More

Social Media

Light
Dark

ইয়াশের পৃথিবী ধসে পড়েছে

এই পঞ্জিকাবর্ষেরই ৯ এপ্রিলের ঘটনা। আইপিএলের মঞ্চ। গুজরাটের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ৫ বলে কলকাতার প্রয়োজন ২৮ রান। ক্রিকেট ইতিহাসে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জয়ের ঘটনা রয়েছে অহরহ, ২/৩ টা ছক্কা হাঁকিয়েও ম্যাচ জয়ের নজির রয়েছে। এমনকি টানা ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জয়ের বিরল ঘটনার উদ্ভূত হয়েছে এই গত দশকেই, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে।

কিন্তু শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জয়— এ তো রীতিমত অবিশ্বাস্য ভাবনার নামান্তর। কিন্তু প্রায় হারতে বসা সেই ম্যাচে টানা ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে কলকাতাকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। কলকাতার হয়ে সেদিন যখন ম্যাচ জয়ের নায়ক হিসেবে রিঙ্কু বন্দনা শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই একজন ম্যাচ হারানোর খলনায়করূপে মাথা নিচু করে হতাশায় মাঠ ছেড়েছেন। তিনি ইয়াশ দয়াল।

সেখানেই এ বাঁ-হাতি পেসারের হতাশার গল্প শেষ হয়নি। ম্যাচ শেষে ইয়াশ দয়াল কেঁদেছেনও। টেলিভিশনে ইয়াশের অশ্রুসিক্ত চোখ স্পষ্টভাবে দেখাও গিয়েছে। তবে এমন দুঃস্বপ্নময় রাত পেরোনের পর এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না ইয়াশ দয়াল।

ads

হতাশা এতোটাই জেঁকে বসেছে যে, এ বোলার ঐ ম্যাচের পর রীতিমত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে অকল্পনীয়ভাবে এই সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে ৮ কেজি ওজন কমে গিয়েছে ইয়াশ দয়ালের। গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া তো চলতি মৌসুমে আর ইয়াশ দয়ালকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাই রাখছেন না।

এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘দেখুন, ইয়াশ যে অবস্থায় আছে, তাতে তাঁকে আর এ মৌসুমে পাব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ঐ ম্যাচের পরই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অস্বাভাবিকভাবে তাঁর ওজন কমতে শুরু করেছে। তাই ইয়াশ দয়ালকে নিয়ে আপাতত কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছি না।’

বোঝাই যাচ্ছে, রিঙ্কু আতঙ্ক বেশ কিছুদিন বয়ে বেড়াতে হবে ইয়াশ দয়ালকে। টানা ৫ ছক্কায় ঐ দিন রিঙ্কুর অবিশ্বাস্য কীর্তিতে আলিগড়ে যেমন রিঙ্কুর বাড়িতে উৎসব শুরু হয়েছিল, ঠিক তাঁর উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট দলের সতীর্থ ইয়াশ দয়ালের বাড়িকে গ্রাস করেছিল চূড়ান্ত হতাশায়। ছেলের এমন দুঃস্বপ্নময় রাতের পর তাঁর মা নাকি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ইয়াশ দয়ালের পরিবার এখন স্বাভাবিক অবস্থাতেই আছে। কিন্তু অস্বাভাবিকতার বলয় থেকে বের হতে পারছেন না ইয়াশ দয়াল।

তবে এমন দু:সময়ে ইয়াশ দয়াল পাশে পাচ্ছেন অনেককেই। স্বয়ং রিঙ্কু সিংই তাঁকে ঐ ম্যাচের পরে ফোন দিয়েছিলেন। তবে সবচেয়ে বড় সান্ত্বনাটা বোধহয় তিনি পেয়েছেন এলাহাবাদ থেকে। এলাহাবাদ থেকে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন তাঁর বাবা চন্দরপল দয়াল। তাঁর মতে, বোলারদের বাজে দিন আসবেই। এটা বড় বোলারদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। সব কিছু ভুলে কঠিন পরিশ্রম করে যাওয়া উচিৎ।

বাবা চন্দরপল দয়ালের কথা ইয়াশ দয়ালকে এই সময়ে অনুপ্রাণিত করছে, তা অজানা। তবে শেষ খবর বলছে, এখনও মানসিক ট্রমা থেকেই বের হতে পারেননি এ বোলার। যদিও সেই দুঃস্বপ্ন যত তাড়াড়াড়ি ভুলে যাওয়া যায়, ততই ভাল হবে ইয়াশ দয়ালের জন্য। ইয়াশ দয়াল নিজেও নিশ্চয় এমন অবস্থা থেকে দ্রুতই নিজের উত্তরণ ঘটাতে চান।

বেন স্টোকস ২০১৬ বিশ্বকাপে শেষ ওভারে গিয়ে কার্লোস ব্রাথওয়েটের কাছে টানা ৪ ছক্কা হজম করে ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা হাতছাড়া করেছিলেন। সেদিনের সেই স্টোকসই পরবর্তীতে ২০১৯ বিশ্বকাপ জেতান ইংল্যান্ডকে। একই সাথে, ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হাতছাড়া করা আক্ষেপ ঘুচান ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসে। ইয়াশ দয়ালও নিশ্চয়ই এমন উদাহরণ মেনে উঠে দাঁড়াবেন। কে জানে, এই ইয়াশ দয়ালের ব্যর্থতার গল্পই একদিন বড় সাফল্যের উৎস হিসেবে কাজ করবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link