More

Social Media

Light
Dark

ব্রিসবেন-বঙ্গসন্তান ও গ্রেগ চ্যাপেল

অস্ট্রেলিয়াতে সাধারণত টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়ে থাকে ছয়’টা শহরে। মেলবোর্ন, সিডনি, অ্যাডিলেড, ব্রিসবেন, পার্থ ও হোবার্ট। এর বাদেও কিছু টেস্ট ভেন্যু আছে – তবে, সেসব আন্তর্জাতিক ময়দানে নিয়মিত নয়। এর মধ্যে পার্থের ওয়াকার পরিবর্তে গত দু বছর নতুন মাঠে খেলা হচ্ছে আর কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত ভারত হোবার্টের স্টেডিয়ামে একটাও টেস্ট ম্যাচ খেলেনি।

বাকি যে পাঁচটা ভেন্যুতে ভারত টেস্ট ম্যাচ খেলছে বা খেলেছে তার মধ্যে চিরকালের সবথেকে গতিময় উইকেট অবশ্যই পার্থের ওয়াকা এবং ব্রিসবেনের গ্যাবা। যে কারণে গত ৭৩ বছরে ওয়াকাতে শতরান করা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নাম সুনীল গাভাস্কার, মহিন্দর অমরনাথ এবং শচীন টেন্ডুলকার আর ব্রিসবেনে শতরান করতে পেরেছেন এম এল জয়সীমা, সুনীল গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলি এবং মুরালি বিজয়। এই ছোট্ট পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে যে এই দুই মাঠে রান করা কত কঠিন। আর এখানেই সম্ভবত লুকিয়ে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের এক বিরাট রহস্য।

২০০৩। বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পরে সম্ভবত: বাংলাদেশে একটা টুর্নামেন্ট ছিল ভারতীয় দলের। তারপরে সোজা বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়া সফর। এই লম্বা ছুটির ফাঁকে ভারতের তৎকালীন অধিনায়ক পাড়ি দিলেন সুদূর সিডনিতে নিজের খরচায় এবং ব্যবস্থাপনায়।

ads

উদ্দেশ্য গ্রেগ চ্যাপেলের সাহচর্যে এসে আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে নিজের ব্যাটিংয়ের প্রয়োজনীয় সামান্য পরিবর্তন এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরাটাকার এবং বিভিন্ন আকৃতির মাঠে সঠিক ভাবে ফিল্ডিং সাজানোর প্রয়োজনীয় টিপস। ফলাফল ইতিহাসের পাতায়।

অধিনায়কত্বের কথা ছেড়েই দিলাম কিন্তু প্রথম টেস্টে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চিন মিউজিকের প্রত্যুত্তরে করা ১৪৪ যে শুধু সৌরভের জীবনে অন্যতম সেরা টেস্ট ইনিংস নয়, এক সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেস্ট ইনিংস যেটা যে কোন ব্যাটসম্যান খেললে গর্বিত হতেন; চরম সৌরভ বিরোধীও সেটা মানবেন।

আর সম্ভবত এখান থেকেই গ্রেগ চ্যাপেলের প্রতি থাকা শ্রদ্ধা ভালবাসা আরও প্রগাঢ় হলো। তাই রাইট সাহেব কোচের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরে সৌরভ উঠে পড়ে লাগলেন গ্রেগকে কোচ করে আনতে, হয়তো খানিকটা ঋণ শোধের বাসনা থেকেই। হয়তো বা সিডনির ওই ১৫ টা দিন এবং তাঁর ফলাফল তাঁকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে গ্রেগের হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতি সাধন সম্ভব। তাই তিনি রাহুল দ্রাবিড়ের নিষেধ সত্ত্বে তাঁকে কোচ করে নিয়ে আসলেন। বাকিটা তো ইতিহাস। ইতিহাস না বলে ইতিহাসের কাল অধ্যায় বলা ভাল।

ক্যারিয়ারের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ সময় যেভাবে ফিনিক্সের মতো বারবার ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে এসেছেন তাতে করে হয়তো গ্রেগ চ্যাপেলের ওই স্পেশাল ক্লাস ছাড়াও ব্রিসবেনের শতরান আসতো। কিন্তু যার থাকার কথা ছিল অনুঘটক হিসেবে তিনি বিক্রিয়ায় সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছাড়লেন।

আর ইতিহাস এটাই মনে রাখলো যে প্রিয় বঙ্গসন্তানকে ব্রিসবেন যেমন দু হাত ভরে দিয়েছিল, তেমনি কেড়েও নিয়েছিল। বলে না দিলেও চলে গ্রেগের জমানাটা ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’র জন্য সুখকর ছিল না।

আর একটা ব্যাপার প্রকাশ্য দিবালোকের মত সত্য যে – গ্রেগ না আসলে সৌরভের ক্যারিয়ার আরো দীর্ঘায়িত ও সাফল্যমণ্ডিত হত। আর ভারতীয় ক্রিকেটের মুকুটেও গ্রেগ আসাতে নতুন কোনো পালক তো যোগ হয়নি, বরং লেগেছে কালিমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link