More

Social Media

Light
Dark

তিতাস একটি নদীর নাম

অ্যাথলেট বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্প্রিন্টার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু তাঁর। এরপর সাঁতার থেকে টেবিল টেনিসেও নিজের প্রতিভার ছাপ রাখলেন। এরপর এই বহুমুখী প্রতিভার মেয়ে তিতাস রাজেন্দ্র স্মৃতি সংঘের স্কোরার হিসেবে ওই ক্রিকেট ক্লাবের স্কোর হিসেব করার দায়িত্ব পালন করলেন। আর সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়া। আর এরপরের টুকু তো ইতিহাস হয়েই থাকবে। প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত মেয়েদের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্যা এখন এই বঙ্গ কন্যা।

শুরুতে ক্রিকেটার হবার পরিকল্পনা ছিল না মোটেও। কিন্তু এখন সেই তিতাস সাধুই বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। দারুণ মেধাবী তিতাস পড়াশোনাতেও ছিলেন খুব ভাল। মাধ্যমিক পরিক্ষায় ৯৩ শতাংশ নম্বর ও পেয়েছিলেন।

সেই সুবাদে ক্লাবের স্কোরার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে ক্লাবের একদিন একজন নেট বোলারের দরকার পড়ল। নেটে ডাকা হল তাকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।দারুণ মেধাবী তিতাস এরপর লেখাপড়া ছেড়েছুড়ে পড়ে রইলেন শুধু ক্রিকেট নিয়েই।

ads

বেঙ্গল টিমে তিতাসের বোলিং কোচ শিব শংকর পাল স্মৃতিচারণ করছিলেন সেসব দিনের কথা, ‘ওর ছোটবেলার কোচ প্রিয়াঙ্কা মুখার্জি আমাকে জোর করে যেন আমি প্রতিভাটিকে যাচাই করে দেখি। সে আসলেই দারুণ প্রতিভাবান ছিল। আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে সে যে পরিমাণ সুইং এবং বাউন্স আদায় করে নিতে পারে সে বিষয়টি।’

তিতাসের সেই গতি,সুইং আর বাউন্সের প্রদর্শনী দেখা গেছে বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চেও। দক্ষিণ আফ্রিকায় পেসারদের অনুকূল পরিবেশ পেয়ে রীতিমত ব্যাটারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন তিতাস।

বেঙ্গল টিমের ক্যাম্প থেকে সিনিয়র লেভেলে রাজ্য দলে সুযোগ পান তিতাস। এরপরই অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের দরজা খোলে তাঁর জন্য। শুধু গতি আর সুইংয়ের প্রদর্শনীই নয়, ব্যাট হাতেও দারুণ পারদর্শী তিতাস। তিতাসের কোচ শংকর পাল বলেন, ‘সে একজন ন্যাচারাল বিগ হিটার এবং খুব সহজেই সে ছক্কা হাঁকাতে পারে।’

তিতাসের ছোটবেলার কোচ প্রিয়াঙ্কা মুখার্জিও গর্বিত তাঁর শিষ্যের অর্জনে। বললেন, ‘সে দারুণ বুদ্ধিমতি। তাঁর কোনো কিছু গ্রহণ করার দক্ষতা দারুণ। কঠোর পরিশ্রমী সে। সে ক্রিকেট আর পড়াশোনা একই সাথে চালিয়ে নিতে পারে। যেহেতু সে স্প্রিন্টার হিসেবে শুরু করেছিল সে শারীরিক ভাবেও দারুণ ফিট। এবং এটিই তাকে ক্রিকেটে পরের ধাপে নিয়ে গেছে।’

তিতাসের বাবা রণদ্বীপও দারুণ খুশি মেয়ের এমন অর্জনে। বললেন, ‘সব পরিশ্রম সে ই করেছে। আমি শুধু তাকে পথ দেখিয়েছি। আবহাওয়া যাই থাকুক না কেন সে প্রতি সাপ্তাহে ২২ কিলোমিটার স্প্রিন্ট করেছে। বেঙ্গলের হয়েও দারুণ পারফর্ম করেছে সে এবং গত মৌসুমে সে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিল। আমরা বিশ্বাস করতাম সে দারুণ কিছু করবে এবং সে এটি করে দেখাল।’

দক্ষিন আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলেছে ভারত। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে গুড়িয়ে দিতে দুর্দান্ত বোলিং করেন তিতাস। চার ওভারে মাত্র ছয় রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন তিনি।

ক্রিকেটের জন্য লেখাপড়া থেকে আপাতত অনেক দূরে সড়ে গেছেন তিতাস। তিতাসের বাবাও চিন্তিত মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে, ‘গত দুই বছর ধরে সে কোনো পরীক্ষা দেয়নি। আমরা জানি না সে তার পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারবে কিনা।’

সামনেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নারীদের আইপিএলের জন্য নিলাম থেকে দল পেয়ছেন তিতাস। স্প্রিন্টার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা তিতাস তাই নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের স্প্রিন্টটা আরো অনেক দূর পর্যন্ত দৌড়াতে চাইবেন নিশ্চিত ভাবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link