়ে গেলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link