More

Social Media

Light
Dark

ভারতের বিস্মৃত স্পিন জাদুকর

ভারতের বিখ্যাত স্পিন কোয়ার্টেটের ক্যারিয়ার তখন শেষের দিকে। ভারতীয় নির্বাচকরা তখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন চার স্পিন তারকার উত্তরসূরী। সেই সময়টাতেই পাহাড়সম প্রত্যাশার চাপ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটপাড়ায় তাঁর আবির্ভাব।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টেই নিজের সামর্থ্যের জানান দেন দারুণভাবে, ৮১ রানে সাত উইকেট নিয়ে বুঝিয়ে দেন তাঁর উপর ভরসা রাখা যায়। কিন্তু এরপর সময় যত গড়িয়েছে শিবলাল যাদব হারিয়ে গেছেন চোরাবালির অতল গহ্বরে।

১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক ঘটে অফস্পিনার শিবলাল যাদবের। নিজের প্রথম টেস্টেই সাত উইকেট নিলেও দলকে জেতাতে পারেননি, ম্যাচশেষ হয় সমতায়। তবে কানপুরে পরের টেস্টেও তাঁর স্পিন ঘূর্ণিতে ধরাশয়ী হয় অজিরা, এবারে ছয় উইকেট নিয়ে দলকে ১৫৩ রানের জয় এনে দেন যাদব।

ads

চেন্নাইতে সিরিজের প্রথম টেস্ট মিস করলেও ২৪ উইকেট নিয়ে সেই সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে যাদব জানান দেন তিনি হারিয়ে যেতে আসেননি। তাঁর আগমণের সাথে সাথেই দলের আরেক অফস্পিনার শ্রীনিবাস ভেংকটরাঘবনের সময় ফুরিয়েছে। প্রায় তিন বছর দলের বাইরে থাকতে হয় তাঁকে।

যাদবের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি লম্বা লম্বা সব স্পেল করতে পারতেন। শোনা যায় সারাদিন বল করতেও নাকি বিন্দুমাত্র ক্লান্তিবোধ করতেন না তিনি। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল পিচ থেকে সহায়তা না পেলে তিনি থাকতেন একদম নিষ্প্রভ। তাঁর ফ্লাইট ডেলিভারিগুলো অবলীলায় সামলে নিতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা।

১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফয়সালাবাদ টেস্টে তিনি এক ইনিংসেই ৭৫ ওভার বল করেন। ফয়সালাবাদের সেই পিচ ছিল এশিয়ার সবচেয়ে ফ্ল্যাট পিচ। ভারতের হয়ে কেবলমাত্র ভিনু মানকড় এবং রাজেশ চৌহান এক ইনিংসে তাঁর চাইতে বেশি ওভার বল করেন।

১৫ মাস বাদেই সিডনিতে শিবলাল তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংটা করেন, চমকে দেন মাঠে থাকা ৬৭ হাজার দর্শককে। ৬২ ওভার বল করে ৯৯ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে গুঁড়িয়ে দেন স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনআপ।

সেই টেস্টে মোট ৯৫.৩ ওভার বল করে আট উইকেট শিকারে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান তিনি। কপিল দেব, ক্রেইগ ম্যাকডারমট, ব্রুস রেইডদের মতো তারকা বোলাররা থাকা সত্ত্বেও তিনিই ছিলেন সেই সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথেই যেন হারিয়ে যেতে থাকে তাঁর বোলিংয়ের ধার। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করে ১৯৮৩ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে পুনরায় জাতীয় দলে ফেরেন ভেংকটরাঘবন। ১৯৮৬ সালে অজিদের ভারত সফরের সময় নিজের সেরা ফর্মে ছিলেন না শিবলাল।

তা সত্ত্বেও চেন্নাইতে প্রথম টেস্টে তুলে নেন চার উইকেট। ডাবল সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকা ডিন জোন্সকে সাজঘরে পাঠিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন তিনি। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি।

১৯৮১ সালে মেলবোর্ন টেস্টে লেনি প্যাসকো রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন তাঁর উপর দিয়ে। প্যাসকোর একের পর এক গতিশীল বাউন্সার বারবার শরীরে লাগছিলো শিবলালের, তাঁর পুরো শরীর বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল। তবে মজার ব্যাপার হলো কপিল দেবের মহাকাব্যিক এক স্পেলে সেই টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছিল ভারত।

টেস্ট অভিষেকের এক বছর বাদেই ওডিয়াইতে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেন তিনি। ১৯৮৭ সালে সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই তারকা। জাতীয় দলের হয়ে সাত ওডিয়াইয়ের পাশাপাশি ৩৫ টেস্টে অংশ নেন তিনি। খেলা ছাড়ার পর হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে বিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টদের একজন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link