More

Social Media

Light
Dark

আব্রামোভিচ থাকছেন, কিন্তু থাকছেন না!

ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলে চেলসিকে নতুন করে সাজিয়েছিলেন রোমান আব্রামোভিচ। সর্বপ্রথম রাশিয়ান এ ধনকুবের ডলারের বস্তা নিয়ে ক্লাবটি কিনে নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বাইরের কারো সেদেশে ক্লাব কেনার যাত্রাটা তখনই শুরু হয়েছিল। তিনি ক্লাবটির মালিকানা নেওয়ার পরই ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম পাওয়ার হাউজে পরিণত হয় চেলসি।

অনেকটা সময় আলোচনার বাইরে থাকার পর আবারো তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা কথা। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই তাকে নিয়ে মেতে উঠেছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। রাশিয়া প্রেডিন্টে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় এখন বিপদে পড়ে গেছেন আব্রমোভিচ। ইংল্যান্ডে আর কখনো যেতে পারবেন না, এমন খবরও ছাপা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। ইউক্রেনে যুদ্ধটা শেষমেশ বাধিয়ে দিয়ে রাশিয়া নিজেদের মক্তিমত্তা প্রদর্শনে ব্যস্ত।

এর প্রভাব ফুটবলেও যে পড়বে এমনটা আগেভাগেই ধারনা করা গিয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর পর পরই ইংলিশ সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, তার প্রভাবটা কিছুটা আগাম টের পেতে যাচ্ছে ইংলিশ ফুটবল ক্লাব চেলসি। ইউক্রেনে পুরোদমে হামলার পর ব্রিটেন আজীবন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে দলটির মালিক রোমান আব্রামোভিচকে, এমন খবর এখন ইংল্যান্ডের ফুটবলে কান পাতলেই শোনা যায়।

ads

রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দেশটি। যার ফলে ইংল্যান্ডে আর কখনো পা রাখতে পারবেন না চেলসির এই রুশ মালিক! ৫৫ বছর বয়সী রুশ ব্যবসায়ী আব্রামোভিচকে বেশ কয়েক মাস ধরেই চেলসির মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আর আগের মতো দেখা যায়নি। চার বছর আগে ২০১৮ সালে ব্রিটিশ টায়ার ওয়ান বিনিয়োগকারীর জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি, তবে রুশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তাঁর সে আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল।

এবার একই কারণে ইংল্যান্ডে থাকার অধিকার হারাতে যাচ্ছেন আব্রামোভিচ। দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি মেইল জানিয়েছে, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে রোমানের বেশ কিছু ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। যদিও চেলসির মালিক তা বরাবরই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। তিনি এখনো তার আগের কথাতেই রয়েছেন।তবে

সংবাদ মাধ্যমগুলো পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের খোজে বহু বছর ধরেই তৎপড়তা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার সুত্র ধরে ২০১৮ সালে চেলসির মালিক যুক্তরাজ্যের এই নিয়মের একটা ফাঁক খুঁজে বের করেছিলেন। ইসরায়েলের নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি ছয় মাসের জন্য ব্রিটেনে থাকার সুযোগ আদায় করেছিলেন অনেক ধুরন্ধরভাবে। তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস আব্রামোভিচকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, এ নিয়ে এখনো পর্যন্ত সরাসরি কিছু বলেননি।

তবে তাঁর ধারনা যে অন্যরাও পেতে পারে, এ ইঙ্গিত অবশ্য দিয়েছেন তিনি। ডেইলি মেইলকে লিজ ট্রাস বলেন, ‘আমাদের কাছে রাশিয়ান নেতৃত্বের কর্মকান্ডে জড়িতদের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। এখন ইউক্রেন থেকে রাশিয়া যদি তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে, আমরা উত্তাপ বাড়াতে পারি, আরও বেশি ব্যাংক, অভিজাত এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংস্থাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারি।’

