More

Social Media

Light
Dark

দ্য এন্ড অব মুশফিক!

দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার তিনি। এ নিয়ে বাংলাদেশ দল থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ, ক্রিকেট নিয়ে উৎসুক জনতার মাঝেও সম্ভবত কোনো দ্বিমত নেই। সমালোচকদের প্রত্যুত্তরে অভিমানে কিংবা আক্ষেপের সুরে অনেক সময় পরিশ্রমের গল্পের ঝাঁপি তিনি নিজেও খুলে বসেন। পরিশ্রম নিয়ে বরাবরই এক ধরনের আমিত্ববোধে ডুবে থাকেন তিনি।

নাম না প্রকাশ না করলেও বোধহয় এতক্ষণে চিনে ফেলার কথা। বলছি মুশফিকুর রহিমের কথা। না। তাঁর কঠোর শ্রম, ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। ঢাকডোল পিটিয়ে নিজের পরিশ্রমের কথা মিডিয়ার সামনে বলা নিয়ে মৃদু সমালোচনা হতেই পারে। তবে এটা সত্যি যে, নিদারুণ শ্রম, ক্রিকেটের প্রতি অসামান্য নিবেদন দেখিয়েই আজকের মুশফিক এই পর্যায়ে এসেছেন।

ক্যারিয়ারের শুরুতে গড়পড়তা এক ব্যাটার ছিলেন। কখনো মিডল অর্ডার, কখনও বা আবার লোয়ার মিডল অর্ডারেও ব্যাটিংয়ে ঠাই মিলত।  সেই জায়গায় থেকে মুশফিক উতরে এসেছেন কঠোর পরিশ্রম করেই। বরাবরই বলে এসেছেন, তাঁর মাঝে সহজাত কোনো প্রতিভা নেই। যতটুকু অর্জন করেছেন তার সবটাই অনুশীলনে নিংড়ে দিয়ে, ভুল শুধরে, ঘন্টার পর ঘন্টা খেটে নিজের উন্নতি ঘটিয়ে।

ads

মুশফিক এই প্রক্রিয়ায় সুফল পেয়েছেন বেশ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর হাত দিয়ে, উইকেটরক্ষক হিসেবে তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার যার টেস্টে ২ টি ডাবল রয়েছে। মুশফিকের অবশ্য ডাবল ৩ টা।

তৃতীয় দ্বিশতকটা পেয়েছিলেন শুধুমাত্র ব্যাটার হিসেবে। যাহোক, শুধুই কি টেস্ট। অর্জনে গর্জনে একদিনের ক্রিকেটেও বইয়ে দিয়েছেন রানবন্যা। ম্যাচের পর ম্যাচ নিজের ব্যাটে ধারাবাহিকতার গান গেয়ে গেছেন। সেটা হোক ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। মুশফিকের কাছে ক্রিকেট মানেই সিরিয়াস বিষয়, ক্রিকেট মানেই পারফর্ম করার মঞ্চ।

সময় গড়ায়, সাথে মানুষের বয়সও ক্রমবর্ধমান গতিতে বাড়তে থাকে। ক্রিকেটাররাও এ চিরন্তন ধারার বাইরে নন। ক্যারিয়ারের ক্রান্তিলগ্নের সম্মুখীন হন সবাই। অনেকে নিজের সেরা সময়েই বিদায় বলে দেন। উপমহাদেশের ক্রিকেটাররা আবার ক্রিকেটকে অনেকটা লালন করেন। তাই তাদের বিদায়ের মুহূর্ত আসে বেশ দেরি করেই। অনেকে আবার ঐ বিদায়টাই নিতে চান না। শেষ বেলায় টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে ক্যারিয়ারে ফুলস্টপ বসে পড়ে।

মুশফিক এই মার্চেই ৩৭ এ পা দিবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিপ্রেক্ষিতে মুশফিকের এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে বলেই অনেকে মনে করেন। কিন্তু কড়া শোনালেও, মুশফিকের শেষের শুরু নিয়ে এখনই ভাবা উচিৎ।

