More

Social Media

Light
Dark

গিলের ব্যাটিং ব্যাকরণ

গত মাস দুয়েক ধরেই ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান শুভমান গিল। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন এই ভারতীয় ওপেনার। পেস কিংবা স্পিন দুই ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষেই সাবলীল গিল যেন বলের গতিপ্রকৃতি বুঝে যান এক পলকেই। 

ক্রিকেটে যদি একজন বোলার ১৩৫ কিমি গতিতে বল করে থাকেন তবে সেটা ক্রিজে পড়ার পর প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩২ মিটার অতিক্রম করে। অন্যদিকে, একজন মানুষের দ্রুততম সময়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর রেকর্ড হল ১২০ মিলি সেকেন্ড, যা কিনা এক সেকেন্ডের দশভাগের এক ভাগ।

ইতিহাসের অধিকাংশ গ্রেট ব্যাটারই এর কাছাকাছি কিংবা অর্ধেক সময়েই বলের গতিপ্রকৃতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখান। তবে কোনো কোনো ক্রিকেটার আছেন যারা কিনা খুব সহজেই এই দক্ষতা অর্জন করেন এবং মাঠে পারফর্ম করেন। তাঁরা হচ্ছেন ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। 

ads

এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানরা সাধারণত বাকিদের চাইতে পাঁচ মিলিসেকেন্ড আগেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম। বল ছাড়ার পরই এরা বলের গতিপ্রকৃতি বুঝে যান এবং বহু বছরের অধ্যবসায়ের ফল হিসেবে তাঁদের পেশি বুঝে যায় কোন শটটা খেলতে হবে। শুভমান গিলের স্কয়ার ড্রাইভ কিংবা স্লিপে এক হাতে নিচের দিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেয়া যেন স্মরণ করিয়ে দেয় স্টিভ ওয়াহকে। 

স্টিভ ওয়াহর সাথে গিলের তুলনাটা মন্দ নয়। একই উচ্চতা, একই গড়ন, নড়াচড়ার ধরণ, দুজনেই অসাধারণ স্লিপ ফিল্ডার, সাদা বলের ক্রিকেটে ইনিংস উদ্বোধন করলেও দুজনেই টেস্টে ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে। 

গিল শট খেলার আগে এত সময় পাবার পেছনের কারণ হচ্ছে তাঁর ট্রিগার মুভমেন্ট। আধুনিক যুগের অনেক ব্যাটারই সামনের দিকে এগিয়ে শেষ মূহুর্তে কাট করতে বেশি পছন্দ করলেও গিল বরং বল মুভ করার পরই ব্যাট চালাতে বেশি পছন্দ করেন। সাইড আর্মের বিপক্ষে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাট করার পরই তাঁরা এই দক্ষতা অর্জন করেন। ফলে অতিরিক্ত পেস আজকের যুগের ব্যাটারদের জন্য কোনো সমস্যা নয়। 

গিল সাধারণত ব্যাকফুট আড়াআড়ি এবং সামনের পা সোজা রেখে ব্যাট করেন। ভালো বলগুলোতে তাঁর বেশিরভাগ শটেই শরীরের ভারটাকে সামনে নিয়ে গেছেন। তাছাড়া দ্রুত বল বুঝে ফেলায় অতিরিক্ত পাঁচ মিলিসেকেন্ডের সুবিধা পান তিনি। 

তবে ট্রিগার মুভমেন্টই সব সময় সুবিধা এনে দেয় না। বিশ্বের দ্রুতগামী পেসারদের বিপক্ষে তিনি খানিকটা পিছিয়ে গিয়েই ব্যাট করেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিয়াই সিরিজের কথাই ধরুন না। ম্যাট হেনরির বিপক্ষে তাঁর পা ছিল সমান্তরালে। অন্যদিকে, লকি ফার্গুসনের বিপক্ষে তিনি ক্রিজের আরো ভেতরে গিয়ে ব্যাট করেন। 

ফলে নিজের হাই ব্যাকলিফট ব্যবহার করে শট খেলতে সুবিধা পান তিনি। ব্যাকফুটে গিয়ে অফসাইডে শট খেলতে চাইলে শরীরের ভারটাকে তিনি সামনের দিকে নিয়ে যান। অন্যদিকে, ফ্রন্টফুটে খেলার সময় কেবল সামনের পা’কে বলের লাইনে নিয়ে যান। গিল চোখের সৌন্দর্য নয়, বরং রান করার জন্যই এমন ব্যাটিং করে থাকেন। কেই বা নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে রান করার বদলে ব্যাটিং সৌন্দর্যের দিকে নজর দেবে। 

তবে নিজের টেস্ট অভিষেকেই শক্ত পরীক্ষা দিতে হয়েছে গিলকে। প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্করা নিজের সব রকম চেষ্টাই করে গেছেন গিলকে আউট করতে। প্রথম ওভারেই তিনবার বেঁচে যাওয়া গিলের ৪৫ রান লো স্কোরিং সেই টেস্টের পার্থক্য গড়ে দিতে ভূমিকা রেখেছিল। 

তবে ক্যারিয়ারের জন্য নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে পারেন গিল। প্রতিবারই টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে মিডল অর্ডারের জন্য ভেবে দলে ডাকলেও দেখা গেছে ওপেনারদের একজন ইনজুরিতে পড়েছেন। এবারেই দেখুন না গিলকে জায়গা দিতে সরে যেতে হয়েছে আগের ম্যাচেই ডাবল সেঞ্চুরি করা ঈশান কিষাণকে।

অবশ্য সুযোগটা দারুণভাবে লুফে নিয়েছেন গিল, ডাবল সেঞ্চুরি করে বনে গেছেন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। ৭৪ গড় আর ১১০ স্ট্রাইকরেটে ওডিয়াইতে তিনিই ভারতের দ্রুততম হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করা ব্যাটসম্যান। 

টি-টোয়েন্টিতেও সুযোগ পেতেই হাঁকিয়েছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। এছাড়া ভাগ্যকেও পাশে পাচ্ছেন এই তারকা, শ্রেয়াস আইয়ারের ইনজুরিতে মিডল অর্ডারেও জায়গা আছে এই তারকার জন্য। দুই নিয়মিত ওপেনার ফিরলেও তাই জায়গা হারাতে হচ্ছে না গিলকে। 

যদি পাঁচ কিংবা ছয় নম্বরে তিনি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, তবে তিনিই হবেন চার নম্বরে বিরাট কোহলির যোগ্য উত্তরসূরি। ঠিক যেমন করে শচীনের বিদায়বেলায় ভারত পেয়ে গিয়েছিল কোহলিকে। সময়টা এখন তাই শুভমান গিলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link