More

Social Media

Light
Dark

অবসর ভেঙে ফেরাদের সেরা একাদশ

আচমকা অবসর! এরপর আরও বিস্ময় জাগিয়ে আবারও ফেরার ঘোষণা— আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন রীতি মোটেই নতুন নয়।  তবে ফেরার গল্প সবার রঙিন হয় না। কারো কারো প্রত্যাবর্তন ব্যর্থতায় ধূসরও হয়।

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অবসর ভেঙ্গে ফেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে একাদশ দাঁড় করালে কেমন হয়? খেলা ৭১ সেই চেষ্টাই চালিয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক। 

  • জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)

ক্রিকেটের ‘বড়ে মিয়া’ খ্যাত নামে পরিচিতি তাঁর। টানা পাঁচ বিশ্বকাপ খেলার পর এ ব্যাটার যখন ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলার দ্বারপ্রান্তে,  ঠিক সে সময়ে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। তবে ফিরে এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টোর অনুরোধে। 

ads

১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান এসেছিল জাভেদ মিয়াঁদাদের ব্যাট থেকেই। নামের পাশে ঐ টুর্নামেন্টে যোগ করেছিলেন ৬ টা ফিফটি।

তবে পিঠের ইনজুরির কারণে ঐ বিশ্বকাপের পরই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটটা যদিও বা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে শরীর আর সায় দিচ্ছিল না। তাই ১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি। কিন্তু সে যাত্রায় বাঁধ সাধলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো।

তাঁর অনুরোধে দশ দিনের মাথায় অবসর ভেঙে ফিরে আসলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। আর এসেই গড়লেন অনন্য এক ইতিহাস। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ খেলার মধ্য দিয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ছয় বিশ্বকাপে খেলার কীর্তি গড়েন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

  • তামিম ইকবাল(বাংলাদেশ)

জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো অবসর নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরেছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবালও। চলতি বছরের ৬ জুলাই হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। 

তবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরের দিন বৈঠকের পরই আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সাবেক এ ওয়ানডে অধিনায়ক। অবসর নিয়ে আবার ক্রিকেটে ফেরার একাদশে তাই জাভেদ মিয়াঁদাদের সাথে ইনিংস শুরু করবেন তামিম ইকবাল। 

  • ভানুকা রাজাপাকশে (শ্রীলঙ্কা)

 

২০২২ এর ৫ জানুয়ারিতে হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ভানুকা রাজাপাকশে ৷ তবে দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রীর অনুরোধে তিনি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন দিন সাতেক পরেই। অবসর নিয়ে আবার মাঠে ফেরার একাদশে তিনি খেলবেন তিন নম্বরে।

  • কেভিন পিটারসেন(ইংল্যান্ড)

টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগ বাড়াতে ২০১১ সালে সীমিত পরিসরের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেন। কিন্তু বেশিদিন নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেননি তিনি। কিছুদিন পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন পিটারসেন। তবে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে বেশিদিন খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ২০১৪ সালে সবশেষ তাঁকে ইংল্যান্ডের জার্সিতে দেখা গিয়েছিল।

  • শহীদ আফ্রিদি (অধিনায়ক)

শহীদ আফ্রিদি, নামটার সাথে ‘অবসর’ নামক নাটক যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আন্তর্জাতিকক্যারিয়ারের সব মিলিয়ে ৫ বার অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। আবার ফিরেও এসেছেন।

২০০৬ সালে প্রথম বারের মতো টেস্টকে বিদায় বলেন আফ্রিদি। সীমতি ওভারের ক্রিকেটে আরো মনোযোগী হতে সে বছর ১২ এপ্রিল টেস্ট থেকে বিদায় নেন তিনি। তবে সপ্তাহ দুয়েক পরেই সে সিদ্ধান্ত বদলে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি।

এরপর ২০১১ সালের মে মাসে আবারও একই ঘটনা। সেবার বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারার পরে তাকে ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। কিছুটা অভিমানেই তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন আফ্রিদি। কিন্তু সে বিদায়ের সময়কাল পাঁচ মাসও পেরোয়নি। আবারো ফিরে আসেন তিনি। 

এভাবে ২০১২, ২০১৬ আর ২০১৭, আরো ৩ বার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন আফ্রিদি। তবে ২০১৭ এরটা বাদ দিয়ে বাকি দুটি অবসরের পর দিয়েছিলেন ফেরার ঘোষণা। এত অবসর নাটকের নায়ক তাই শুধু এই একাদশেই থাকছেন, তিনি থাকছেন এই দলের অধিনায়ক হিসেবে। 

  • ব্রেন্ডন টেলর (উইকেটরক্ষক)

 

 

২০১৫ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। মূলত কাউন্টি ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তবে ২ বছর বাদে ২০১৭ সালে আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন টেলর। অবসর নিয়ে আবারো ক্রিকেটে ফেরাদের একাদশে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব থাকছে এ ক্রিকেটারের কাঁধে।

  • মঈন আলী(ইংল্যান্ড)

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মঈন আলী। তবে এবারের এশেজে তিনি অধিনায়ক বেন স্টোকসের অনুরোধে ফিরে আসেন। যদিও এই এশেজ শেষেই আবার তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। 

  • ডোয়াইন ব্রাভো(ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিদায় জানিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো। তবে ২ বছর বাদে ২০২০ সালে আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি। অবসর ভেঙ্গে ফেরাদের একাদশে থাকছেন তিনিও। 

  • ইমরান খান(পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলটার অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খান। তবে ঐ বিশ্বকাপের পাঁচ বছর আগে ১৯৮৭ সালে অবসর নিয়েছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এ নেতা। মূলত ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে বিশ্বকাপের পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ইমরান।

তবে ইমরানের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তানের জনগণ। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জেনারেল জিয়াউল হক। ইমরানের অবসর ঘোষণার পরই তিনি তাঁকে আবারো বাইশ গজে ফিরতে অনুরোধ করেন।

দেশ প্রধানের সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি ইমরান। তাই ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে অবসর ভেঙে আবারো মাঠে ফেরেন তিনি। এরপর তো ইতিহাস। আগের বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ভুলে ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান শিরোপা জেতে ইমরান খানের নেতৃত্বে।

  • জাভাগাল শ্রীনাথ(ভারত)

২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ভারতীয় পেসার জাভাগাল শ্রীনাথ। কিন্তু তাঁকে সেই ঘোষণায় আটকে দেন তখনকার ভারতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। সৌরভের অনুরোধেই বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যান শ্রীনাথ। 

  • জেরোমি টেলর(ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

 

অবসর ভেঙ্গে ফেরাদের একাদশে আরেকজন হচ্ছেন জেরোমি টেলর। ক্যারিবিয়ান এ পেসার ২০১৬ সালে অবসর নিলেও এক বছর বাদে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তবে এর পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশিদিন নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারেননি এ পেসার।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link