More

Social Media

Light
Dark

টানা দ্বিতীয় দফা ফাইনালে গুজরাট টাইটান্স!

ফাইনালে ওঠার ম্যাচে গুজরাটের কাছে মুম্বাইয়ের ৬২ রানের পরাজয়! ম্যাচের এমন ফল দেখে কেইবা বলবে, ম্যাচ শেষ হওয়ার ৫ ওভার আগেও ম্যাচজয়ের কক্ষপথে ছিল মুম্বাই। কিন্তু মোহিত শর্মার এক স্পেলেই সব শেষ! ৭ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে মুম্বাইয়ের ম্যাচের গতিপথ রুদ্ধ হয়ে যায় তখনই।

অবশ্য ম্যাচের শুরুটা ছিল শুভমান গিলময়ই। আগ্রাসী এ ব্যাটারের আক্রমণাত্মক সেঞ্চুরিতে ২৩৩ রানের রানপাহাড় গড়ে গুজরাট টাইটান্স। আর সেই রানপাহাড় শেষ পর্যন্ত টপকাতে পারেনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। কিছুটা আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৬২ রানের পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে মুম্বাইকে।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে এ দিন টসভাগ্য অবশ্য মুম্বাইয়ের পক্ষেই ছিল। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কারণটা সহজবোধ্যই, বড় রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এই আসরেই গোটা পাঁচেক ম্যাচ জিতেছে দলটা।

ads

তবে টসভাগ্যের পর মুম্বাইয়ের বোলারদের ভাগ্য আর সুপ্রসন্ন হয়নি। দু’দিন আগেই এলিমিনেটর ম্যাচে লখনৌকে মাত্র ১০১ রানে রুখে দেওয়া মুম্বাইয়ের বোলিং লাইনআপ এ দিন মুদ্রার ওপিঠের সাক্ষী হয়। এক শুভমান গিল ঝড়েই রীতিমত বিধ্বস্ত হয় গোটা দলটা।

শুরু থেকেই ঋদ্ধিমান সাহার সাথে জুটি বেঁধে মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর চড়াও হতে শুরু করেন এ ব্যাটার। অবশ্য পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরই এ জুটি ভেঙ্গে যায় ঋদ্ধিমান সাহার বিদায়ে। পিয়ুষ চাওলার বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে এ ব্যাটার ফিরে যান ব্যক্তিগত ১৮ রানে।

মুম্বাইয়ের বোলিং ইনিংসে ঐ যা একটু সাফল্যের মুহূর্ত। এরপর গোটা ইনিংসেই রীতিমত ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছেন শুভমান গিল। সে যাত্রায় ৩২ বলে পেয়ে যান ফিফটির দেখা। আর এর পরেই আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন এ ব্যাটার। পরের ১৭ বলে যোগ করেন আরো পঞ্চাশ রান। এতেই মাত্র ৪৯ বলে পৌঁছে যান ব্যক্তিগত শতকে। এ নিয়ে এবারের আইপিএলে তৃতীয় সেঞ্চুরির ছোঁয়া পান গিল।

তার আগেই অবশ্য অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে পিছনে ফেলেন ৭৩০ রান করা ফাফ ডু প্লেসিকে। সেঞ্চুরির পর যথারীতি ছক্কার মারার দিকেই ঝুঁকেছিলেন গিল। আর তাতে নাস্তানাবুদ হয়ে যান আকাশ মাধওয়াল থেকে ক্রিস জর্ডান। শেষ পর্যন্ত ৬০ বলে ১২৯ রানের ইনিংস খেলে অবশ্য ক্যামেরুন গ্রিনের হাতে ধরা দিয়েছিলেন গিল। তবে ততক্ষণে পাহাড়সম সংগ্রহের পথে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যায় গুজরাট টাইটান্স।

