More

Social Media

Light
Dark

পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘গোড়ায় গলদ ও গলদের গোড়া’

২০০৯ সালে শ্রীলংকা দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর প্রায় এক যুগ পাকিস্তানে খেলতে যায়নি বড় কোনো দল। তবে সেই খরা কেটেছে গত বছর, একে একে পাকিস্তান সফর করেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড।

সবাই ভেবেছিল ঘরের মাঠে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দেবার সুযোগটা লুফে নেবে পাকিস্তান। কিন্তু দিনশেষে মাঠের পারফরম্যান্সে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছে বাবর আজমের দল। 

প্রায় ২৪ বছর বাদে পাকিস্তানে খেলত এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে তাঁদের অজিদের হারানোর সুবর্ণ সুযোগ ছিল স্বাগতিকদের সামনে। কিন্তু বাজে পারফরম্যান্সের সুবাদে নিজেরা উল্টো টেস্ট সিরিজ হারে ১-০ ব্যবধানে। ওয়ানডে সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতলেও হারতে হয়েছে একমাত্র টি টোয়েন্টি। 

ads

গল্পটা বদলায়নি বাকি দুই দলের বিপক্ষেও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তো ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হতে হয়েছে। জিততে পারেনি দুর্বল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও, টেস্ট সিরিজ ড্রয়ের পাশাপাশি পাকিস্তান হেরেছে ওডিয়াই সিরিজ। 

এই হারের পরপরই পাকিস্তান ক্রিকেটের নানা দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা।

পিসিবি সভাপতির পদটা যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো, প্রতিবার সরকার বদলের সাথে সাথে বদলে যায় সভাপতির নাম। যে দলই ক্ষমতায় আসে তাঁরাই চায় নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি বানাতে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারেন না কেউই। 

বর্তমান সভাপতি নাজাম শেঠির পূর্বসূরী এহসান মানি অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের এই ধারাটা পরিবর্তন করতে। কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়নি, এখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী চাইলে যেকোনো সময় পিসিবির সভাপতি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন। 

অথচ বিশ্বের শক্তিশালী ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোতে মূলত বোর্ড অব ডিরেক্টররাই নির্ধারণ করেন কে সভাপতি হবেন। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলো এই নীতি মেনেই চলে। অথচ পাকিস্তানে এসবের থোড়াই কেয়ার।

রমিজ রাজার কথাই ধরুন না, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে সভাপতির পদ থেকে। বর্তমান সভাপতি নাজাম শেঠিও জানেন না তিনি কতদিন থাকবেন। তবে আগামী নির্বাচনে পুনরায় তেহরিক ই ইনসাফ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসলে তাঁর দিন যে ফুরোবে সেটা সুনিশ্চিত। 

এছাড়া পাকিস্তানের ক্রিকেটার উঠে আসার পথটাও খানিকটা বন্ধুর। অনুর্ধব-১৯ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার পর তরুণরা বুঝতে পারেন না সামনের দিনগুলোতে তাঁরা কিভাবে এগোবেন। জাতীয় দলের বাইরে এ দল কিংবা হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কার্যক্রম এক প্রকার নাই বললেই চলে!

অথচ প্রতিবেশি ভারতের ক্রিকেটাররা বেড়ে উঠেন সঠিক নিয়মের মধ্যে দিয়ে। সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের নিবিড় চর্চায় নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করেন তরুণ ক্রিকেটাররা। কিন্তু পাকিস্তান এখনো তরুণদের জন্য কোনো মেন্টর খুঁজে পায়নি। এছাড়া ভারত যেখানে নিয়মিত এ দলকে বিভিন্ন দেশে সিরিজ খেলতে পাঠায়, সেখানে পাকিস্তানের এ দলের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়। 

২০০৮ সালে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল পাকিস্তান এ দল। সেই দল থেকেই উঠে এসেছিলেন উমর আকমল, সরফরাজ আহমেদ, আজহার আলি, উমর আমিন, মোহাম্মদ তালহাদের মতো ক্রিকেটাররা। চোখের সামনে সাফল্যের নজির থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান ক্রিকেট যেন এ দলের ব্যাপারে অন্ধ। 

এই যুগে প্রতিটা দেশ যেখানে ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নিচ্ছে, সেখানে পাকিস্তান হাঁটছে উল্টো পথে। ২০২১ সালে স্পোর্টিং পিচ বানিয়ে করাচিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল পাকিস্তান।

অথচ, বছর ঘুরতেই ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাটা পিচে ব্যাটিং স্বর্গ বানিয়ে খেলতে নামে পাকিস্তান। ফলাফলস্বরূপ পাঁচদিনে ১৪ উইকেটের বিনিময়ে রান উঠেছে ১১৮৭, ক্রিকেটটা আর হয়ে উঠেনি। 

সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে পাকিস্তানের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার। বাকি দেশগুলো যেখানে আক্রমণাত্নক ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছে একমাত্র ভরসা হিসেবে, সেখানে পাকিস্তান যেন চলছে ধীরে চলো নীতিতে। টপ অর্ডারের কোনো ব্যাটসম্যানই ছাড়াতে পারেননি ১৪০ স্ট্রাইকরেট। 

এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান কেবল ক্রিকেটারদের প্রতিভার উপর ভর করেই এগিয়েছে। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগী হয় কিনা ক্রিকেট বোর্ড। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link