More

Social Media

Light
Dark

সাকিব কি তাহলে মিথ্যা বলেছিলেন?

যা বলেন, তার সাথে কাজের মিল নেই। তাহলে কি সাকিব আল হাসান মিথ্যা বলেছিলেন? কিংবা দিয়েছিলেন মিথ্য আশ্বাস?

১৩ আগস্ট ২০২৩, তখনও টালমাটাল বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশ্বকাপের মাসখানেক আগেই অধিনায়ক পরিবর্তনের জোরালো গুঞ্জন। সেই গুঞ্জনে পরবর্তী অধিনায়ক সাকিব আল হাসান হবেন তেমন নিশ্চয়তা এসেছে নানা মহল থেকে।

তখন অবশ্য শ্রীলঙ্কার লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ চলমান। সাকিব সেখানে গল টাইটান্সের জার্সি গায়ে মাঠে পারফরম করে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি বেশ প্রশস্ত এক হাসি মাখা চেহারা নিয়ে সাকিব বলেছিলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে ভাল করার এটাই আমাদের সবচেয়ে ভাল সুযোগ। আমরা বেশ ভাল দল এবং এখন সবাইকে দেখানোর পালা আমরা ঠিক কতটা ভাল দল।’

ads

এখানেই শেষ নয়। তখনও অধিনায়কের দায়িত্ব পাননি সাকিব। গণমাধ্যমে এসে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি ২০২৩ সালটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য অন্যতম সেরা একটা বছর হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি।’ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে কবে, এমন প্রশ্নে সাকিব বলেছিলেন, ‘২০২৩। (কারণ) আমার শেষ বিশ্বকাপ।’ ঠিক এভাবেই পুরো বছরজুড়ে সাকিব আল হাসান নিজের বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সর্বত্র। বাংলাদেশের আপামর জনতাও সেই বিশ্বাসের সুরে তাল মিলিয়ে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন বুনেছিল। তাতে আবার আগুনে ঘিঁ ঢালার মত কাজ করেছে ওয়ানডে লিগের তৃতীয় অবস্থান।

সব কিছু মিলিয়ে বিশাল এক স্বপ্নই সঙ্গী হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে দারুণভাবে হোচট খায় বাংলাদেশ। সেবার আবার সাকিব বললেন ‘রিয়েলিটি চেক’ হয়েছে দলের। টিম ম্যানেজমেন্টের থিংকট্যাকরা নতুন পরিকল্পনা করে হাজির হবে বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপে ম্যাচ শেষ পাঁচটি। বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। তাও আবার সমশক্তির আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বাকি সবগুলো ম্যাচেই বাংলাদেশকে দেখতে হয়েছে ভরাডুবি। বিশাল সব স্বপ্ন যেন এক লহমায় ধপাস করে মাটিতে পড়লো। এখন স্রেফ বাকি গর্ত খুড়ে মাটি চাপা হওয়া।

সেটা যেন অনুমিতই ছিল। তবে বেশ পাতলা এক পর্দার আড়ালেই থেকেছে সমগ্র বিষয়। একটা উদাহরণ দেওয়াই যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সাকিব আল হাসান হাজির হয়েছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে তিনি বললেন, ‘দোয়া করেন যেন কালকে(ম্যাচের দিন) টস জিতি।’

এই একটি বাক্যই আসলে প্রমাণ করে বাংলাদেশ ঠুনকো এক বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থেকেই নেমেছিল বিশ্বকাপ মিশনে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা হয়ত বিশ্বকাপের আগে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করেছিলেন ভাল কিছু করবার। তবে সেটা ছিল কেবলই মরিচীকা। মিরপুরের উইকেট জন্ম দিয়েছিল যে মরিচীকার।

সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ দলের সেই ফাইটিং স্পিরিট-টাই নেই। যেটা অন্তত আফগানিস্তান দেখাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে। ভাবুন একবার গেল বারের চ্যাম্পিয়ন দলকে নাস্তানাবুদ করেছে দলটি। সেই সাথে পাকিস্তানের মত পরাশক্তিকেও ধরাশায়ী করেছে আফগানিস্তান।

অথচ বড় দলগুলোর সামনে একেবারেই নুইয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। লড়াই অবধি করতে পারেনি কোন ম্যাচেই। এমন একটা দল বিশ্বকাপ জিতবে সেটা বরং অভাবনীয় এক উচ্চাশা। বরং এবার শঙ্কা জেগেছে। এর আগের চার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় ছিল তিনটি করে ম্যাচে। এবার সেই তিনটি জয় পাওয়ার আশাও প্রচণ্ড ঘোলাটে।

বাংলাদেশ যেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে, ডাচরা সেই দলটাকেই পরাস্ত করেছে। নবাগত এক দল তারা। গেল বিশ্বকাপ খেলার সুযোগটাই যাদের ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ অঘটনই ঘটাতে পারেনি কোন। কিন্তু স্বপ্নের বড়াই করেছে গলা উঁচু করেই।

এর জন্যে অবশ্য পুরো দায় কোনভাবেই সাকিবের নয়। দায় গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট এমনকি বাদ পড়া খেলোয়াড়রাও দায়ী অনেকাংশে। তাছাড়া এমন উচ্চাঙ্ক্ষা প্রচার করা গণমাধ্যমও দায় এড়াতে পারেনা।

সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশ আসলে ভাল ক্রিকেটটাই খেলতে জানে না। কোয়ালিটি ব্যাটারদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে বোলিং ইউনিট। আর মানসম্মত বোলারদের বিপক্ষে খাবি খায় ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট। এই দল তাই মিরপুর নামক দূর্গেই সর্বেসর্বা। বিশ্বকাপ জেতা তাদের কর্ম নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link