More

Social Media

Light
Dark

মালিকের বয়স সত্যিই স্রেফ একটা সংখ্যা

শীত জেঁকে বসেছে গোটা দেশটায়। সেই শীতের মাঝেই খানিকটা উষ্ণতা নিয়ে হাজির বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। ক্রিকেট মাঠে অন্তত উত্তাপের যোগানদাতা বিপিএল। শিশিরের সাথে লড়াই করেই দলগুলো নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিচ্ছে। খেলোয়াড়দেরও নিবেদনের যেন কোন কমতি নেই। তবে তাদের সবার থেকে এগিয়ে একজন। তিনি পাকিস্তানের শোয়েব মালিক।

শোয়েব মালিক, এবারের বিপিএলে খেলছেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে। দলটির প্রথম ম্যাচ জয়েও অবদান রেখেছেন মালিক। বয়সটা তাঁর চল্লিশের ঘরে। ২০০০ সালের আগে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে কেবল মালিকই এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেটটা খেলে যাচ্ছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা সুযোগ পান না। সেটা অবশ্য বেশ পুরনো গল্প। সেই একটি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট ছাড়া বিশ্বের আনাচে-কানাচে হওয়া ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলোতে পরিচিত মুখ শোয়েব মালিক।

সেখানেই শেষ নয়। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে, পাকিস্তান জাতীয় দলে তাঁকে রাখা হয়নি। তা নিয়ে রীতিমত সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে গোটা পাকিস্তানে। কেননা তিনি তো পারফর্মার। যখনই সুযোগ পান তিনি পারফর্ম করবার চেষ্টা করেন। তাছাড়া বিস্তৃত এক জলাধার পূর্ণ তাঁর অভিজ্ঞতা। এমন একজন খেলোয়াড় যেকোন দলের শোভা বাড়ায়। তবে তাঁকে দলে নেয়নি পাকিস্তান। সে নিয়ে আলোচনার টেবিলে তর্ক হয়েছে বেশ।

ads

এমন একজন খেলোয়াড়ের এখনও চাহিদা কমেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। কারণটা- পরিশ্রম। মালিক এখনও কঠোর পরিশ্রম করে যান। নিজেকে প্রতিটি মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত রাখেন। তাঁর বয়সে অধিকাংশ ক্রিকেটার ব্যাট-প্যাড তুলে রেখে কোচ কিংবা ক্রিকেট কর্তা বনে যান।

তবে, মালিক তাঁর অদম্য ইচ্ছে শক্তির বলে এখনও টিকে রয়েছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে। এমন কি রংপুর রাইডার্সের ম্যানেজার নাফিস ইকবাল ও ব্যাটিং কোচ শাহরিয়ার নাফিসও বয়সে এবং ক্রিকেট দুনিয়ায় বিচরণের দিক থেকে মালিকের জুনিয়র। এটুকুই মালিকের ইচ্ছে শক্তি ফুটিয়ে তোলে বর্ণিল আভায়।

রংপুর রাইডার্সের প্রথম ম্যাচ জয়ে ব্যাটে অবদান রেখেছেন বর্ষীয়ান এই ক্রিকেটার। ৩৩ রানের ছোট্ট ইনিংসটি রংপুরকে একটা শক্ত জয়ের ভীত গড়তে সহয়তা করে। মালিক চাইলেই নিজের অভিজ্ঞতা আর সিনিয়র খেলোয়াড়ের তকমা কাজে লাগিয়ে অনুশীলনে ফাঁকি দিতে পারেন। তবে না, তিনি তেমনটা করতে নারাজ। তিনি বরং পরিশ্রমের দিক থেকে সবার থেকে এগিয়ে থাকতে চান। তাইতো কুয়াশায় ঘেরা সকালে, সবার আগে নেট অনুশীলনে হাজির শোয়েব মালিক।

রংপুর রাইডার্স নিজেদের ঘাটি গেড়েছে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত মাঠে। সেখানেই অনুশীলনের সমস্ত আয়োজন। রবিবার বিপিএলের কোন ম্যাচ না থাকায়, প্রতিটা দলই ব্যস্ত ছিল অনুশীলনে। ব্যতিক্রম হবার কথা নয় রংপুরের। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মালিক। সবার আগে হাজির হয়ে তিনি ব্যাট নিয়ে নেমে অনুশীলন শুরু করে দেন।

ঠিক এই অদম্য শক্তিই অনুপ্রেরণা হয়ে যায় অসংখ্য উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য। তাদের সবার জন্যই যেন এক রোল মডেল মালিক। তাঁর এই ছোট-খাটো বিষয়গুলোই একজন ভাল খেলোয়াড় হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক। তিনি সেটা খুব ভাল করে জানেন বলেই, ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নেও অনুশীলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন না। তিনি জানেন, পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। ঠিক এ কারণেই এখনও তাঁর জন্য জাতীয় দলের পথটা খোলা।

সম্প্রতি দীর্ঘ একটা বিরতি কাটিয়ে পাকিস্তান দলে ফিরেছেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সরফরাজ আহমেদ। ফিরেই তিনি দলের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। তাঁর ব্যাট হেসেছে। তেমন সুযোগের অপেক্ষায় নিশ্চয়ই এখনও ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে যায় শোয়েব মালিকের। তাই তো কনকনে শীতের সকালও কোন বাঁধাই হতে পারে না। মালিকরাই প্রমাণ করেন বিশ্বসেরা হতে হলে, করতে হবে পরিশ্রম, কঠোর পরিশ্রম। বিকল্প কোন রাস্তা খোলা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link