More

Social Media

Light
Dark

উপমহাদেশীয় ক্রিকেট ইতিহাসে জড়ানো সিলেটের নাম

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। আবার ধর্মপ্রাণ মানুষদের তীর্থস্থান এই সিলেট। তবে একটা বিষয় অজানা। এই উপমহাদেশে ক্রিকেটের গোড়াপত্তনের সাথেও জড়িয়ে আছে সিলেট।

ইতিহাস আর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল সিলেট। মনোরোম পরিবেশ আর প্রকৃতিগত সৌন্দর্যের দিক থেকেই পিছিয়ে নেই ছোট্ট এই বিভাগটি। তবে একটা জায়গায় পিছিয়ে আছে এই অঞ্চল, বঞ্চিত হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ। সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।

দেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় এই সিলেটের অবদানও কম নয়। সময়ে সময়ে দারুণ সব খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে চা-পাতার জন্য বিখ্যাত অঞ্চলটি। তাছাড়া বেশ দৃষ্টিনন্দন ও আন্তর্জাতিক সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন স্টেডিয়ামও রয়েছে সেখানে। শহরের বেশ কাছেই, চা-বাগানের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

ads

তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা ঠিক এখানে নিয়ম করে আয়োজন হয় না। মূলত বাংলাদেশের ক্রিকেটের কেন্দ্র ঢাকা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে বলা হয় ‘হোম অব ক্রিকেট’। এর বাইরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে প্রাধান্য পেয়ে থাকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম। ম্যাচ আয়োজনের বিচারে বেশ পিছিয়ে সিলেট স্টেডিয়াম।

অথচ এই উপমহাদেশে ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সিলেট অঞ্চল। ধারণা করা হয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল এই অঞ্চলটিতে। ঘটনাটা অবশ্য ১৮৮৫ সালের দিকে। এই উপমহাদেশটা তখন ইংরেজদের দখলে।

ইংরেজরা তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বত্র। দেশের শাসনভারের সম্পূর্ণ শক্তি তখন ইংরেজদের হাতের মুঠোয়। এমন সময়ে নেহায়েত বিনোদনের খাতিরেই ইংরেজ অফিসারদের বিপক্ষে ভারতীয় সিপাহীদের একটি ম্যাচ আয়োজিত হয়। সেই সময়কার ম্যাগাজিন ‘স্পটলিং ইন্টেলিজেন্স’ ফলাও করে সেই ম্যাচের খবর ছাপিয়েছিল। ধারণা করা হয়, সেটিই ছিল উপমহাদেশে রেকর্ড থাকা প্রথম ম্যাচ।

তাছাড়া ভারতীয় ইতিহাসবিদ রণঞ্জয় সেন তাঁর ‘নেশন অ্যাট প্লে: অ্যা হিস্টোরি অব স্পোর্টস ইন ইন্ডিয়া’ বইয়েও এই ম্যাচের কথা উল্লেখ করেছেন। তবুও সেটাই উপমহাদেশের মাটিতে খেলা প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ ছিল কি-না, তা নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি রয়েছে।

ধরে নেওয়া যাক, সেটি প্রথম ম্যাচ ছিল না। তবুও তো ইতিহাসের পাতায় অস্তিত্ব রয়েছে সেই ম্যাচটির। ধারণা করা হয়, সেই ম্যাচের মাধ্যমেই এই উপমহাদেশে ক্রিকেটের বিস্তার ঘটতে শুরু করেছিল। তার ফলাফলটা তো এখন আমাদের সবারই জানা। ‘ক্রিকেট উন্মাদ’ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের আপামর জনতা।

দেশের ক্রিকেটে খেলোয়াড় যোগান থেকে শুরু করে ক্রিকেটের প্রাচীনতম ইতিহাসের সাথে জড়িত সিলেট অঞ্চল। তবুও সেখানটায় ম্যাচ আয়োজনের অনীহা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। অথচ দেশের বাকি দুই বিভাগের চাইতে পরিবেশগত দিক থেকে বেশ উপযোগী সিলেটের কন্ডিশন। সেই বিষয়টিই হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছেন বাংলাদেশের বর্তমান কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে।

তাইতো তিনি তার শিষ্যদের নিয়ে অনুশীলন ক্যাম্প করেছেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তবে এখন অবধি কেবল মাত্র একটি টেস্ট ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে সেখানটায়, ২০১৮ থেকে এখন অব্দি সময়ে। তাছাড়া ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে যাত্রা শুরু করা স্টেডিয়ামটায় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে মোটে ৮টি। শেষ ম্যাচটি হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে।

এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও বিসিবির খানিকটা অনীহা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে ঘিরে। এখন অবধি মাত্র ৭টি ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে সেখানটায়। কিন্তু বিশ্বমানের ফ্লাডলাইট থেকে শুরু করে পাঁচটি সেন্টার পিচ। স্টেডিয়াম লাগোয়া আউটার স্টেডিয়ামটাও বেশ গোছালো। মাঠকর্মীদের পরিচর্যার ছাপ সেখানেও স্পষ্ট।

তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও যথেষ্ট আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রে। একটু দেড়িতে হলেও এই বিষয়গুলো বুঝতে শুরু করেছে বিসিবি। তাইতো সাম্প্রতিক সময়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গোটা ওয়ানডে সিরিজটাই আয়োজিত হয়েছে সেখানে। তাছাড়া আসন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজের ম্যাচ আয়োজনের জন্যও বাড়তি পরিচর্যার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

অবশেষে সিলেটের কদর বুঝতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তাইতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরেছে। অনুশীলনের বেসক্যাম্পও হচ্ছে এই সিলেটে। অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা নিশ্চয়ই বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link