More

Social Media

Light
Dark

ভিনু মানকর, লর্ডসের লর্ড

‘উস ট্রুম্যানকে বাচ্চে কো ম্যায় বহত পিটেগা!’

আগের টেস্টেই ট্রুম্যান – বেডসার – লেকারের হাতে সাত উইকেটে ধরাশায়ী হয়েছে ভারত। তার ওপর দ্বিতীয় ইনিংসে এক সময় শূন্য রানে চার উইকেট পড়ে গেছিল। সুতরাং ওপরের এই থ্রেট শুনে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে কয়েক পাত্র বেশী খেয়ে ফেলা হয়েছে। পরের টেস্টে যথারীতি আট উইকেট নিয়ে ভারতকে শুইয়ে দিলেন ট্রুম্যান। এবার হার আট উইকেটে।

কিন্তু তবুও ভিনু মানকাদের সেই দম্ভোক্তি যে ফাঁকা বুলি ছিল না সেটা প্রমান হয়েছিল ১৯৫২ সালের লর্ডস টেস্টে। প্রথম ইনিংসে ৭২, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৪ (লর্ডসে প্রথম ভারতীয় সেঞ্চুরি, এখনও পর্যন্ত এই রান টপকাতে পারেননি কেউ)। এবং বল হাতে ৭৩ ওভারে ১৯৬ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট। সুতরাং ট্রুম্যান, লেকার, বেডসার, মে বা কম্পটন নয়, ১৯৫২ সালের সেই টেস্ট এখনও পরিচিত হয়ে আছে ‘মানকাদ টেস্ট’ নামে।

ads

তবে যে ভারতীয় লর্ডসে নিজের পারফর্মেন্সের জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত, যাকে ‘লর্ড অফ লর্ডস’ নামেও ডাকা হয় তিনি হচ্ছেন ভারতের স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান দিলিপ ভেংসরকার। ১৯৭৯, ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ – পরপর তিনটে টেস্টে সেঞ্চুরি করে তিনি এই শিরোপা পান। প্রথমটায় তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন, তৃতীয়টি ভারতকে লর্ডসে প্রথম জয় এনে দেয়। আরও একটি টেস্ট খেলেন দিলিপ লর্ডসে – ১৯৯০ সালে – সেই টেস্টের দুই ইনিংসে তার সংগ্রহ ৫২ এবং ৩৫। সব মিলিয়ে চারটি টেস্টে ৫০৮ রান, গড় প্রায় ৭৩।

দিলিপের মতোই লর্ডসে ঐ চারটি টেস্ট খেলেন কপিলও। প্রথমটিতে ইনিংসে ৩টি উইকেট নেওয়া ছাড়া মনে রাখার মতো কিছু করতে না পারলেও পরবর্তী তিনটে টেস্টে সেই ঘাটতি তিনি পুষিয়ে দেন। প্রথমে ১৯৮২। বল হাতে ১২৫/৫ এবং ৪৩/৩। মনে রাখবেন ইংল্যান্ডের মোট ১৩টি উইকেট পড়েছিল সেই টেস্টে। এবং ব্যাট হাতে ৪১ (ভারতের স্কোর ১২৮) এবং ৫৫ বলে ৮৯। তবু ভারত পরাজিত আট উইকেটে। কিন্তু তাতে কি? সে তো ‘দিওয়ার’এও অমিতাভ শেষে মারা গেছিলেন। দিলিপের ১৫৭ স্বত্বেও এই টেস্টে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন কপিলই।

১৯৮৬ সালের লর্ডস টেস্টে আবার জ্বলে ওঠেন কপিল। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে একটা স্পেলে গুচ, রবিনসন এবং গাওয়ারের উইকেট তুলে নিয়ে প্রশস্ত করে দেন ভারতের জয়ের পথ। ১৩৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে একসময় ১১০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন ভারতের অবস্থা কিঞ্চিৎ টলোমলো তখন গম্ভীর মুখে ব্যাট হাতে পদার্পণ করেন কপিল। পরবর্তী ২৬ রানের মধ্যে ২৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে – ১০টি বল খেলে (৪x৪, ১x৬)। আবার দিলিপের ১২৬ সত্বেও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন কপিল।

১৯৯০ এর লর্ডস টেস্টকে গুচের টেস্টও বলা যেতে পারে। ৩৩৩ এবং ১২৩ রান করে ইংল্যান্ডকে জেতান গুচ, স্বাভাবিকভাবেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচও তিনিই হন। কিন্তু তার মধ্যেও কয়েক মিনিটের জন্যে লর্ডস হয়ে ওঠে কপিলময় – যখন ফলো অনের মুখে দাঁড়িয়ে হেমিংসকে পরপর চারবার মাঠের বাইরে ফেলে দেন কপিল।

তাহলে কি দাঁড়াল? চারটি টেস্টে মোট ২৪২ রান, গড় ৪৮। তবে তার চেয়েও লক্ষ্য করার বিষয় স্ট্রাইক রেট – প্রায় ১০৫। আর বল হাতে মোট ১৭ উইকেট, গড় ৩৩। তবে গুচের টেস্টের আগের তিনটি টেস্ট অব্দি এই গড় ছিল ২৪।

দাঁড়ান, এখনও শেষ হয়নি। কপিল একটি মাত্র একদিনের ম্যাচে খেলেছিলেন লর্ডসে – সেই ১৯৮৩র বিশ্বকাপ ফাইনাল। ব্যাট হাতে ১৫ রান (৮ বলে), বল হাতে ১/২১ (১১ ওভারে)। এবং ভিভের সেই ক্যাচ (সঙ্গে লয়েডেরও)। এবং অধিনায়কত্ব। চলো লড়তে হ্যায়!

লর্ডসে দাদাগিরির লিস্টে এক বঙ্গ সন্তানও আছেন। আবির্ভাবেই সেঞ্চুরি। মোট তিনটি টেস্টে ২১০ রান, গড় ৪২। তবে সৌরভ লর্ডসে বেশী উজ্জ্বল একদিনের ম্যাচগুলিতে। দুটো হাফ সেঞ্চুরি সহ ৫২ গড়ে মোট ২০৮ রান, স্ট্রাইক রেট যথেষ্ট সম্মানজনক ৮৭। একটি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। চারটের মধ্যে তিনটেতে অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ এবং এই তিনটেতেই জয়লাভ করে ভারত।

এক্স ফ্যাক্টর? ২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট কাপে জয়ের পর লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা ওড়ানো। তবে তার আগে ৪৩ বলে ৬০ রানের একটা ঝোড়ো ইনিংসও খেলা হয়ে গেছে। আরও কেও আছেন নাকি এই লিস্টে যোগ দেওয়ার মতো? আর ওপরের এই চার ক্রিকেটারের মধ্যে ‘লর্ডসের লর্ড’ হিসেবে আপনার পছন্দ কাকে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link