More

Social Media

Light
Dark

প্রভসিমরান সিংয়ের বাড়িটাই যেন ময়দান

একটা সেঞ্চুরি। আর সেই সেঞ্চুরিতেই ভাগ্যের বাঁকবদল। অখ্যাত প্রভসিমরান সিং চলে এলেন দৃশ্যপটের গোলকে। ভারতের ইতিহাসে সপ্তম আনক্যাপড ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে সেঞ্চুরির কীর্তি তো তারও আগে যোগ হয়েছে। একই সাথে, ২২ বছর বয়সী এ ব্যাটারের ঐ সেঞ্চুরিতেই পাঞ্জাব কিংসের প্লে-অফের আশা এখনো টিকে রয়েছে।

আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া প্রভসিমরান সিং বলতে গেলে গত শনিবার একটা ‘ওয়ান ম্যান শো’ দেখিয়েছেন। দলের ১৬৭ রানের মধ্যে তাঁর একার ব্যাট থেকেই এসেছে ১০৩ রান। এমন একটা ইনিংস দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বোঝা যাবে পাঞ্জাব কিংসের স্কোরকার্ডের দিকে তাকালে। প্রভসিমরানের ১০৩ এর পরে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান করেন স্যাম কারেন।

দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের সাথে প্রভসিমরানের সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে আগে থাকেই। গত বছর এই মাঠেই হিমাচল প্রদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শতকের খাতা খুলেছিলেন তিনি। এক বছর বাদে, ঠিক সেই মাঠেই পেলেন নিজের প্রথম আইপিএল সেঞ্চুরি!

ads

প্রভসিমরানের এমন সেঞ্চুরির কীর্তি পাঞ্জাবের পাটিয়ালাতে বসেই দেখেছে তাঁর পরিবার। প্রভসিমরানের পরিবার নিয়ে বলতে গেলে এক রাশ বিস্ময় হওয়ার জোগাড়! পুরোদস্তুর এক খেলোয়াড় পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এ ক্রিকেটার। তাঁর বোন সঞ্জমদ্বীপ কৌর হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। খেলছেন জাতীয় পর্যায়ে। তাছাড়া প্রভসিমরানের চাচা সাতভিন্দর সিংও একসময় ভারতের জাতীয় হ্যান্ডবল দলে খেলেছেন।

মজার ব্যাপার হলো, এই সাতভিন্দর সিংয়ের বড় ছেলে অর্থাৎ প্রভসিমরান সিংয়ের চাচাত ভাই আবার এই আপিএলেই খেলছেন। প্রভসিমরানের চেয়ে ৩ বছরের বড় আনমোলপ্রীত সিং এবারের আইপিএলে খেলছেন সানরাইজার্স হাইদ্রাবাদের হয়ে। শেষ কয়েকটি ম্যাচে তাঁকে একাদশেও দেখা গিয়েছে।

প্রভসিমরানের ক্রিকেট নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার পিছনে এই আনমোলপ্রীত সিংয়েরই আবার অবদান বেশি। কারণ আনমোলপ্রীতকে দেখেই ক্রিকেটকে পেশাগত হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রভসিমরান। এখানেই শেষ নয়, আনমোলপ্রীত সিংয়ের ছোটভাই তেজপ্রীত সিংও একজন ক্রিকেটার। পাঞ্জাব অনূর্ধ্ব ২৩ ক্রিকেট দলে এরই মধ্যে খেলা হয়েছে তাঁর।

আইপিএল ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার দিনে নিজের চাচাকে ভুলে যাননি প্রভসিমরন সিং। বরং এই সেঞ্চুরি তাঁর চাচা সাতভিন্দর সিংকে উৎসর্গ করে ম্যাচশেষে তিনি বলেন, ‘আমি পাঞ্জাবের হয়ে এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছি। তবে এটা অনেক স্পেশাল। আমি এই সেঞ্চুরিটা আমার চাচা ও যুবরাজ সিংকে উৎসর্গ করতে চাই।’

