More

Social Media

Light
Dark

মেসি-সুয়ারেজ, বন্ধুত্ব চির অমলিন

একটা সময় ফুটবল বিশ্বে ‘এমএসএন’ নামক একটা ত্রয়ী প্রতিপক্ষের ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে ভক্ত-সমর্থকদের আনন্দ দিতেও ছিলনা কোন কার্পণ্য। ফুটবলকে সামান্য হলেও নিজের মধ্যে ধারণ করা ব্যক্তিও বারংবার সেই ত্রয়ীর অসাধারণ ফুটবলীয় নৈপুণ্যে বলে উঠেছে, ‘বাহ! দারুণ!’ লিওনেল মেসি, লুইজ সুয়ারেজ ও নেইমারকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল ভয়ংকর সে ত্রয়ী।

স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে একসময় মাঠ মাতিয়েছে এরা তিনজন। একটা লম্বা সময় একে অন্যের পরিপূরক হয়েছেন মাঠে। আর তাদের বন্ধুত্বটা হয়েছে আরও গাঢ় মাঠের বাইরে। এবারের বিশ্বকাপটা ধরে নেওয়ার হচ্ছে কিংবদন্তি তারকাদের হারিয়ে যাওয়ার মিছিল। সেই তালিকায় রয়েছেন লুইজ সুয়ারেজ। উরুগুয়ে জাতীয় দলের হয়ে এবারই শেষ বিশ্বকাপটা খেলে ফেলেছেন সুয়ারেজ। কান্না জর্জরিত তাঁর মুখখানা বিষাদের একটা বাতাস ছড়িয়ে দিয়েছে সমগ্র ফুটবল অঙ্গনে।

আধুনিক যুগে সেরা স্ট্রাইকরদের একজন সুয়ারেজ। কোন রকম বিতর্কের বিন্দুমাত্র জায়গা নেই এখানে। সুয়ারেজ নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারটা সমৃদ্ধ করে রেখেছেন বহু অর্জনে। তবে জাতীয় দলের হয়ে তেমন কোন সফলতা এসে ধরা দেয়নি তাঁর কাছে। শূন্য হাতেই তিনি জাতীয় দলের জার্সিটা তুলে রেখেছেন উরুগুয়ের এই নাম্বার নাইন। অঝোড়ে কেঁদেছিলেন, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার দিনে। তবে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধুর সাফল্যে নিজেও হয়েছেন বেশ গর্বিত।

ads

লুইজ সুয়ারেজ যেটা পারেননি, সেটা করে দেখিয়েছেন লিওনেল মেসি। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান তিনি ঘটিয়েছেন বিশ্বকাপ শিরোপা নিজের করে নিয়ে। বহু কাছে থেকেও তাঁকে ফিরতে হয়েছে। তবে তিনি শেষমেশ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেই ফেলেন। বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রশংসা আর অভিনন্দনের জোয়াড়ে ভেসে গেছেন মেসি। তাঁর ভক্তদের ভালবাসায় যেমন সিক্ত হয়েছেন, তেমননি ফুটবল বোদ্ধা থেকে শুরু করে ফুটবল সংশ্লিষ্ট বহু মানুষ তাঁকে অভিবাদন জানিয়েছে।

কিন্তু মেসির আনন্দটা যেন আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন লুইজ সুয়ারেস। বিশ্বকাপ জয়ের পর উদযাপনে ব্যস্ত ছিল গোটা আর্জেন্টিনা দল। দলের মধ্যমণি মেসিও তাঁর ব্যতিক্রম নন। গোটা ড্রেসিং রুমটা পরিণত হয় এক উল্লাসের মঞ্চে। চারিদিকে হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেচামেচি। এর মাঝেই মেসির কাছে ফোন আসে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু লুইজ সুয়ারেজের। মেসি কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই সে ফোনে কথা বলেন সুয়ারেজের সাথে। সকল উদযাপনকে পাশে রেখে।

আর তাতেই মেসির বিশ্বকাপ জয়ের পর, আরও একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় গোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মেসির সাথে ভিডিও কলে কথা বলা সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেন সুয়ারেজ তাঁর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। সেখানে সুয়ারেজ লেখেন, ‘তুমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’। এই ছোট একটুখানি কথোপকথন ও একটি পোস্ট প্রবলভাবে ইতিবাচকতার বিস্তার ঘটাতে পারে। এটাই প্রমাণ করে ফুটবলের সকল বৈরিতার উর্ধ্বে গিয়ে সুয়ারেজ আর মেসির বন্ধুত্বটা ঠিক কতটা মজবুত।

তাছাড়া সুয়ারেজও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। নিজের সবচেয়ে খারাপ দিনেও বন্ধুর সফলতার প্রশংসা করা যায়। তাঁর খুশির দিনের অংশীদার হওয়া যায়। তাছাড়া নেইমারও তাঁর ক্লাব সতীর্থ ও বন্ধু লিওনেল মেসিকে অভিবাদন জানাতে পিছপা হননি। যদিও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল প্রেক্ষাপটে তাঁরা দুইজন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী দলের অন্যতম প্রধান সদস্য।

নেইমারও খুব করে চাইছিলেন এবারের বিশ্বকাপটা জিততে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর করা দুর্দান্ত এক গোলের পরও বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে সেলেসাওদের। সে দুঃখ ভুলে তিনি মেসির শিরোপা জয়ের অভিবাদন জানিয়েছেন। এভাবেই সকল কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে টিকে যায় বন্ধুত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link