More

Social Media

Light
Dark

সাব্বির, নিভু প্রদীপের সামান্য আলো

অমিত প্রতিভা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন। তাঁর ব্যাটিং স্টাইলে অবিকল বিরাট কোহলি’র ছাপও অনেকে খুঁজে পেয়েছিল। তবে প্রতিভার নিদারুণ অপচয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে কক্ষচ্যুত হতেও সময় লাগেনি এ ব্যাটারের। বলছি সাব্বির রহমানের কথা।

বহু বছর বাদে, এই গত বছরের এশিয়া কাপে হুট করে সুযোগ পেয়েছিলেন সাব্বির। জাতীয় দলে ফেরার প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম পারফর্মও করা লাগেনি এ ব্যাটারের। বলা চলে, সেই পুরনো ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী ছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে এমন হয়েছিল যে, পাড়ার ক্রিকেটেও দেখা মিলত তাঁর।

তো, এমন অবস্থা থেকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া, সাব্বিরের জন্য সুবর্ণ এক সুযোগ হয়েই এসেছিল। ক্যারিয়ারের নতুন এক মোড় আনার দারুণ মঞ্চ পেয়েছিলেন। কিন্তু, সুযোগটা আর আশীর্বাদরূপে ধরা দিল না। জাতীয় দলের হয়ে সাব্বিরের ফেরাটা আর সুখকর হলো না। ফলাফল, আবারো বাদ পড়াদের তালিকায় নাম লেখালেন সাব্বির রহমান।

ads

বাতিলের খাতায় আবারো নাম ওঠানো সাব্বিরের পরবর্তীতে ফেরার তাড়নাটাও আর দেখা গেল না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে পেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও লাগাতার অফ ফর্মের প্রতিচ্ছবি প্রতীয়মান হলো। কিছু ম্যাচে তো একাদশের বাইরে সাইডবেঞ্চেও বসে থাকতে হলো তাঁকে। সব মিলিয়ে সাব্বির রহমানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার যেন অফফর্ম নামক এক গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেল।

সেখান থেকে পরিত্রাণের রাস্তা হিসেবে সাব্বিরের সামনে খোলা ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের হয়ে ৫০ ওভারের এই লিস্ট এ ক্রিকেট লিগে সুযোগ পেলেন। সুযোগ পেয়েই কিছু একটা করে দেখাতে চাইলেন। সেই ভাবনায় ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতও দিলেন। ডিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই খেললেন ৪৯ রানের ইনিংস। ১ রানের জন্য ফিফটি মিস। তবে এমন ইনিংসই যেন তাঁকে আরো বেশি তৃষিত করে তুলল।

সাব্বির পরের ম্যাচেই পঞ্চাশ টপকালেন, হাঁটলেন সেঞ্চুরির পথেও। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিও পূরণ করলেন। সিটি গ্রুপের বিপক্ষে খেললেন ১১০ রানের  ইনিংস। অপরাজিত একটি ইনিংস। ব্যাস। এখান থেকেই ব্যাট হাতে ফর্মে ফেরার রসদ পেয়ে গেলেন সাব্বির।

পরের দুই ম্যাচেও শুরুটা ভাল করলেন। কিন্তু থামলেন ৩০ এর ঘরে গিয়ে। অবশ্য এরপরেই আবার আরেকটি ফিফটি তুলে নিলেন। এর ঠিক এক ম্যাচ বাদে আবারো ৪৮ রানের একটি ইনিংস। আর তার এক ম্যাচ বাদে আবার আরেকটি ফিফটি। এবারের ডিপিএলে রানের সাথে সখ্যতা এভাবেই তৈরি হয় সাব্বিরের।

এখন পর্যন্ত খেলা ১০ ম্যাচের ৯ ইনিংসে ৫১.২৫ গড়ে ৪১০ রান। সাথে রয়েছে ১ টি সেঞ্চুরি আর দুটি হাফসেঞ্চুরি। এ ছাড়া বাকি ৬ ইনিংসে খেলেছেন দুটি করে চল্লিশোর্ধ্ব আর ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস। অর্থাৎ এবার ডিপিএলের সিংহভাগ ম্যাচেই রান পেয়েছেন সাব্বির। হয়তো ডিপিএল বিবেচনায় অতি আহামরি কিছু নয়। কিন্তু বহুদিন বাদে, ব্যাট হাতে যে সাব্বির ছন্দে আছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সাব্বিরের এমন ফর্মে ফেরাতে কি তবে জাতীয় দলে ফেরার পথটা মসৃণ হলো? না। মোটেই এমন নয়। তবে ব্যাটার হিসেবে ধুঁকতে থাকা সাব্বির তাঁর ক্যারিয়ারে একটা লাইফ লাইন অন্তত পাচ্ছেন এই ডিপিএল দিয়ে। বলা হয়ে থাকে, ক্রিকেটের মঞ্চ যেটাই হোক, একজন ব্যাটারের রান করাটা জরুরি। সাব্বির সেই দাবিটা অন্তত এখন মেটাতে পারছেন।

রান করছেন, ইনিংস বড় করছেন, সেঞ্চুরিও পাচ্ছেন। এখন প্রয়োজন শুধু এই ধারাটা অব্যাহত রাখা। এই ধারা অব্যাহত থাকলেই একটা সময় পর আবারো জাতীয় দলে আবারো প্রত্যাবর্তনের পথ খুঁজে পাবেন সাব্বির। তবে এই সাব্বিরকেই সময়ের ব্যবধানে আরো শাণিত হতে হবে। এবারের পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় কিংবা তাড়না থাকতে হবে পরের আসরে। ব্যাটার সাব্বির রানের জন্য যতটা তৃষ্ণার্ত থাকবেন, নিজের ছাপিয়ে যাওয়ার পথটা ঠিক ততটাই মসৃণ হবে তাঁর পথচলায়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link