More

Social Media

Light
Dark

লেগস্পিন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কাণ্ডারি

এবারের মৌসুমেই ডোয়াইন ব্রাভোকে টপকে আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন যুজবেন্দ্র চাহাল। বাকিদের চাইতে কম ম্যাচ খেলেও ১৮৭ উইকেট নিয়ে সবার উপর আছেন এই লেগস্পিনার। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতে আইপিএলে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এই তারকাকে।

চাহালের আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। কিন্তু শুরুর তিন বছরে মোটেই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। অথচ ২০১১ মৌসুমে মুম্বাইকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল এই তরুণের। তা সত্ত্বেও নিজের প্রথম আইপিএল ম্যাচ খেলতে চাহালকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০১৩ সাল পর্যন্ত।

এরপরের দশ বছরে সময় যত গড়িয়েছে, সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন চাহাল। মাত্র ১৪২  ম্যাচেই ১৮৭ উইকেট শিকার করেন এই তারকা। পিযুষ চাওলা, অমিত মিশ্র, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, সুনীল নারাইন, হরভজন সিং, রবীন্দ্র জাদেজারা তাঁর চাইতে বেশি ম্যাচ খেললেও উইকেট সংখ্যায় পিছিয়ে আছেন।

ads

একশোর বেশি উইকেট শিকার করা স্পিনারদের মাঝে চাহালের স্ট্রাইকরেটই সবচেয়ে ভালো। উইকেট প্রতি মাত্র ১৭ বল করতে হয়েছে এই তারকাকে। তাঁরই সতীর্থ অশ্বিনকে প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করতে হয়েছে ২৬ বল। যদিও চাহালের চাইলে অশ্বিনের ইকোনমি খানিকটা ভালো। তবে টি-টোয়েটিতে রান আটকানোর চাইতে উইকেটের গুরুত্বটাই বেশি।

অশ্বিনের হাতে ক্যারম বলের মতো অস্ত্র থাকলেও তিনি মোটেই রহস্য স্পিনার নন। বরং লাইন লেন্থ বজাইয় রেখে বাউন্ডারি আটকাতেই তাঁর যত মনোযোগ। অন্যদিকে, চাহালের হাতে বৈচিত্র্য কম থাকলেও আক্রমণাত্নক বোলিং করতেই বেশি পছন্দ করেন। রশিদের মতো ৯০ কিমি গতির গতি নয়, বরং ব্যাটারদের প্রলুব্ধ করতেন শট খেলতে।

বাকি লেগস্পিনারদের চাইতে খানিকটা আস্তে বল করেন। ৭৫ কিমি থেকে ৯০ কিমির মাঝেই গতি উঠানামা করে চাহালের। কুইকারের চাইতে খানিকটা ধীরগতির ওয়াইডার লেগব্রেকেই তাঁর ভরসা। বেশিরভাগ সময়েই স্ট্যাম্পের কাছাকাছি পিচ করিয়ে ওয়াইড লাইনের দিকে টার্ন করান, ফলে ব্যাটাররা কোনোভাবেই লেগসাইডে শট খেলার সুযোগ পান না। সেই কারণেই ডানহাতি ব্যাটাদের বিপক্ষে চাহালের রেকর্ড বেশ ভালো।

কিন্তু এতে অসুবিধাও আছে বেশ। চাহাল যেহেতু সব সময় উইকেটের পেছনে ছোটেন, সেই কারণেই বাজে দিনে তাঁর ছক্কা হজমের সম্ভাবনাও বেশি। কেবলমাত্র পিযুষ চাওলাই তাঁর চাইতে বেশি ছক্কা হজম করেছেন। এছাড়া বাকি লেগস্পিনাররা যেখানে মাঝের ওভারেই নিজেদের বোলিং কোটা শেষ করে ফেলেন, সেখানে চাহাল ডেথ ওভারেও বল করে থাকেন।

২০২২ এবং ২০২৩ আইপিএল মৌসুম মিলিয়ে স্পিনারদের মাঝে সবচেয়ে বেশি বল এবং উইকেট শিকারের রেকর্ড চাহালের দখলেই। ধরুন আপনার দল বড় সংগ্রহ ডিফেন্ড করতে নেমে বেশ বেকায়দায় আচ্ছে, প্রতিপক্ষের শেষ চার ওভারে দরকার মোটে ৪৫ রান। এই সময়ে চাহালই হতে পারে আপনার সেরা অপশন। ব্যাটারের হিটিং জোনের বাইরে গতির হেরফের ঘটিয়ে চাহাল বাধ্য করেন ভুল শট খেলতে।

আইপিএলের গত দুই আসর মিলিয়ে চাহাল সাতবার ওভারে দুই বা ততোধিক উইকেট শিকার করেছেন। এই তালিকায় তাঁর কাছাকাছি আছেন কেবলমাত্র কুলদ্বীপ যাদব, তিনি ছয় বার এই কৃতিত্ব গড়েন। দুজনেই পুরোপুরি একই ঘরানার না হলেও বলের গতির হেরফের করতে বেশি পছন্দ করেন।

অথচ ২০২১ মৌসুমী বেশ বাজে এক আইপিএল কাটিয়েছিলেন চাহাল। প্রথম সাত ম্যাচে মাত্র চার উইকেট শিকার করার পাশাপাশি বাদ পড়েছিলেন জাতীয় দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকেও। তাঁকে বাদ দিয়ে বরুণ চক্রবর্তী এবং রাহুল চাহারকে দলে নেবার কারণ ছিল বাকি দুজনেই স্ট্যাম্প বরাবর কুইকার ডেলিভারিতে সিদ্ধহস্ত।

সেদিনের ব্যর্থতা চাহালকে বোলার হিসেবে আরো পরিণত করে তুলেছে। আরব আমিরাতের সেই ম্যাচের পর আইপিএলে তাঁর চাইতে বেশি উইকেট কেউ শিকার করতে পারেননি। বোলিংয়ে নতুন কিছু বৈচিত্র্য আনলেও এখনো নিজের পুরনো স্টাইলে বল করেন চাহাল। বিলুপ্ত প্রায় লেগস্পিনের শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই শিল্পী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link