দিল্লীর বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে শুরুটা অবশ্য মন্থর গতিতেই করেছিলেন প্রভসিমরান সিং। প্রথম ৩০ বলে যোগ করেন মাত্র ২৭ রান। তবে এরপরেই নিজের ভয়ংকর রূপ দেখান এ ব্যাটার। পরের ৩৫ বলে করেন ৭৬ রান। প্রভসিমরানের এমন ইনিংস নিয়ে অবশ্য আগে থেকেই আশাবাদী ছিলেন তাঁর চাচা সাতভিন্দর সিং।

তিনি বলেন, ‘প্রভসিমরান ওর নিজের দিন যে কোনো প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে পারে। এখন যা দেখছি দিল্লীর স্টেডিয়ামই ওর জন্য লাকি।’ প্রভসিমরানের পাশাপাশি অবশ্য নিজের ছেলের খেলা দেখতেও ভুল করেন না সাতভিন্দর সিং। জানিয়েছেন, রীতিমত উৎসব হয় তাঁর বাড়িতে।

দুই ভাইয়ের খেলা দেখার জন্য পরিবারের সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। পাঞ্জাব কিংস কিংবা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের খেলা মানেই পাটিয়ালার ঐ বাড়িতে যেন একটা উৎসব, উন্মাদনা ঘিরে ধরে।

উইকেটরক্ষক ব্যাটার প্রভসিমরান ৪ বছর আগেই অবশ্য পাঞ্জাব কিংসের শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। দামটাও ছিল চড়া, ৪.৮ কোটি রূপি! তবে চড়া দামের ক্রিকেটার হয়েও সুযোগটা আর পাননি। ৪ আসরে মাত্র ৬ বারই মাঠে নামতে পেরেছিলেন।

ফলত, ৪.৮ কোটির ক্রিকেটার থেকে একসময় ৫৫ লাখ আর শেষ ৬০ লাখের ক্রিকেটার হয়ে যান প্রভসিমরান। কিন্তু ৬০ লাখের এই প্রভসিমরান এবার সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন। পারফর্ম করে ঠিকই বনে গিয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের অন্যতম মূল্যবান ক্রিকেটারের তকমায়।

ছন্দে থাকা এই প্রভসিমরানকে নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত পাঞ্জাব কিংসের স্পিন কোচ সুনীল জোশিও। তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই ওকে দেখছি। ও নিজেকে দারুণ উন্নতি করেছে। আসলে যার প্রতিভাবে সে তাঁর প্রতিভার মূল্য একসময় পাবেই। তবে তার জন্য শ্রম দিতে হয়, ধৈর্য্য ধরতে হয়।

প্রভসিমরান সেই দুটিই করেছে। নিজেকে রানের মধ্যে রেখেছে। রঞ্জিতে ভাল খেলেছে। এরপর আইপিএলে সুযোগ পেতে শুরু করলো। এখানেও সে তাঁর ফর্ম টেনে এনেছে। আমি ওর জন্য দারুণ গর্বিত’

প্রভসিমরানের বয়স সবে বাইশ। নিজেকে সমৃদ্ধ করার এখনও অঢেল সময় রয়েছে তাঁর সামনে। আর সেই সমৃদ্ধির পথযাত্রায় নিশ্চিতভাবেই ভারতের নীল জার্সি গায়ে চাপানো স্বপ্ন তো আছেই। সাথে খেলোয়াড় পরিবারে বেড়ে ওঠা প্রভসিমরানের পাশে চাচা, ভাই, বোনদের আশীবার্দ তো আছেই।

কে জানে, এই প্রভসিমরান সিংই হয়তো একদিন ভারতের জার্সিতে দুই হাত উঁচিয়ে অনন্য সব কীর্তি ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাবেন। তখন নিশ্চয়ই শুধু পাঞ্জাবের সমর্থকদের করতালিতে সিক্ত হবে না, গোটা দেশের জয়োধ্বনিতে মিশে যাবেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link