More

Social Media

Light
Dark

কাশ্মীর থেকে লর্ডস

বরফে ঢাকা কাশ্মীরের মিরপুর শহর। সেখান থেকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের শেষ ভাগে অনেকেই পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। সেখানে আদিল রশিদের পরিবারও ছিল। ১৯৬৭ সালে তাঁর পরিবার পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। সেখানেই ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই স্পিনার। এরপরের গল্প তো গোটা ক্রিকেট দুনিয়ারই জানা। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার তিনি। তিন ফরম্যাটেই ইংল্যান্ডের স্পিন বোলিং আক্রমণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কাশ্মীরের সেই ছেলেটা ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপও জেতে।

সেই ছোট্ট বয়সেই নিজের ক্রিকেট প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন তিনি। ১৪ বছর বয়সী আদিল রশিদ নজর কেড়েছিলেন টেরি জেনারের। এরপর আর আদিল রশিদের ক্রিকেটার হওয়া ঠেকায় কে। দ্রুতই বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের ধাপগুলো পাড়ি দিতে থাকেন।

২০০৬ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইয়োর্কশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। সেই বছরই ব্যাট, বল হাতে দারুণ পারফর্ম করে ফেলেন। ব্যাট হাতে চারটা সেঞ্চুরি করেছিলেন সেই মৌসুমে। এছাড়া একটি ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। আর তখন ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক আসে এই অলরাউন্ডারের।

ads

পরের বছর ইংল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরও করেন আদিল রশিদ। সেবারই রশিদের খেলা দেখে জেসন গিলেস্পি ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। ভাবা হচ্ছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা হতে যাচ্ছেন এই ক্রিকেটার। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের ইয়ং প্লেয়ার অব দ্য ইয়্যারও হয়েছিলেন তিনি।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পনের জন্য আদিল রশিদকে আরো অপেক্ষা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষেক হয় এই স্পিনারের। সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে মোট ৫ টি ম্যাচ খেলেছিলেন। খুব রাজকীয় কোন শুরু ছিল না, তবে আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন। ওদিকে ওয়ানডে অভিষেকেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের ভরসার নাম হয়ে ওঠেন তিনি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে কোনভাবেই জায়গা পাচ্ছিলেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ৬ বছর পার করে ফেলার পর অবশেষে সুযোগটা আসে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে মাঠে নামেন আদিল রশিদ।

ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে তখন আদিল রশিদ বড় তারকা। যদিও রঙিন পোশাকে এই স্পিনারের শুরুটা খুব বেশি রঙিন ছিল না। তবে টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেকটা একেবারে রাঙিয়ে তুলেছিলেন এই লেগ স্পিনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

তবে ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন বলেই হয়তো নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা খুব বেশি রাঙাতে পারেননি। স্পিন বোলারদের খেলানোর ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন দেশটি। ফলে এই লেগস্পিনারকেও নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যেতে হয়েছে।

এছাড়া ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মঈন আলীর সাথে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। মঈন আলীও হাতটা ঘুরাতে জানেন। আর ইংল্যান্ড এমন কন্ডিশনে খুব কমই খেলে যেখানে তাঁরা একাধিক স্পিনার একাদশে রাখবে। সেজন্য ব্যাটিং এর গভীরতার কথা চিন্তা করে মঈন আলীর দিকেই বেশি ঝুঁকত ইংল্যান্ড।

ফলে ১৩ বছরের লম্বা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার অনুযায়ী সে পরিমাণ ম্যাচ খেলতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মোট ৭৩ টি। সেখানে ২২.৭১ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ৮১ উইকেট। ওদিকে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ১১২ টি। সেখানেও নিয়েছেন ১৫৯ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটেও সুযোগ পেয়েছেন আরো কম। সব মিলিয়ে ১৯ টেস্ট খেলে তাঁর ঝুলিতে আছে ৬০ উইকেট।

এই সংখ্যাগুলো যেকোন স্পিনারের জন্যই গর্ব করার মত। তাও বেশিরভাগ সময় ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলে। তবুও আদিল রশিদ নামটার কাছে যেন এই সংখ্যাগুলো বেশ মলিন। উপমহাদেশে জন্মালে হয়তো আরো অনেক বড় কিংবদন্তি হিসেবে লেখা হত তাঁর উপাখ্যান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link