More

Social Media

Light
Dark

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মৃত্যু!

যেন এক পড়ন্ত বেলায় দাঁড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দৌরাত্ম্য, আর তাতে অর্থের ঝনঝনানি, একই সাথে জমকালো সব আয়োজন— সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গতি পথটা বদলে গিয়েছে বেশ কিছু বছর আগেই।

টেস্ট ক্রিকেটে যদিও কিছুটা প্রাণ ফিরেছে, কিন্তু ওয়ানডে ফরম্যাট মৃতপ্রায়। এ বছরেই ভারতের মাটিতে বসছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। কিন্তু বিশ্বকাপের বছরে এসেও ওয়ানডে ক্রিকেটের তেমন আধিপত্য নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলোয়াড় তো বটেই, দর্শকদেরও যেন রীতিমত দম ফেলার উপায় নেই। একের পর এক ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চলছেই।

অবশ্য এরই মধ্যে অনেক দেশের ক্রিকেটার জাতীয় দলের সাথে চুক্তি বাতিল করে পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন এই ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট গুলোতেই। সময়ের ব্যবধানে জাতীয় দলের ঊর্ধ্বেও যেন চলে যাচ্ছে ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেট।

ads

ফুটবলের মতো তাই ক্রিকেটও ক্লাব নির্ভর হওয়ার পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেনও ঠিক এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, অদূর ভবিষ্যতে অধিকাংশ ক্রিকেটারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান যা অবস্থা, তা এক প্রকার মৃতপ্রায়ই বটে। খুব শীঘ্রই ক্রিকেট ক্লাবভিত্তিক খেলা হয়ে যাবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে কেপির এমন আশঙ্কা অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান হালচালেরই ইঙ্গিত দেয়। আইসিসি’র সর্বশেষ ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) প্রতিটি দলের ক্ষেত্রেই ওয়ানডে সিরিজ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার জন্য একটা দলকে প্রায় ৩ বছরে সুপার লিগের অন্তর্ভূক্ত ২৪ টি ম্যাচ খেলতে হয়। অনেক দল আবার সেই কোটাটাও পূরণ করেনি।

আর শেষ কয়েক বছরে, দলগুলোর ওয়ানডে খেলার পরিসংখ্যান বলছে, সুপার লিগের বাইরে দ্বি-পক্ষীয় সিরিজও হয়েছে কম।  এ ছাড়া সুপার লিগের বাইরের ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে এখন অনেক ক্রিকেটারেরই গড়িমসির খবর প্রায়ই শোনা যায়।

অনেকেই বাইরের দেশের কোনো টুর্নামেন্ট খেলার জন্য, সুপার লিগ বহির্ভূত সিরিজকে অগুরুত্বপূর্ণ ভেবে ঐ সিরিজ থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিচ্ছেন। ফলত, আশঙ্কাজনক হারে আকর্ষণ হারাচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেট।

অতি সাম্প্রতিক কালে ইংল্যান্ডের পেসার জোফরা আর্চারকে পূর্ণ মেয়াদে পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তবে সে ক্ষেত্রে এ পেসারকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে। আর্চার বাদেও আরো ৫ ইংলিশ ক্রিকেটারকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে আইপিএলের দলগুলো।

এ ছাড়া এই কিছুদিন আগে, যুক্তরাষ্ট্রে মেজর টি-টোয়েন্টি কাপ খেলার জন্য জেসন রয়ের ইসিবি’র চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার গুঞ্জন উঠেছিল। তাছাড়া, ইংল্যান্ডের পেসার রিস টপলিও বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন।

সাম্প্রতিককালে ইংলিশ গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘শৈশবে কেউ আমাকে লক্ষ্যের কথা জিজ্ঞেস করলে, আমি বলতাম, ইংল্যান্ডের হয়ে ১০০ টা টেস্ট খেলা। তবে এখন ঐ একই কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি বলব, আমার ইচ্ছা আইপিএল খেলা।’

এই ১০ বছর আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছিল ক্রিকেটের মূল মানদণ্ড। উঠতি ক্রিকেটারদের একমাত্র লক্ষ্যই থাকতো, দেশের হয়ে খেলা। তবে শেষ কয়েক বছরে সেই ধ্যাণ ধারণা পাল্টে  গিয়েছে। এখনকার ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের হয়ে খেললেও, সিংহভাগেরই প্রাধান্যে থাকছে নিত্যদিনে গজিয়ে ওঠা সব ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট।

হ্যাঁ। দিনশেষে, অতিরিক্ত অর্থযোগই ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিমুখী হওয়ার প্রধান কারণ। তবে যেভাবে ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রভাব ফুরলো বলে। এখন থেকেই, ক্রিকেটাররা যেভাবে জাতীয় দলের সিরিজ অগ্রাহ্য করছেন, তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অস্তগামীই হচ্ছে।

কে জানে, এক দশক পর বাদে, দ্বিপক্ষীয় সিরিজের চলটাই হয়তো ‘নেই’ হয়ে যাবে। ফুটবলের মতো হয়তো ক্রিকেটটাও চলবে ক্লাব ভিত্তিতে। সেখানে ক্লাবের সাথে চুক্তি থাকবে ক্রিকেটারের। ফুটবলের মতো হয়তো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে তখন অনাপত্তি পত্র লাগবে ক্লাবের!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link