More

Social Media

Light
Dark

হোটেলবন্দী ক্রিসমাস

অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে অন্য সব ক্রিশ্চিয়ানদের মতোই ক্রিসমাসের দিনটা বছরের সবচেয়ে আনন্দের দিন।

সারা বছর তারা অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটার জন্য। প্রিয় জনের জন্য একটু উপহার, সবাই একসাথে ডিনার করা, রাত জেগে পার্টি কিংবা গল্প করা; কতো কী পরিকল্পনা!

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের এবার ক্রিসমাসের সব পরিকল্পনা আর আনন্দ বিসর্জন দিতে হয়েছে। অন্তত পরিবারের সাথে কোনো উৎসব পালন করতে পারছেন না তারা। জৈব সুরক্ষা বলয় নিশ্চিত করার জন্য ক্রিসমাসের দিনটাও হোটেলে বন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে পুরো দলকে।

ads

ক্রিসমাসের পরের দিনই যে মাঠে নামতে হচ্ছে দলকে। বক্সিং ডে টেস্টে।

বক্সিং ডে টেস্টের কারণে ক্রিসমাসে একটু তাড়াহুড়ো করা অবশ্য নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই ক্রিসমাসের পরদিন বক্সিং ডে টেস্টে নামতে হয় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে। বক্সিং ডে তে টেস্ট ম্যাচ থাকলে বিনোদন বাদ দিয়ে খেলতে নামতে হয় ক্রিকেটারদের। তবে অন্য সময় যেটা হয়, ম্যাচের সময়টুকু বাদে ক্রিকেটাররা আনন্দে মেতে উঠতে পারেন, পরিবারকে সময় দিতে পারেন। তবে এবারের কোভিড সতর্কতায় বায়ো বাবলে থাকার জন্যে তা আর হচ্ছেনা।

ক্রিকেট যারা খেলেন, তারা এটুকু ছাড় দিতে থাকেন। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাংগারের কণ্ঠে যেন কিছুটা আক্ষেপই ঝরে পড়ল, ‘গত ৫০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম আমি পরিবারকে ছাড়া ক্রিসমাস কাটাব। শুধু আমি কেন, খেলোয়াড়, স্টাফ, ম্যাচ অফিশিয়াল সবারই একই রকম পরিস্থিতি। ২০২০ আমাদের এমন কঠিন সময়ে ঠেলে দিয়েছে। অবশ্যই এটা আদর্শ পরিস্থিতি নয়, তবে এ ছাড়া আর কি করার আছে।’

তবে বায়ো বাবলে নিজেদের আবদ্ধতার কথা জানিয়ে ল্যাংগার বলেছেন, ‘এটাও আসলে একটা পরিবারের মত। সবাইকে বদ্ধ হয়ে একটা জায়গায় থাকতে হচ্ছে, একে অপরের খোঁজ খবর নিতে হচ্ছে। এটাকে নতুন পরিবার বলতে পারেন।’

এই টেস্টটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য দারুন সুযোগ সিরিজ জয়ের পথে পরিষ্কার এগিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রথম টেস্টে ভারতকে গুড়িয়ে দিয়ে ইতিমধ্যে তারা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে।

বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার একাদশটা অপরিবর্তিত থাকবে খুব সম্ভবত। অন্তত অ্যাডিলেড টেস্টে নজরকাড়া পারফর্ম্যান্সে একাদশ পরিবর্তনের ভাবনা টিম ম্যানেজমেন্ট করবে না। বক্সিং ডে টেস্ট খেলা হবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজিতে)।

কোভিড হানার জন্যে এবারে বক্সিং ডে টেস্টের আনুষ্ঠানিকতা অবশ্য অন্য সব বারের চাইতে একটু কমই। যেমন সাধারণ সময়ে মেলবোর্নে ৭০ হাজার খেলা দেখতে পারেন, এবার সেটা কমে ৩০ হাজারে নেমে আসছে। এই সংখ্যার মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরাও আছেন, এটা ভুলে গেলে চলবেনা।

