More

Social Media

Light
Dark

বিজয়ের বিজয়-কেতন

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে বিজয়-কেতন উড়িয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। পুরো টুর্নামেন্টে রান ফোয়ারা ছুটিয়ে ধুঁকতে থাকা এক ক্যারিয়ারকে প্রাণ দিয়েছিলেন নিজেই। ১৫ ম্যাচে ৯ ফিফটি আর ৩ সেঞ্চুরিতে লিস্ট এ ক্রিকেটে রেকর্ড ১১৩৮ রানের সুবাদে জাতীয় দলের দরজাও খুলে গিয়েছিল অনায়াসেই।

পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ভাল করে দলে সুযোগ মিলল। তাই সেই ওয়ানডে ফরম্যাটেই নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু এনামুলের প্রত্যাবর্তন হলো টি-টোয়েন্টি দিয়ে। আর সেখানেই ভরাডুবি হলো বিজয়ের। প্রত্যাবর্তনটা স্মরণীয় করে তো রাখতেই পারলেন না। উল্টো ৭ ম্যাচে মাত্র ৯০ রান করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলের বিবেচনা থেকেই হারিয়ে গেলেন। আর সুযোগ পেলেন না।

একদিনের ক্রিকেট অবশ্য ঠিকই সুযোগ আসলো। আর সেই সুযোগ একদম লুফে নিলেন বিজয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজ দুটিতে খেললেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। ওয়ানডে দলে তাই থিতু হওয়ার প্রাথমিক কাজটা ঠিকই সেরে ফেললেন ঐ সিরিজ দিয়ে।

ads

কিন্তু ঐ এক ফরম্যাট বাদে বিজয়ের ব্যাটে পরে আর কোনো রান নেই। টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি টেস্টেও তেমন বলার মতো কিছু করতে পারলেন না। বাকি দুই ফরম্যাটের এ ব্যর্থতার রেশ লাগলো একদিনের ক্রিকেটেও। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মোটা দাগে হলেন ব্যর্থ।

ব্যর্থতার এমন গল্প থেকে বেরিয়ে আসার উপলক্ষ্য হয়ে আসলো বিপিএল। ফরচুন বরিশালের হয়ে নিয়মিতই সুযোগ পেলেন। টুকটাক রানও পাচ্ছিলেন। কিন্তু আলোচনায় আসার মতো বড় ইনিংস খেলতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে নিজের অষ্টম ম্যাচে এসে পেলেন বড় ইনিংসের দেখা। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেললেন ৭৮ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস।

এমনিতে স্ট্রাইক রোটেট না করা, পায়ের কাজে দুর্বলতা, অতিরিক্ত ডটবল খেলা নিয়ে এনামুলের উপর অভিযোগ সেই ক্যারিয়ারের আদিলগ্ন থেকেই। এ বারের বিপিএলে যে সেই দুর্বলতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন তেমনটিও নয়। আগের খেলা ৭ ম্যাচ মিলিয়ে মোটে রান করেছিলেন ১১৭। ৭ ইনিংসের একটিতে মাত্র ত্রিশ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন।

 

শেষ দুই ম্যাচে ফিরেছিলেন এক অঙ্কের ঘরে রান রেখে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাই একটা বড় ইনিংস খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বিজয়ের জন্য। অবশেষে সিলেটের মাটিতে নিজেকে ফিরে পেলেন বিজয়। ৬ চার আর ৬ ছক্কায় ৫০ বলে সাজালেন ৭৮ রানের এ ইনিংস।

চট্টগ্রামের দেওয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ফরচুন বরিশালের প্রয়োজন ছিল একটি উড়ন্ত সূচনা। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হওয়া এনামুল ঠিক সেই দায়িত্বটাই এ ম্যাচে নিলেন। শুরু থেকেই বল হিট করতে শুরু করলেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে তিনি একাই হাঁকালেন ৫ টি ছক্কা। আর তাতে মাত্র ২৭ বলেই তুলেন নেন নিজের ব্যক্তিগত ফিফটি। এনামুলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বরিশালও পায় ৬ ওভারে ৬৭ রানের দুর্দান্ত সূচনা। এমন ব্যাটিংয়ে বরিশালের কাছে লক্ষ্যটা তখন মামুলিই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু হঠাতই ছন্দপতন। ৭ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বরিশাল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার সাকিব এ দিন ফিরে যান ২ রান করে। চারে খেলতে আসা রিয়াদও এ দিন হতাশ করেন। ফিরে যান শূন্য রান করেই। যদিও তখনও উইকেটে ছিলেন দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা এনামুল।

তবে যোগ্য সঙ্গীর ওভাবে তিনিও ব্যাটের শুরুর ছন্দ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। ২৭ বলে যেখানে তিনি ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেছিলেন, সেখানে পরের ২৩ বলে করতে পারেন মাত্র ২৭। ব্যক্তিগত ৭৮ রানের সময় মৃত্যুঞ্জয়ের বলে বোল্ড হয়ে এনামুল ফিরে গেলে আরো চাপে পড়ে যায় ফরচুন বরিশাল।

তবে এনামুলের লড়াকু এ ইনিংস বিফলে যেতে দেননি করিম জানাত। আট নম্বরে যখন ব্যাট করতে আসলেন তখন ম্যাচ প্রায় ছুটে গিয়েছে। কিন্তু অমন মহূর্তে ১২ বলে ৩১ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলে বসেন তিনি। আর তাতেই হাত ফসকে যাওয়া ম্যাচটা বরিশালের হাতের মুঠোয় চলে আসে তখন। শেষ পর্যন্ত ৪ বল আর ৩ উইকেট হাতে ম্যাচটি জিতে নেয় ফরচুন বরিশাল।

বিজয়ের দ্যুতি ছড়ানোর দিনে তাই বিজয়-কেতন উড়েছে বরিশালেরই। তবে নিজের বিজয়-কেতন বহু সময় ধরে উড়াতে চাইলে এনামুলকেও এমন উড়ন্ত ইনিংসেই নিজেকে খুঁজে নিতে হবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link