ইতোমধ্যেই কঠোর শ্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়েছে। রান পাচ্ছেন না অনেক দিন ধরে। ফরম্যাট ভেদে দলের দাবি মেটাতে পারছেন না। সেই জেরে নিজের শেষ ভেবে কিংবা চাপের মুখে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম।

প্রশ্ন হচ্ছে, টি-টোয়েন্টির ঐ অফফর্ম তাঁর বাকি দুই ফরম্যাটের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে কিনা? উত্তরটা- হ্যাঁ। শেষ এক বছরে ওয়ানডেতে আফগানিস্তান আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ফিফটি ছাড়া বলার মতো কিছুই করতে পারেননি মুশফিক। একই দশা, টেস্টেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু ঐ ইনিংসের পর ফিফটি তো দূরে থাক, একটি ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসও খেলতে পারেননি তিনি।

প্রায় প্রতিটা ইনিংসই শুরু করেছেন ঠিকঠাকভাবেই। কিন্তু সেট হয়ে আউট হয়ে এসেছেন, অনেক সময় উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে তাঁর সাম্প্রতিক সময়ের আউট হওয়ার ধরণগুলোও বেশ দৃষ্টিকটু। প্রশ্নটা এখানেই উদয় হয়। ব্যাটিং নিয়ে এত কাজ করেন। তবুও দুর্বলতা কাটাতে পারেন না। এটা কি বয়সের কারণে রিফ্লেক্স কমে যাওয়ায় নুয়ে পড়া নাকি শুধুই ব্যাডপ্যাচ?

যাহোক, টেস্টে ক্রিকেটে এক বছরে এ অফফর্মকে নাহয় একটু ‘সাময়িক’ বলেই পার পাইয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুশফিক মানেই তথৈবচ এক অবস্থা। এবারের বিপিএলে শুরুতে তরুণ ব্যাটারদের কাঁধে চেপে তেমন একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি। কিন্তু এরপরে যখন টিম ম্যানেজমেন্ট খুব মুশফিকের দিকে চেয়ে রইল ঠিক তখনই তিনি হতাশ করলেন।

প্রায় ম্যাচেই সাময়িক বিপদ কাটাতে পারেননি। বরং বল খুইয়ে সেট হয়ে আউট হয়েছেন। তাতে উল্টো চাপ বাড়িয়েছেন দলের উপরে। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো, কোনো ইনিংসেই স্বাচ্ছন্দ্যে উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি তিনি। আর তাতে মিস্টার ডিপেন্ডেবল দলের কাছেই হয়ে উঠেছেন বড় এক বোঝার নাম।

এমনিতে বিপিএলের ইতিহাস বিবেচনা করলে ব্যাটার হিসেবে দারুণ সফল মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবালের পরেই সর্বোচ্চ রান তাঁর। স্ট্রাইকরেট, গড় সব কিছুতেই ঠিকঠাক। কিন্তু এবারের বিপিএলে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি। লম্বা সময় পর্যন্ত এমন অধারাবাহিক মুশফিককে দেখা গেছে খুব কমই। আর এ কারণেই চরম দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হওয়ার মতো জোগাড়। কারণ মুশফিকের ব্যাটিংয়ের সুক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা মিলবে অগণিত দুর্বলতার জায়গা।

আগে যে বল গুলো স্লগ সুইপ মেরে অবলীলায় বাউন্ডারির ওপারে পাঠাতেন সে বল গুলোতেই এখন প্রায়শই আউট হচ্ছে। ইনসুইং বল গুলোতে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে প্লে ডাউন হয়ে আউট হচ্ছেন। ব্যাট প্যাডে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ না রাখায় এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মোদ্দাকথা, বল রিড করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

এক ফরম্যাটের চাপ কমিয়ে দুই ফরম্যাটে ফোকাস করা দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্যাটে ছন্দ ফিরে পেতে মুশফিকের প্রয়োজন বড় ইনিংস। কিন্তু সেটাই করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। আর খুব দ্রুত এখান থেকে বের হয়ে আসাটাও জরুরি। নাহলে সাজানো এক ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্ন ডাক দিবে দ্রুতই। মুশফিক নিশ্চয় সেটা ঘটতে দিতে চাইবেন না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link