More

Social Media

Light
Dark

সৌম্যকে চোখে চোখে রাখছেন হাতুরু

চান্দিকা হাতুরুসিংহের থ্রোয়ার থেকে ছোঁড়া বল। সজোরে সৌম্যের পুল শট। হাতুরু এবার ফুলার লেন্থে বল ছুঁড়লেন লেগ স্ট্যাম্প বরাবর। সৌম্যের সাবলীল ফ্লিক। আবারও সৌমের ব্যাটে মিষ্টি আওয়াজ। এবার নেট বোলারের বিপক্ষে আরও এক আত্মবিশ্বাসী পুল শট। আরও এক নিয়ন্ত্রিত ফ্লিক, শরিফুলের মাথায় হাত।

এসবই তো সৌম্যর প্রতিচ্ছবি। এই শটগুলোই তো সৌম্যের কাছ থেকে দেখতে মুখিয়ে থাকে সকলে। সেই তালিকা থেকে বাদ যান না টাইগারদের হেড কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে।

সৌম্য সরকার শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২১ সালের ২৬ মার্চ। ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনি। তার ব্যাট থেকে এসেছিল ছয় বলে কেবল ১ রান। স্বাভাবিকভাবেই সে ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ।

ads

এরপর থেকেই রীতিমত নির্বাসনে রয়েছেন সৌম্য সরকার। নিজেকে খোঁজার বড্ড চেষ্টা করেও যেন কোন উপায়ন্তর মেলেনি। তিনি ক্রমশ যেন অন্ধকার এক গলি ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের একেবারে শেষবিন্দুতে।

ঘরোয়া ক্রিকেটেও সৌম্য দেখেছেন প্রবল রান খরা। লাল বল কিংবা সাদা কোথাও সৌম্য নিজেকে প্রমাণ করতে পারছিলেন না। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু বিষয় ব্যাটে বলে ঠিকঠাক সংযোগই ঘটাতে পারছিলেন না তিনি। আফসোসের অতল সমুদ্রে হাল ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম।

তবে সেই বিশাল সমুদ্রের মাঝে যেন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের হেডকোচ চাণ্ডিকা হাতুরুসিংহে। বেজায় প্রিয় শিষ্য তিনি লঙ্কান এই কোচের। তাইতো জাতীয় দলের রাডার থেকে ক্রমশ সরে যাওয়া সৌম্য সরকারকে আবারও জাতীয় দলের আশেপাশে নিয়ে আসা হয়েছে। জোর দাবি হেড কোচ নিজে থেকেই চেয়েছেন তাকে।

এমন হওয়াও অস্বাভাবিক না। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে গুটিকতক ব্যাটারদের সক্ষমতা রয়েছে ক্লিন হিট করবার। সৌম্য রয়েছেন সেই তালিকার উপরের সারিতেই। ঠিক সেকারণেই ডেকে পাঠানো সৌম্যকে। অন্তত নেট অনুশীলনে খেলা সৌম্যর শটগুলো সেই বার্তাই আরও একবার দিয়ে দেয়।

জাতীয় দলের সাথে অনুশীলনে এখন নিয়মিত মুখ সৌম্য সরকার। তাকে রাখা হয়েছে ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলেও। সেটাও নিশ্চয়ই হাতুরুসিংহের আবদারেই। সেটা আর বোঝার বাকি থাকে না। কোচ যেন খুব করে চাইছেন সৌম্যকে রানে ফেরাতে।

সেটার একটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বাংলাদেশের অনুশীলনে। সৌম্য সরকার ব্যাট করেছেন লম্বা সময় ধরেই। প্রতিটা মুহূর্ত যেন কড়া নজরে তাকে চোখে চোখে রেখেছেন হাতুরুসিংহে। সময়ে সময়ে তালিম দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ভুলত্রুটিগুলোর সমাধান বাতলে দিয়েছেন সৌম্যকে।

সৌম্য অবশ্য বল হাতে এদিন অনুশীলন শুরু করেন। তিনি পেসারদের নেটে বল করেছেন, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামদের সাথে। পার্টটাইম মিডিয়াম পেসার হিসেবে তিনি বেশ কার্যকর হতে পারেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। বিশ্বকাপে যদিও স্পোর্টিং উইকেটেই খেলা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে স্লো উইকেটে সৌম্য হতে পারেন তুরুপের তাস।

সেটা হাতুরুসিংহের অজানা নয়। তিনি নিশ্চয়ই প্রিয় শিষ্যের খোঁজ রেখেছেন পুরোটা সময়জুড়েই। তবে চাইলেই সৌম্যকে বিশ্বকাপের দলে নিয়ে নেওয়া যায় না। নিজেকে প্রমাণের বিকল্প নেই সৌম্যর সামনে। সে প্রমাণটা যেন ঠিকঠাক কর‍তে পারেন সৌম্য সেই তদারকিই করেছেন হাতুরু। কাছে ডেকে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। টেকনিকে পরিবর্তন আনার টোটকা দিয়েছেন।

হাতুরুর সৌম্যকে দলে চাওয়াটা খুব একটা অবান্তর নয়। বাংলাদেশ সাত নম্বর পজিশনের জন্যে একজন ব্যাটার খুঁজছে হন্যে হয়ে। সেই অনুসন্ধানের ফলাফল হিসেবে সৌম্য হতে পারেন কার্যকর সমাধান।

তাছাড়া সৌম্য দলে থাকা মানেই ব্যাকআপ ওপেনারের দুশ্চিন্তাও ঘুচে যাওয়া। এসব কিছু বিবেচনা করেই হয়ত জাতীয় দলের অনুশীলনে হাজির করানো হয়েছে সৌম্যকে।

তবে শুধু সৌম্য নয়, সাত নম্বর পজিশনের জন্যে অলরাউন্ডার হিসেবে পরখ করে দেখা হচ্ছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও শেখ মেহেদীকেও। এখন দেখার পালা কে শেষ অবধি ঢুকে যাবেন বিশ্বকাপ দলে।

তবে একথা নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়, আসন্ন ইমার্জিং এশিয়া কাপে সৌম্যকে রানে ফিরতে হবে যেকোন মূল্যে। নতুবা তাকে দলে যুক্ত করবার পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে হেড কোচ হাতুরুসিংহের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link