অজি কোচ জাস্টিন ল্যাংগার যেমনটা বললেন, ‘খুব অস্বাভাবিক কিছু না হলে একাদশে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আর ৩০ হাজার দর্শক? কেউ না থাকার চাইতে এই কম সংখ্যক দর্শকও অনেক ভাল। এমসিজি স্টেডিয়াম? এটা তো আমার স্বপ্নের জায়গা। এখানে আমি সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। ছেলেরাও এখানে, এই পিচে খেলতে চায়। এমন কোথাও বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করাটা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার। আর ভারতীয়রাও আশা করি, বক্সিং ডে টেস্ট খেলার স্বপ্নই দেখেন। আর আমি নিশ্চিত, যে ৩০ হাজার স্টেডিয়ামে আসবেন, পুরোপুরি ভাবে উপভোগ করবেন।’

অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়াকে রীতিমত লজ্জায় ডুবিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে বক্সিং ডে টেস্ট শুরুর আগে পা মাটিতেই রাখছেন ল্যাংগার। তিনি বলেছেন, মেলবোর্নে জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে আলাদাভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। ভারত অবশ্যই জিততে চাইবে, তাদের টপ অর্ডারকে তাড়াতাড়ি ফেরাতে হবে আর অবশ্যই অস্ট্রেলিয়াকে বড় স্কোর গড়তে হবে, ‘আমরা জানি ভারত কত ভাল দল। প্রথম দিন সকাল থেকেই আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদেরকে যদি ভাল দল হতে হয়, জয় ব্যাপারটা অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে হবে। কোন একটি নির্দিষ্ট ম্যাচ জয়ে থেমে গেলে চলবেনা। ভাল দল একটা জয় পাওয়ার পর সেটাকে অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করে, আমাদেরও করতে হবে সেটাই। ভারত অবশ্যই ফাইট ব্যাক দিতে চাইবে। আমাদের বক্সিং ডে টেস্টের সকাল থেকেই তাই পরিকল্পনায় স্থির থাকতে হবে। প্রথম ইনিংস থেকেই ভারতীয় খেলোয়াড়দের চাপে রাখতে হবে।’

ল্যাংগার অবশ্য তাতে নিজেদের দীর্ঘ পরিকল্পনার আস্থার ছাপ দেখতে পাচ্ছেন জোরেশোরেই, ‘আমরা এখন ভিন্ন একটা দল। গত দুই বছর ধরে আমরা নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেটারই ফল এখন দেখা যাচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনাতে অটল থাকতে হবে তাই। প্রথম ইনিংস থেকেই স্কোরবোর্ডে রান তুলতে হবে, সম্ভব হলে সেটা ৪০০ র আশেপাশে।’

এমসিজির পিচ অনেক সময়ই ব্যাটিং বান্ধব হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে অবশ্য ল্যাংগার বল ঠেলে দিলেন গ্রাউন্ডসম্যানদের হাতে। দলের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দর্শকেরা যেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচ দেখে বিনোদন পায় এমন পিচই চান তিনি। তা সেই বিনোদন যে ভারতীয় ব্যাটিংলাইনআপে ছড়ি ঘোরানো তা কে না জানে, ‘গত কয়েক বছর ধরেই এমসিজির উইকেটের ওপর অনেক চাপ যাচ্ছে। তবে গ্রাউন্ডসম্যানেরা যেভাবে তা সামলাচ্ছেন তাতে তাদের প্রশংসা করতেই হয়। অ্যাডিলেডে আমরা আমাদের চাওয়া অনুযায়ী উইকেট পেয়েছিলাম, মেলবোর্নেও তার ব্যাত্যয় হবেনা আশা করছি।’

বক্তব্যের শেষে বক্সিং ডে টেস্ট নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বক্সিং ডে টেস্ট বিশেষ কিছুই। সবাই বক্সিং ডে টেস্টকে পছন্দ করে। ক্রিকেটাররাও এই টেস্ট খেলতে মুখিয়ে থাকে। আশা করছি, ব্যাটে বলে টেস্টটা ভাল হবে। ওরকমই একটা উইকেট পাব আমরা।’

শেষ লাইনে কি পিচ কিউরেটরদের একটা ইঙ্গিত দিলেন ল্যাংগার?

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link