More

Social Media

Light
Dark

হার্দিক গুজরাটের নিউক্লিয়াস

লখনৌ সুপারজায়ান্টসের তখন সহজ জয়ের দিকে চোখ। ৯ উইকেট হাতে আছে। তার উপর ৪৫ বলে ৩৯ রানের সহজ সমীকরণ। এমতাবস্থায় ম্যাচ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে বাইশ গজের ক্রিকেটটা যে ঘটন-অঘটনের বৃত্তেই রোমাঞ্চবন্দী হয়। তাই লখনৌর ছুটে চলা সেই সহজ জয়ের পথে কিছুটা বৈপরীত্য ঘটানোর দিকে চেয়ে রইলেন গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।

সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করলেন। আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ম্যাচ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই ম্যাচের ফলটাও কারোর ঘরে স্থায়িত্ব পায়নি। দলকে চাঙ্গা করতে অধিনায়কের এমন ভূমিকাই তো প্রত্যাশিত। হার্দিক পান্ডিয়ার সেই প্রত্যাশিত কাজটাই নিজে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে করেছিলেন। তাঁর ঐ বার্তার মধ্যে একটা জয়ের ক্ষুধা ছিল, ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করার একটা তাড়না ছিল।

আর এমন তাড়নাতেই অবিশ্বাস্যভাবে সে ম্যাচটি জিতে যায় গুজরাট টাইটান্স। পরবর্তীতে গুজরাট টাইটান্সের বোলাদের আগ্রাসী বোলিংয়ে তীরে এসে তরী ডুবে যায় লখনৌর। ৬ রানের জয় পায় হার্দিকের গুজরাট টাইটান্স।

ads

অবশ্য হার্দিক পান্ডিয়ার কাপ্তানিতে গুজরাট টাইটান্সের এমন উড়ন্ত যাত্রার ধারাবাহিকতা সেই গত মৌসুম থেকেই। নতুন ফ্রাঞ্চাইজি দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গুজরাট। আর আইপিএল মঞ্চে এসেই প্রথম আসরে চমক। প্রথম বারের মতো আইপিএল খেলতে নেমেই গুজরাটের পাশে চ্যাম্পিয়ন তকমা!

গুজরাটের সেই সাফল্যের নেপথ্যে অনেকেই ছিলেন। তবে রূঢ় অধিনায়ক হিসেবে যে হার্দিক পান্ডিয়াকে প্রথমে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল, সেই হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বেই প্রথম শিরোপা জেতে গুজরাট।

শিরোপা আবার যেনতেন ভাবে নয়, পূর্ণ আধিপত্যে, দুর্দান্ত আগ্রাসনে। সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত। এরপর কোয়ালিফায়ার বাঁধা টপকে ফাইনালে জয়। রীতিমত এক অপ্রতিরোধ্য দল হয়েই শিরোপা জিতে নেয় গুজরাট। আর সেই শিরোপা জয়ের ভূমিকায় সবার আগে অগ্রগণ্য হিসেবে উচ্চারিত হয় হার্দিক পান্ডিয়ার নাম।

তবে হার্দিক পান্ডিয়া কৃতিত্ব দিলেন সবাইকে। কারণ পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দলটার সব ক্রিকেটার যে নিংড়ে দিয়েছেন। রশিদ খানের স্পিন বিষ, রাহুল তেওয়াতিয়ার ফিনিশিং, দলের ক্রান্তিলগ্নে ডেভিড মিলারের ঢাল হয়ে দাঁড়ানো। দলটার দুর্বলতার ফাঁকফোকর যেন বের করাই দায়। হার্দিক পান্ডিয়া তাই অকপটে সবার কৃতিত্ব দিতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি।

প্রথম বারে এসে চমক। দ্বিতীয়বারে সেই ধারাবাহিকতা থাকবে? ২ বছর বয়সী নতুন দল। তাই প্রমাণ করার প্রশ্নটাও বারবার ঘুরেফিরে আসে। তার উপর ভারত বর্ষে হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা। এর মধ্যে রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। তাই সাফল্যের বিপরীতে অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যর্থতার দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকার মতো মানুষও কম হলো না।

অধিনায়ক হিসেবে গত বারের আইপিএল শিরোপা যে ফ্লুক, তা প্রমাণে যখন কিছু মানুষ এবারের আইপিএলের শুরু থেকেই ব্যস্ত। সেই সব মানুষের ব্যস্ততাকে আবারো নিরর্থক প্রমাণ করলেন হার্দিক পান্ডিয়া। আগের বারের মতোই এবারও তাল দৌর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে চলল তাঁর দল। সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত হলো গুজরাটের। ঠিক আগের বারের মতোই।

আইপিএল সংস্করণ পাল্টেছে। কিন্তু অন্যান্য দল গুলোর চেয়ে নিজেদের একধাপ এগিয়ে রাখার অভ্যাসটা ঠিকই ধরে রেখেছে গুজরাট। রাউন্ড রবিন লিগ শেষে ঐ এক নম্বর জায়গাটা তাদেরই। যেন আবারো চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছে দলটা। আর সেই লক্ষ্যে এবার আরো দৃঢ়, পরিণত, পোক্ত গুজরাট টাইটান্স।

বছর দুয়েক ধরেই, দারুণ ফর্মে হার্দিক পান্ডিয়া। তবে তাঁর ছন্দে থাকার ব্যাপারটা আরেকটু মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দেয় যখন তিনি অধিনায়কত্ব করেন। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্ব মানেই যেন দলের একটা লাকি চার্ম।

শিরোপা সাফল্যই তো একজন অধিনায়কের নেতৃত্বের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করে। সেই নিক্তির নিরিখে হার্দিক পান্ডিয়া দুর্দান্ত একজন অধিনায়ক। যার অর্জনের ঝুলিতে প্রতিনিয়তই যোগ হচ্ছে সাফল্য। এমন সাফল্যমণ্ডিত অধিনায়ককে কে-ই বা না পেতে চায়।

সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী যেমন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রোহিতের জায়গায় স্থায়ীভাবে হার্দিক পান্ডিয়াকে দেখতে চান। কারণ দিনশেষে সফলতা মূখ্য। আর এই সাফল্যের ওজনেই যেকোনো দল ভারী হয়, সমৃদ্ধ হয়।

এবারের আইপিএল শিরোপা জিততে পারলে হার্দিক পান্ডিয়াই হবেন একমাত্র ক্রিকেটার যার ভিন্ন দুটি দলের হয়ে টানা দুইবার শিরোপা জয়ের কীর্তি থাকবে। এর আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে  ২০১৯ ও ২০২০, টানা দুইবার শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। এবার সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা, তা সময়ই বলে দিবে।

তবে কাপ্তানিতে হার্দিক পান্ডিয়া যে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছেন, তা প্রশংসনীয়ই বটে। কে জানে, এই হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ধরেই হয়তো , গত এক দশক ধরে ভারতের আইসিসি’র কোনো শিরোপা খরার অপেক্ষার অবসান ঘটবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link