More

Social Media

Light
Dark

কোহলি ও কোহলির ব্যবধান

কোহলি – তাঁকে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। কিন্তু যদি বলি বিরাট কোহলি নয়, বলছি তারুয়ার কোহলির কথা – তাহলে নিশ্চয়ই নড়েচড়ে বসবেন। কারণ তাঁকে একটু চেনানোর প্রয়োজন আছে। তবে, তারুয়ার কোহলির কথা বলতে গেলেও আগে সেই বিরাট কোহলির প্রসঙ্গই আসবে।

বর্তমানে বিরাট কোহলির আগ্রাসী অধিনায়কত্বের সাথে গোটা ক্রিকেট দুনিয়াই পরিচিত, ব্যাটিংয়েও তিনি বর্তমান সময়ের সেরা। শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি পারবেন না – সেই নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক হয়।

তবে তাঁর এই অধিনায়কত্বের বীজ বোনা হয় সেই ২০০৮ সালে। সে বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য কোহলি অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে রান করে এবং আগ্রাসী অধিয়ায়কত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপ।

ads

বিরাট কোহলি সেই টুর্নামেন্টে করেন মোট ২৩৫ রান। তবে সেই বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলে ছিলেন আরেকজন কোহলি। তিনি হলেন তারুয়ার কোহলি। তারুয়ার কোহলি ছিলেন সেই দলের ওপেনার। সেই টুর্নামেন্টে তাঁর সংগ্রহ ছিল ২১৮ রান। যা বিরাট কোহলি থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। তাঁর দুই কোহলি কে নিয়েই বেশ আশাবাদী ছিল ভারতের ক্রিকেট।

সেই আশাবাদ থেকেই ২০০৮ সালের প্রথম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দল পান এই ওপেনার। ফ্র্যাঞ্চাইজি দল রাজস্থান রয়্যালস দলে ভিড়ায় প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানকে। পরের বছর আইপিএলে পাঞ্জাবের হয়ে খেলেন তিনি। তবে দুই আসরের কোনোটিতেই তাঁর প্রতিভার প্রকাশ করতে পারেননি এই ক্রিকেটার।

ওদিকে তাঁর সতীর্থ ও যুব পর্যায়ের অধিনায়ক বিরাট কোহলি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরের হয়ে ঠিকই আশার প্রতিদান দিচ্ছেন। ফলে একদিকে একজন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দিকে আর অন্য জন ক্রমশ দূরে সড়ে যাচ্ছিলেন। দু:খজনক ভাবে এই ব্যবধান সময়ের সাথে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।

বিরাট কোহলি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্যাটসম্যানদের একজন। ধারণা করা হয় ভারতের ব্যাটিং ইতিহাসকে নতুন করে লিখবেন এই ব্যাটসম্যান। সেই ধারণা যে খুব একটা মিথ্যে নয় তাঁর প্রমাণ ও মিলতে  শুরু করেছে ইতিমধ্যে। যার নামের পাশে ৭০ টি সেঞ্চুরি ও ঝুলিতে রয়েছে বিশ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক রান।

তবে তারুয়ার কোহলির ক্যারিয়ার গ্রাফ ঠিক যেনো তাঁর বিপরীত। সম্ভাবনাময়ী এই খেলোয়াড় কখনো খেলতে পারেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তবে ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ এই কোহলি। মিজোরামের হয়ে এখনো খেলে যাচ্ছেন তিনি।

৪১ টি ম্যাচে ৪৩ গড়ে করেছেন ২৭৬৪ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর দুইটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করার কীর্তি ও রয়েছে। সেখানে স্বয়ং বিরাট কোহলি এখন অবধি একবারও ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পাননি। বোঝাই যাচ্ছে, সামর্থ্যের কমতি ছিল না তারুয়ারের। কিন্তু, কিভাবে যেন খেই হারিয়ে ফেললেন!

তবে এইসব নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তারুয়ার কোহলি। এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেন, ‘বিরাট এখন আমার কাছে আইডলের মত। ও যেভাবে নিজেকে মেইনটেইন করে নিজের সেরাটা দিচ্ছে তা অসাধারণ। আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। তাই এই নিয়ে আক্ষেপ করার কিছু নেই।’

তিনি নিজের ব্যাপারে বলেন, ‘আমি আমার টেকনিক নিয়ে খুব বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে গেইম প্ল্যানে কখনো মনোযোগ দিতে পারিনি। তাই সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দেয়া হয়ে উঠেনি। তাই আক্ষেপ যদি করতে হয় তবে এইটা নিয়েই করি। এছাড়া আর কোনো আক্ষেপ নেই।’

তাঁর হয়তো আক্ষেপ নেই, কিন্তু আরেকজন কোহলিকে না পাওয়ার আক্ষেপ নিশ্চয়ই ভারতীয় ক্রিকেটের আছে। তবে, এটাই ভারতীয় ক্রিকেটের বাস্তবতা। শতকোটির দেশে ক্রিকেট প্রতিভার অভাব নেই। এখানে ম্যাজিকটা অনেকের মধ্যেই থাকে। কিন্তু কেউ এখানে বিরাট কোহলির মত গ্রেট হতে পারেন, কেউ বা তারুয়ার কোহলির মত ক্ষণিকের ম্যাজিক হয়ে হারিয়ে যান!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link