More

Social Media

Light
Dark

একজন সিটি কিংবদন্তি

৪৪ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে ৯৪ তম মিনিটে গোল!

৪৪ বছর পর ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ঘরে তোলার আনন্দ! আর এই জয়ের নায়ক ছিলেন সার্জিও আগুয়েরো।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক মৌসুমে ম্যানচেষ্টার সিটিকে জিতিয়েছিলেন লিগ শিরোপা। যেখানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মানিয়ে নিতে যেকোনো বিদেশি ফুটবলারকে অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছুদিন। সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় নিয়েছেন সার্জিও আগুয়েরো।

ads

সার্জিও আগুয়েরো ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ম্যানচেস্টার সিটিকে সাফল্যের শিখরে তুলে নিতে এবং নতুন করে ফিরিয়ে নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর আগুয়েরো। ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাস তাকে সবসময় স্মরণ করে রাখবে। কারণ তিনি এবং তাঁর সতীর্থরাই যে সিটির উত্থানের গল্প লিখেছেন।

সার্জিও আগুয়েরো জন্ম আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসে। ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুও সেখানে। মাত্র ১৫ বছর ১৩ দিন বয়সে আর্জেন্টাইন প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে অভিষেক হয় সার্জিও আগুয়েরোর।

আর্জেন্টাইন লিগে ভালো করার সুবাদে বেশ দ্রুতই ইউরোপে পাড়ি জমান সার্জিও আগুয়েরো। এখানেও সেই আর্জেন্টিনার লিগের রেশ ধরে রাখেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে নিজের অবস্থান পাকা করে নেন। পাঁচ মৌসুমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে জিতেছিলেন একটি ইউরোপা লিগের শিরোপা।

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। তখনকার সময়ে সিটির সবচেয়ে দামি ফুটবলার। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে বেশি সময় নেননি তিনি।

২০১১-১২ মৌসুমে ইংলিশ লিগের শিরোপা লড়াইয়ে ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব। ৩৮ তম পর্বে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মুখোমুখি হয়েছিলো সাউদহাম্পটনের এবং ম্যানচেস্টার সিটি মুখোমুখি হয়েছে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের। দুই দলের সমান পয়েন্ট কিন্তু গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে ম্যানচেস্টার সিটি। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকে খেলা ইনজুরি সময়ে গড়িয়ে যায়। ইনজুরি সময়ে  এডিন জেকোর গোলে সমতায় ফেরে। কিন্তু শেষ বাশি বাজার মুহুর্তে গোল করে ৪৪ বছর পর সিটিজেনদের শিরোপার স্বাদ এনে দেন আগুয়েরো।

প্রথম মৌসুমে শুধু শেষ মুহুর্তে গোল করা নয়, পুরো মৌসুম জুড়ে গোল করেছেন ৩০ গোল।

২০১৩-১৪ মৌসুমে সিটির হয়ে করেন ২৮ গোল। তাঁর উপর ভর করেই আবারো ইংলিশ লিগের শিরোপা জেতে ম্যানচেস্টার সিটি। শুধু লিগ শিরোপা নয়, ক্যাপিটাল ওয়ান কাপের শিরোপাও ঘরে তোলে সিটিজেনরা।

২০১৪-১৫ মৌসুম ছিলো সার্জিও আগুয়েরোর জন্য সেরা একটি মৌসুম। এই মৌসুমে লিগে সর্বোচ্চ ৩২ গোল করেন। এছাড়াও সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সিটির হয়ে ১০০ গোলের মাইলস্টোন গড়েন তিনি। কিন্তু এই মৌসুমের সিটির হয়ে কোনো শিরোপাই জিততে পারেননি তিনি।

২০১৫-১৬ মৌসুমে ৪২ ম্যাচে করে ২৯ গোল। এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ১০০ গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি। এরপরে আরো বেশ দূর্দান্ত গোল স্কোরার হয়ে উঠেন আগুয়েরো। ২০১৬-১৭ মৌসুমের শুরু টা ছিলো আরো বেশ দূর্দান্ত। মৌসুমের প্রথম ছয় ম্যাচে করে বসেন ১১ গোল। শেষ পর্যন্ত পুরো মৌসুম জুড়ে করেন ৩৩ গোল।

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে নেপোলির বিপক্ষে ৪-২ গোলে জয় পাবার ম্যাচে তৃতীয় গোলটি করেন সার্জিও আগুয়েরো। এই গোল করার মাধ্যমে ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান তিনি। এই রেকর্ড গড়তে তিনি পিছনে ফেলেন ৭৮ বছর আগে করা এরিক ব্রুকের করা ১৭৭ গোলের রেকর্ড। ১৭৮ গোল করে তিনি হন ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এর পরে এই সংখ্যাটাকে বাড়িয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি।

২০১৭-১৮ মৌসুমে আবারো ৩০ গোল করেন সার্জিও আগুয়েরো। এইবার ৩০ গোল করার মাধ্যমে তিনি পিএফএ টিম অফ দ্যা ইয়ারে জায়গা করে নেন। এই মৌসুমের পর ২০১৮-১৯ মৌসুমে ইনজুরিতে ছিলেন আগুয়েরো। তাঁর নামের পাশে ছিলো সিটিজেনদের হয়ে ১৯৯ গোল করার রেকর্ড।

২০১৯-২০ মৌসুমে আগুয়েরো আবারো ৩২ গোল করেন ইংলিশ লিগে। থিয়েরি হেনরির পর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা পাঁচ মৌসুমের ২০ বা তাঁর বেশি গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি। ২০২০-২১ মৌসুমে পুরোটাই ইনজুরিতে আছেন তিনি। আর এই মৌসুমে গোল করেছেন মাত্র একটি।

৩২ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ম্যানচেস্টার সিটির উত্থানের অন্যতম নায়ক। ডেভিড সিলভা, ভিনসেন্ট কোম্পানি, ইয়াইয়া তোরে সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন সিটিকে। ১০ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে জিতেছেন ১১ টা শিরোপা। কিন্তু জেতা হয়ে উঠেনি কোনো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। সেই আক্ষেপটা হয়তো থাকবে।

ম্যানচেস্টার সিটির সবাই তাকে মনে রাখবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে, শিরোপা খরা ঘোচানোর নায়ক হিসেবে।  প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে বিদেশী হয়ে সবচেয়ে বেশ গোল দিয়েছেন তিনি।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link