More

Social Media

Light
Dark

বিরাট ব্যাটের জাদু

প্রায় তিন বছর ওয়ানডে ফরম্যাটে কোন সেঞ্চুরি ছিল না; বড় ইনিংস খেলা ভুলেই গিয়েছিলেন হয়তো। কিন্তু চল্লিশের বেশি ওয়ানডে শতকের মালিককে নিশ্চয়ই তিন অঙ্কের পথ দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তিনি ঠিকই খুঁজে নেন ফেরার পথ, তিনি ঠিকই ঘুরে দাঁড়ান। বলছি বিরাট কোহলির কথা, গত কয়েক বছর সেঞ্চুরি খরায় ভুগতে থাকা কোহলি এবার টানা দুই ম্যাচে উঁচিয়ে ধরেছেন হেলমেট।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমেছিল ভারত। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর শুভমান গিল শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ২০তম ওভারে ১৪০ রানের গন্ডি ফেরিয়ে যায় ভারত। ৭০ রান করে শুভমান ফেরার পরে বাইশ গজে আসেন বিরাট কোহলি। দারুণ শুরুর পর মোমেন্টাম ধরে রাখাই ছিল তাঁর প্রাথমিক কাজ।

নিজের কাজ ভালোই বোঝেন বিরাট কোহলি। তাই তো ঠিক যেভাবে খেলেছেন গিল, রোহিতরা সেভাবেই ব্যাট করতে থাকেন তিনি; ৪৭ বল খেলেই তুলে নেন অর্ধশতক। এরপরই ভুল করে বসেন এই ডানহাতি; কাসুন রাজিথার বলে ক্যাচ তুলে দেন। কিন্তু কুশল মেন্ডিসের দুর্ভাগ্য বলতেই হয়, সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তিনি।

ads

সেরা ক্রিকেটারদের ওই এক বৈশিষ্ট্য, ওরা সুযোগ কাজে লাগাতে জানে। ভাগ্যের ছোঁয়ায় নতুন জীবন পাওয়া বিরাট কোহলিও সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। পঞ্চাশ করার পর আরো ক্ষুরধার হয়ে উঠেছিল তাঁর ব্যাট। এরপর অবশ্য আরো একবার এই ভারতীয়কে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিল লঙ্কান বোলার রাজিথা, তবে এবার সেটি লুফে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা।

দুই দুইবার জীবন পাওয়া বিরাট কোহলি আর ভুল করেননি, ৮০ বলের মাথায় পৌঁছে যান আরাধ্য তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। সেই রাজিথার বলেই শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন তিনি, তবে এর আগে খেলেছেন ৮৭ বলে ১১৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ১২টি চার আর এক ছয়ে সাজানো ইনিংসটিই মূলত ভারতের ৩৭৩ রানের সংগ্রহ গড়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরের শেষ ওয়ানডেতেও সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বিরাট কোহলি। সেদিনও থেমেছিলেন ঠিক ১১৩ রান করে। কাকতালীয় মিলই বটে – পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি, দুই ম্যাচেই ১১৩। ডাবল সেঞ্চুরিয়ান ঈশান কিষাণকে সাথে নিয়ে সেদিন অবশ্য ভারতকে ৪০৯ রানের বিশাল পুঁজি এনে দিয়েছিলেন বিরাট ৷ বলাই যায়, বিরাটের শতক মানেই টিম ইন্ডিয়ার রানের পাহাড়।

শচীন টেন্ডুলকারের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙা যার জন্য ছিল সময়ের ব্যাপার সেই বিরাট কোহলি গত কয়েক বছর ধরে অন্ধকারে হাতড়ে মরেছেন একটা শতকের জন্য। কিন্তু বিরাট কোহলি ঘুরে দাঁড়াতে জানেন বলেই তিনি আজকের ‘কোহলি’৷ তাইতো এশিয়া কাপে আবারো ফিরেছেন স্বরূপে; করেছেন নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। এরপর ওয়ানডে ফরম্যাটে আরো দুইবার পেয়েছেন হেলমেট উঁচিয়ে উদযাপনের উপলক্ষ।

নিঃসন্দেহে বিরাট কোহলি ক্রিকেট আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রগুলোর একটি; বয়সের সাথে সাথে সেই ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিন্দুকদের সেই জ্ঞান থাকলে তো! এক দুই ম্যাচ রান না পেলেই গেল গেল রব উঠে যায় – তবে বিরাট কোহলির তাতে থোড়াই কেয়ার, নিজের মত থাকতে পারেন, খেলতে পারেন বলেই আজ গ্রেট দের কাতারে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি।

সামনেই ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ঘরের মাঠে বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর পুরো ভারত। বহুল আরাধ্য এই স্বপ্ন পূরণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে বিরাট কোহলিকে। ‘রান মেশিন’ কিংবা ‘চেজ মাস্টার’ দুই ভূমিকাতেই তাঁকে প্রয়োজন হবে টিম ইন্ডিয়ার। এই মহাতারকাও সেটা ভালোই জানেন, হয়তো তিনিও অপেক্ষা করছেন বড় মঞ্চে আরেকবার জ্বলে ওঠার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link