More

Social Media

Light
Dark

ঘোর লাগানো রাহানে বিভ্রম

টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ব্যাটিংয়ে আপনি তাঁকে পাবেন না। টেস্টকেই তিনি ধ্যানজ্ঞান মানেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো তাঁর নেতৃত্বেই সিরিজ জিতেছিল ভারত। কিন্তু গত বছর ব্যাটটা হাসেনি, কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন। বিসিসিআই বুঝিয়ে দিয়েছে জাতীয় দলে ভাবনায় তাঁকে আর ভাবা হচ্ছে না। তবু তিনি হাল ছাড়েননি, নীরবে নিভৃত্বে চেষ্টাটা চালিয়ে গেছেন। আইপিএল দিয়েই এবারে নিজের ফেরাটা লড়াইটা শুরু করেছেন আজিঙ্কা রাহানে। 

অথচ রাহানের ব্যাটিংয়ে আপনি আগ্রাসনের ছিটেফোঁটা পাবেন না, বরং আনন্দের আলোকছটা যেন খেলা করে তাঁর চোখেমুখে। আলতো ছোঁয়ায় বলটাকে সীমানাছাড়া করে যেন জিজ্ঞেস করে ব্যথা লাগেনি তো বাপু! দর্শকরা হয়তো রাহানে নামে জয়ধ্বনি দেয় না, তবু তিনি ক্রিজে থাকলে ভরসা পায়। 

জীবন তাঁকে শিখিয়েছে কি করে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হয়। ছোটবেলায় দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছেন। ক্রস ব্যাটে খেলার স্বাধীনতা ছিল না। কোনো টেকনিক কিংবা খেলতে না জানার কারণে নয় বরং তাঁর ভয় হতো যদি ব্যাটটা ভেঙে যায়! 

ads

পরিশ্রমকেই জীবনের ধ্যানজ্ঞান মেনে নিয়েছেন। মৌন সাধুর ন্যায় একাগ্রতা এবং নিষ্ঠার সাথে ক্রিকেটের পূজা করেছেন। ক্রিকেটও তাঁকে ফেরায়নি, দুহাত ভরে ফেরত দিয়েছে। তাঁর অভিষেকটাই তো এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের আগে ভারতের প্রথম পছন্দের দুই ওপেনার ইনজুরিতে পড়লে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় রাহানের। 

এরপরের গল্পটা সবারই জানা। রাহুল দ্রাবিড়ের ছেড়ে যাওয়া জায়গাটা নিজের করে নিলেন। পরের দশকে তাঁর ব্যাটে ভারত খুঁজে পেল ভরসার জায়গা, খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুললেন বারবার। যখনই দল বিপদে পড়েছে দক্ষ নাবিকের ন্যায় দলের হাল ধরেছেন রাহানে। তিনি সেঞ্চুরি করেছেন আর ভারত হেরেছে, এমনটা কখনোই ঘটেনি। 

লাল বলের ক্রিকেটের শান্ত সৌম্য দর্শনের কারণেই কিনা রাহানের জীবন থেকে হারিয়ে গেল সাদা বলের ক্রিকেট। অথচ সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও রাহানে বরাবরই ভালো খেলেছেন। আইপিএলে রাজস্থানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ইনিংসের শুরুত্ব উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার দায়িত্বটা বর্তেছে তাঁর কাঁধেই। জাতীয় দলেও রেকর্ডটা মন্দ নয়! তবুও ওয়ানডে কিংবা টি টোয়েন্টিতে বরাবরই ব্রাত্য থেকেছেন। 

জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতোই রাহানের ব্যাটের রানের ধারা একদিন থেমেছে। জাতীয় দলও ভেবে নিয়েছে তাঁকে আর দলে রাখা যায় না। তিনি মেনে নিয়েছেন, কঠিন দু:সময়ে ব্যাটটাকে আঁকড়ে ধরেছেন আরো শক্ত করে। রঞ্জিতে মুম্বাইয়ের নেতৃত্বের ব্যাটনটা তুলে নিয়েছেন, অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে শিরোপা জিতিয়েছেন প্রথম মৌসুমেই। 

আইপিএলের নিলামে চেন্নাই যখন তাঁকে দলে ভেড়ায় সবাই হেসে উঠেছিল। বুড়োদের আঁতুড়ঘরে এ যেন আরেক বুড়োর আবির্ভাব! রাহানে অবশ্য কিছুই ভাবেননি, অপেক্ষা করেছেন একটি মাত্র সুযোগের। প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে জায়গা না পেলেও, তৃতীয় ম্যাচে ভাগ্যবিধাতা মুখ তুলে তাকালেন। ম্যাচের আগে হুট করে মঈন আলী অসুস্থ, চেন্নাইয়ের হয়ে অভিষেক ঘটলো রাহানের। 

পরের গল্পটা রূপকথা, হাতের তালুর মতো চেনা ওয়াংখেড়েতে যেন বাউন্ডারির বন্যা বইয়ে দিলেন। তিন বছরের জমে থাকা রাগ যেন ঝাড়লেন মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর। ২৭ বলে ৬১ রান কিংবা ১৯ বলে ফিফটি করে রাহানে যেন বুঝিয়ে দিলেন এভাবেও ফিরে আসা যায়।

রাহানের ইনিংসগুলো আপনার মনে থাকবে না, তাঁকে সুপারস্টারও ভাববেন না, হয়তো জাতীয় দলেও আর ফিরবেন না রাহানে। তাতে অবশ্য রাহানের থোড়াই কেয়ার, তিনি চেষ্টাটা চালিয়ে যাবেন সেই প্রথম দিনের মতো। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link