More

Social Media

Light
Dark

আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!

নিউজিল্যান্ড দূর্গের দেশ। দেশটির সাগরকূল ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ডজন ডজন দূর্গ। এই দূর্গ তারা গড়েছিলো ভিনদেশি সমুদ্র শত্রুদের ঠেকাতে। কিন্তু সেই জল দস্যুরা আর নেই। তবে আজও টিকে আছে নিউজিল্যান্ড দূর্গ।

আজ নিউজিল্যান্ডের প্রতিটা ক্রিকেট মাঠ একটা দূর্গ বিশেষ। বছরের পর বছর তারা প্রতিটা মাঠে কঠিন উইকেট গড়ে, কঠিন সব বোলার নামিয়ে দিয়ে ঠেকিয়ে রাখে বিদেশি ক্রিকেট দলগুলোকে। সারাবিশ্ব জয় করে পতাকা ওড়ায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু, নিউজিল্যান্ড দূর্গ আর জয় করা হয়ে ওঠে না।

ভারত, অস্ট্রেলিয়া পারে না। সেখানে বাংলাদেশ তো কোন শিশু মাত্র।

ads

বাংলাদেশ! লোকেরা অট্টহাসি হাসে। বাংলাদেশ তো দেশের বাইরে, উপমহাদেশের বাইরে কারো সাথেই টেস্ট জিততে পারে না। বাংলাদেশ তো নিউজিল্যান্ডে কোনোদিন ম্যাচ জেতেনি। বাংলাদেশের তো সেই ‘পান্ডব’ খেলোয়াড়রা আর নেই। এই কচি কাচার দল নিয়ে বাংলাদেশ জিতবে নিউজিল্যান্ডে। যে নিউজিল্যান্ড ২০১০ সালের পর এশিয়দের বিপক্ষে হারেনি, তারা হারবে বাংলাদেশের বিপক্ষে।

হা হা হা! অট্টহাস্য করে লোকে।

কিন্তু এই দিনটা অন্যরকম। পাঁচদিন ধরে সূর্যটা একটু অন্যরকম ভাবে উঠছিলো দুনিয়ায়। অন্য একটা বারুদের গন্ধ ভাসছিলো আকাশে। লোকেদের অট্টহাস্যটা গলার মধ্যে আটকে গেলো। একটা দলা হয়ে ঝুলে রইলো। বাংলাদেশের নতুন এক বাহিনী জেগে উঠলো। তারা মাঠে স্যালুট ঠুকে দিলো। সেই স্যালুটে কাত হয়ে গেলো নিউজিল্যান্ড।

কোথাকার কোন বঙ্গোপসাগর পার থেকে আসা বাংলাদেশি এক বাহিনীর কাছে ধ্বসে পড়লো নিউজিল্যান্ড। বাঙ্গাল এক দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডে ওড়ালো লাল সবুজের পতাকা।

বাংলাদেশের এই দলটার নিউজিল্যান্ড জয়ের অনেক অনেক অনেক মাহাত্ম। স্রেফ ক্রিকেটের বিচারেই এ এক অসাধ্য সাধন। ক্রিকেটের অনেক হিসেব নিকেশ বদলে গেলো এই জয়ের ভেতর দিয়ে।

বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড ১৭ ম্যাচ ধরে টেস্টে অপরাজিত। তাদের সেই ধারাটা আটকে গেলো বাংলাদেশের কাছে এসে। নিউজিল্যান্ডকে গত প্রায় এক যুগ ধরে উপমহাদেশের কোনো দল তাদের দেশে গিয়ে হারাতে পারে না। সেই সত্যিটাকেও মিথ্যে বানিয়ে দিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কখনো সেরা পাঁচ টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতেনি। এই বানীকেও মিথ্যে বানালো দলটা।

কিন্তু এসবের চেয়ে বাংলাদেশের কাছে এই জয়ের একেবারে ভিন্ন কিছু অর্থ আছে।

এই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়। এটুকু বলাই হয়তো যথার্থ ছিলো। কিন্তু এর মধ্যে আরও অনেক তাৎপর্য আছে। এই জয়ের সিড়ি রচনার ভেতর দিয়ে এবাদত হোসেনরা কী আমাদের নতুন এক বার্তা দিলেন না?

তাঁরা বলে দিলেন উইকেটের মত উইকেট পেলে বাংলাদেশের ফাস্ট বোলাররও পারে প্রতিপক্ষকে ছিড়ে ফেলতে। তারা বলে দিলেন কেবল সদিচ্ছার অভাবে বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের খোড়া ঘোড়া বানিয়ে রাখা হয়েছে। তারা বলে দিলেন উপযুক্ত কন্ডিশন পেলে তারাও রিভার্স সুইংয়ের প্রদর্শনী করতে পারেন।

এই জয় দিয়ে বার্তা দিলেন জয়, মুমিনুল, শান্ত, মিরাজ, লিটনরা। তারা বললেন, তাদের আর দলে দ্বিতীয় সারির নাগরিক করে রাখার দরকার নেই। কেবল সিনিয়রদের নিয়ে কান্নাকাটি, কেবল সিনিয়রদের হাতে পায়ে ধরার দিন আর নেই। আর নেই সেই পেছন ফিরে তাকানোর দিন।

আমাদের সিনিয়ররা আমাদের অনেক দিয়েছেন। ধাপে ধাপে তারা আমাদের এই পথে এগিযে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের বন্দনা আর তোষনে আটকে থাকলে চলবে না। এখন জয়দের দিন। এখন আমাদের শান্তদের দিন। এখন সামনে তাকানোর দিন। এই এক নতুন সকালের বারতা।

আমরা এখান থেকে কেবল এগিয়ে যেতে চাই।

হ্যা, রাতারাতি সব বদলে যাবে না। রাতারাতি বিসিবি আধুনিক হবে না। রাতারাতি সব উইকেট ঠিক হয়ে যাবে না। তারপরও আসুন, আশায় বুক বাঁধি। এই জয় থেকে শিক্ষা নিক বোর্ড। তারা বুঝুক, একটু হাত বাড়ালেও প্রস্তুত আমাদের সৈনিকেরা। তাদের কেবল হাত ধরুন। যুদ্ধ আমরা জিতবোই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link