গিলের এমন তাণ্ডবে ১৭ ওভারের মাঝেই ২০০ রানের সংগ্রহকে টপকে ফেলে গুজরাট। শুভমান গিলকে এ দিন উইকেটে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন সাঁই সুদর্শন। রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগে বাঁহাতি এ ব্যাটার খেলেন ২৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস।

গুজরাটের ইনিংসে শেষ ঝড়টা এসেছিল অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে। খেলেন ১৩ বলে ২৮ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। আর এতেই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ২৩৩ রানের সংগ্রহ পায় গুজরাট টাইটান্স। যা আইপিএল প্লে-অফের ইতিহাসে ২০১৪ আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের করা ২২৬ রানের সংগ্রহের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়।

একে তো জিততে হলে মুম্বাইকে টপকাতে হবে রেকর্ড সংগ্রহ। তার উপরে উইকেট কিপিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে গিয়েছেন ইশান কিষাণ। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সামনে তখন অসম চাপ সামলে পাহাড়সম লক্ষ্য টপকানোর চ্যালেঞ্জ। আর এমন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই নেহাল ওয়াধেরা ও রোহিত শর্মার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তাঁরা।

তবে মোহাম্মদ শামির জোড়া আঘাতের পরও লক্ষ্যের পথেই ছুটেছিল মুম্বাই। গুজরাটের শুভমান গিল তাণ্ডবের বিপরীতে এ দিন মুম্বাইয়ের হয়ে ইনিংসের শুরুতে ঝড় তোলেন তিলক ভার্মা। বাঁহাতি এ ব্যাটারের চার ছক্কার ফুলঝুরিতে ম্যাচ জেতার কক্ষপতেই থাকে মুম্বাই। পাওয়ার প্লে-র ছয় ওভারেই আসে ৭২ রান।

তবে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর নিজের ইনিংস দীর্ঘায়িত করতে পারেননি তিলক ভার্মা। ১৪ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে রশিদ খানের বলে বোল্ড সাজঘরে ফিরে যান এ ব্যাটার। তারপরও ক্যামেরুন গ্রিনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান সুরিয়াকুমার যাদব।

তবে দুজনের জুটিতে ৫২ রান যোগ হওয়ার পর জশুয়া লিটলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ক্যামেরুন গ্রিন। ক্রমাগত উইকেট হারিয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের তখন চাপ বাড়ছিল ঠিকই। তবে সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটিংয়ে তখনও মুম্বাইয়ের ম্যাচ জয়ের আশা ছুটে যায়নি। আস্কিং রেট বাড়ছিল। তবে সেই গতির সাথে তাল মিলিয়ে সুরিয়াকুমার যাদবও ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন। পৌঁছে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকেও।

তবে ইনিংসের ১৫ তম ওভারে এসে হঠাতই ছন্দপতন।  মোহিত শর্মার করা ঐ ওভারে দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারলেও পরের বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান সুরিয়াকুমার যাদব। ৩৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলা এ ব্যাটারের বিদায়ের পরই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তার উপর ঐ ওভারেই সুরিয়ার পর বিষ্ণু বিনোদকেও ফেরান মোহিত শর্মা।

মোহিত শর্মার ঐ জোড়া আঘাতের পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। উল্টো পরের ওভারে রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে টিম ডেভিড ফিরে গেলে ম্যাচে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় গুজরাট টাইটান্স। ৭ উইকেট হারানো মুম্বাইয়ের সামনে ২৭ বলে ৭৬ রানের সমীকরণ তখন এক প্রকার অসম্ভবই বটে।

মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এরপরে আর অভাবনীয় কিছু করে দেখাতে পারেনি। ১৮.২ ওভারেই ১৭১ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে ১০ রান খরচায় একাই ৫ উইকেট নেন মোহিত শর্মা।

মুম্বাইয়ের বিপক্ষে পাওয়া ৬২ রানের এ জয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো ফাইনালের মঞ্চে পা রাখলো গুজরাট টাইটান্স। আগামী ২৮ মে নিজেদের মাটিতে ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link