তবে এই কর্মকাণ্ড যে কেবলই রাশিয়ান সরকারকে বার্তা দেওয়ার জন্য, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেকটা খোলাখোলিভাবে তিনি বলেছেন, ‘এটি মূলত পুতিনকে আঘাত দেওয়ার এবং সময়ের সাথে সাথে রাশিয়ান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখার জন্য করা হচ্ছে। যারা পুতিনের ঘনিষ্ঠ লোক, তাদের লক্ষ্য করে। যতটা আঘাত দেওয়া যায় তাদের, সেটাই করতে হবে আমাদের। এখানে কাউকে ছাড় দেবার কোন সুযোগ নেই।’

তাহলে যে আব্রামোভিচ বিপদে পড়তে যাচ্ছেন সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। যদি ইংল্যান্ডে আর তিনি প্রবেশ করতে নাই পারেন তাহলে চেলসিকে বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া কোন পথই খোলা থাকবেনা। অবশ্য, আপাতত তিনি মালিকানাটা ধরেই রেখেছেন। তবে, সকল দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন চেলসির ফাউন্ডেশনকে।

ক্লাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে তেমনই জানিয়েছেন। তবে সেখানে যদি ব্রিটিশ সরকার বাগড়া দেয় তাহলে খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইউক্রেনকে একা যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো শক্তিশালী দেশগুলো শুধু সমর্থণ দেবার কথা বলেছে। গলা ফাটালেও গোলে-বারুদ কিছুটা ফাটাচ্ছেনা।

তাই তারা পুতিন সমর্থক হিসেবে যাদেরকে পাচ্ছে, তাদের কেই নানা অভিযোগের তীর ছোড়ার পাশাপাশি নিচ্ছে নানা শাস্তিমুলক ব্যবস্থা। যেখানে চেলসির মালিক আব্রামোভিচকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়। সে কারণেই অনেকেই বলেছেন, পুতিনের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা ও তাঁর হাত শক্তিশালী করার পেছনে যাঁদের বড় অবদান, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন এই আব্রামোভিচ।

হাউজ অব কমন্সে অনুষ্ঠিত এক বিতর্কে সাংসদ ব্রায়ান্ট ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আব্রাহিমোভিচের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং চেলসি ক্লাবের মালিকানা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। ব্রায়ান্ট অনেকটা আত্ববিশ্বাসের সুরে বলেন, তাঁর হাতে যে ফাঁস হওয়া নথি রয়েছে, সেখানে আব্রামোভিচ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে কোনোভাবেই ইংল্যান্ডে একটি শীর্ষ ফুটবল ক্লাবের মালিকানা থাকতে পারেন তিনি।

ব্রায়ান্ট ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফাঁস হওয়া সেই আলোচিত নথি থেকে পার্লামেন্টে সবিস্তার অবিহিত করেছেন। সেখানে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশ সরকারের রাশিয়া নীতিতে স্পষ্টত বলা আছে তাদের অবৈধ অর্থ ও ক্ষতিকর কার্যক্রমকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কথা। আব্রাহামোভিচ রাশিয়ান সরকার ও এর অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় অনেক বছর ধরে ব্রিটিশ সরকারের নজরে আছেন। নতুন করে আদালতেও তাঁর একটি স্বীকারোক্তির উদাহরণ চলে আসতে পারে। সেখানে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য কোটি কোটি ডলার অর্থ খরচের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সুতরাং ব্রিটিশ সরকার মনে করে, যারা এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তারা ব্রিটেনে থেকে এসকল কর্মকান্ড করতে পারবে না। সরকার তার অধীনে থাকা অভিবাসন আইন ব্যবহার করে সেটি প্রতিহত করবে বলেই আমরা মনে করছি।’

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এক নেতা বলেছেন, ২০১৯ সালে সেই নথিটি তৈরি করা হয়, কিন্তু এত দিন কেটে যাওয়ার পরও রোমান আব্রাহামোভিচের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াটা দু:খজনক। তাই যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন আপাতত কোপটা এই ধনকুবের উপরই পড়তে যাচ্ছে। কারণ ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট হিসেবে তার নামটি অনেকটা স্বীকৃত হয়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিপদ থেকে কিভাবে উদ্ধার পাবেন সেই পথও নাকি খোজা শুরু করেছেন আব্রামোভিচ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link