More

Social Media

Light
Dark

বেলগ্রেডের রাজা, মেলবোর্নের মহারাজা

শুভ্র শহরের দেশ সার্বিয়া। শ্বেত তুষারে রাজধানী বেলগ্রেডও এক প্রকার আচ্ছন্নই থাকে। অদ্ভুত ধরনের এক নিস্তব্ধতায় যেন সাদা চাদরে মুড়ে থাকে পুরো শহরবাসী। ব্যস্ততা রয়েছে, তবে তা প্রায় শব্দহীন।

কিন্তু, এই শহরের এক ছেলেই বড্ড বেশি ঘাড়ত্যাড়া। নিজ শহরের রূপ, প্রকৃতি- কোনোটাই খুব একটা ধারণ করেন না। সম্পূর্ণ বিপরীত। তারপরও সেই শহরের অলিখিত রাজা তিনি। শহরের নিস্তব্ধতায় যেটুকু প্রাণ আসে, নিয়মের বেড়াজাল ভেদ করে আনন্দের উপলক্ষ্য আসে- সবটাই তাঁর কল্যাণে। তিনি টেনিস কোর্টের মহাতারকা নোভাক জকোভিচ।

টেনিস কোর্টে হতাশায় ব্যাট ভাঙছেন, সেখান থেকে উত্তণের জন্য পরক্ষণেই আবারো গর্জে উঠছেন আগ্রাসনে। সংজ্ঞাটা বোধহয় নোভাক জকোভিচের জন্যই লেখা যায়। টেনিস বিশ্ব যেখন ফেদেরার, নাদালে বিভক্ত তখন জকোভিচ আলোচনার কেন্দ্রে নেই বললেই চলে। কখনো তৃতীয় হন। আবার এন্ডি মারের কাছে হেরে কখনো চারেও নেমে যান শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে।

ads

কিন্তু কী এক জাদুমন্ত্রে যে তিনি নিজেকে উপরে টেনে তুললেন, আর তাঁকে নিম্নগামীই করা গেল না। এগিয়ে চললেন দুরন্ত গতিতে। আন্দ্রে আগাসিকে টপকালেন। পিট স্যাম্প্রাসের সাম্রাজ্যের সমান হলেন। একটা সময় পরে এসে টেনিস সাম্রাজ্যে নিয়ে নিলেন একক আধিপত্য।

প্রথমেই বলা হয়েছিল বড্ড বেশি ঘাড়ত্যাড়া টেনিসের এই মহাতারকা। নিজের স্বাধীনতার উপর কারোর দখল দারিত্ব তিনি কখনোই মেনে নেননি। এমনকি নিজের একক সাম্রাজ্যে তাতে কারোর হানা দেওয়ার আশঙ্কা থাকলেও নয়।

করোনায় পৃথিবী থেমে গেল। সেই দৌরাত্ম্য প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজন ভ্যাক্সিন বা টিকা। টেনিস খেলোয়াড়দের জন্যও তা আবশ্যিক করা হল। এখানেই বেঁকে বসলেন জকোভিচ। টিকায় তাঁর ভরসা নেই। তিনি টিকা নেবেন না। তাঁর জন্য কোনো টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়লেও সমস্যা নেই।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলোয়াড়দের জন্য টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হল। কিন্তু জকোভিচ তাঁর সিদ্ধান্তেই অটুট থেকে গেলেন। তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে রীতিমত অপদস্থ করে বের করে দেওয়া হয় জকোভিচকে।

অথচ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সর্বকালের সেরা তারকা এই জকোভিচই। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল, ফ্রেঞ্চ ওপেনেও। জোকোভিচ নেই, ফেদেরারও নেই। একদম ফাঁকা মাঠে গোল দিলেন রাফায়েল নাদাল। দুটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের সর্বকালের সেরা হয়ে গেলে তিনি। পিছিয়ে পড়লেন জকোভিচ।

কিন্তু, ঐ যে টেনিস কোর্টের আগ্রাসনে জকোভিচ কখনোই পিছিয়ে থাকার পাত্র নয়। এক বছর আগে যে রড লেভার অ্যারেনায় গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটাকে নিজের করে নিয়েছিলেন নাদাল, আজ সেই দূর্গেই নাদালকে ছুঁয়ে ফেললেন জকোভিচ। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে গ্রিসের স্তেফানোস সিৎসিপাসকে ৬-৩, ৭-৬, ৭-৬ (৭/৫) গেমে হারিয়ে রেকর্ড ২২তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতলেন জোকোভিচ।

অথচ, এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এক প্রকার ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন জকোভিচ। হ্যামস্ট্রিং চোট পেয়ে বসেছিল টুর্নামেন্টের মাঝ পথে। তবে চোটকে পাত্তা না দিয়ে একদম রাজার মত প্রত্যাবর্তনে নিজের পুরনো রাজত্বে ফিরে আসলেন ‘দ্য জোকার’।

বেলগ্রেডের রাজা, তাই এখন মেলবোর্নের মহারাজা। রড লেভার এই অ্যারেনায় যে এ নিয়ে মোট ১০ বার ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন জকোভিচ। যা আর কেউ পারেননি। অবশ্য ২২ টা গ্র্যান্ডস্লামের এই রেকর্ডটাই বা নাদাল ছাড়া আর কেইবা পেরেছেন!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় গিয়ে থামবেন জকোভিচ? অনুমিত প্রশ্ন, কৌতুহল উদ্দীপক জিজ্ঞাসা। কিন্তু নোভাক যেভাবে ছুটে চলেছেন তাতে তো এই সহজ প্রশ্নটাই কাঠিন্যে রূপ নেয়। কারণ জকোভিচের বয়স যেভাবে বাড়ছে, শিরোপা ক্ষুধাও যে তাঁর মধ্যে একই হারে বাড়ছে।

ক্ষুধার্ত জোকার তাই নিজেও বোধহয় এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ। তবে ঐ যে, কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে দুরন্ত গতিতে যতদিন ছুটে চলা যায় আরকি। মেলবোর্নের মহারাজার এমন ছুটে চলা অব্যাহত থাকলে মন্দ কী! কিংবদন্তিদের নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্যে তো বরং বিশ্ববাসীর আরো চোখ জুড়ায়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link