More

Social Media

Light
Dark

চাপের মুখেই আফিফের নবজাগরণ

হাসান মাহমুদ গুড লেন্থেই বল ফেললেন। হাওয়ায় একটু মুভমেন্টও পেলো সে বল। মিডল স্ট্যাম্প লাইনে পিচ করে অফ স্ট্যাম্পের দিকে অগ্রসর হওয়া বলটায় আফিফের ব্যাটের আঘাত। দারুণ টাইমিং! ব্যাট-বলের মেলবন্ধনে শ্রুতিমধুর আওয়াজ। ছক্কা নিশ্চিত। হাসানের মাথা নিচু করে ফেলা তারই নিশ্চয়তা দেয়।

এরপর ব্যাটের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আফিফ হোসেন। যেন বোঝার চেষ্টা করলে সুইট স্পটেই আঘাত করেছে কিনা। তিনি বুঝলেন। তিনি এটাও যেন বুঝলেন তার সময় অতি সন্নিকটেই। তিনি আবারও ফিরে পাবেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ।

কিছুদিন আগেই তো গণমাধ্যমে হেড কোচ চাণ্ডিকা হাতুরুসিংহের অকপটে স্বীকারোক্তি, পারফরম না করা খেলোয়াড়ের জায়গা নেই জাতীয় দলে। আফিফকে ইঙ্গিত করেই সে কথা বলেছিলেন চাণ্ডিকা। তাতে বরং আফিফের ইগোতেই আঘাত করেছিলেন হাতুরুসিংহে। এই পদ্ধতিটা তিনি যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।

ads

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানকে বসিয়ে রেখেছিলেন ডাগআউটে হাতুরুসিংহে।  একটা সময় মুস্তাফিজই তো ছিলেন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন তার জায়গা একেবারেই পাকাপোক্ত। তবে দাম্ভিকতায় আঘাতের ফলাফলটা পাওয়া গিয়েছে সেই ম্যাচে। মুস্তাফিজ উইকেট নিয়েছিলেন চারটি।

তেমনই আরেক উদাহরণের জন্ম তো আফিফও দিয়েছেন। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার স্পৃহা তাকে পেয়ে বসেছিল। তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগকে নিজের জাত চেনানোর মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন। পঞ্চাশ ওভারের সেই টুর্নামেন্টে তার ব্যাট হেসেছে নিয়ম করে।

৫৫ গড়ে ৫৫০ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইকরেট ছিল ১১০। সেই পারফরমেন্সের সুবাদেই আবারও জাতীয় দলের স্কোয়াডে ফেরার একটা সুযোগ পেয়েছেন আফিফ হোসেন। শুধু সুযোগ পেয়েই ক্ষান্ত নন তিনি। প্রতিনিয়ত তাকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। তিনি টাইগারদের চাহিদা মেটাতে পারবেন কিনা সে নিয়ে হচ্ছে বিস্তর আলাপ আলোচনা। তবে খানিকটা চাপে নিশ্চয়ই রয়েছেন বা-হাতি এই ব্যাটার।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিপক্ষে উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাত নম্বর পজিশনে কে খেলবেন সে নিয়ে আলোচনার শেষ এখনও হয়নি। তবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের গতিবিধি আভাস দিচ্ছে রিয়াদের থেকে এগিয়ে থাকবেন আফিফ হোসেন।

কিন্তু বড় মঞ্চে আফিফের পারফরমেন্স বেশ প্রশ্নবিদ্ধ করার মতই। এখন অবধি দুইটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন আফিফ হোসেন। সেই চাপটা ঠিক সামলে নিতে পারেননি তিনি। মুখ থুবড়ে পড়েছেন ব্যাট হাতে। ২০২১ বিশ্বকাপে মোটে ৫৪ রান করেছিলেন তিনি ৮ ম্যাচে। ব্যাটিং গড় আর স্ট্রাইকরেটের গল্প বলা এখানে বেমামান।

সেই দশার উন্নতি হয়নি ২০২২ বিশ্বকাপেও। সেখানে তিনি রান করেছেন মাত্র ৯৫। ৫ ম্যাচে তার করা রানের সংখ্যা বেড়েছে আগের বিশ্বকাপ থেকে। গড়টাও বেড়েছে তাই। কিন্তু হতশ্রী পারফরমেন্সের বিষয়টির ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে।

যদিও ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফরমেন্স মানদণ্ড হতে পারে না। শুধুমাত্র বড় মঞ্চে আফিফের দৃঢ়তা টলে যাওয়ার একটা চিত্র আঁকার প্রচেষ্টা মাত্র। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আফিফের পারফরমেন্স প্রশংসনীয়। তাছাড়া ওয়ানডে টেম্পার্মেন্টও টপক্লাসই বলা চলে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৯৩ রানের ইনিংসটিও হতে পারে সাপোর্ট ম্যাটেরিয়াল।

তবে ধারাবাহিকতার অভাবটা রয়েছে আফিফের মাঝে। সেই অভাবটা নিশ্চয়ই তিনি উড়িয়ে দিতে চাইবেন ব্যাটের সুইট স্পটের আঘাতে। সেটার প্রস্তুতিই তিনি নিচ্ছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। শেষ অবধি দলের চাহিদা মিটিয়ে নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে আফিফ পারবেন কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link