More

Social Media

Light
Dark

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের গুরুত্ব কতখানি?

৩২ টা দলটা থেকে ১৬। এরপর ১৬ থেকে ৮, তারপর ৮ থেকে ৪। বিশ্বকাপ ফুটবল তার গতিতে এগিয়ে যায়। সেই সাথে অনেক হাসি, কান্না, আনন্দ, উন্মাদনার জন্ম দিয়ে দ্বিগুণ হারে প্রতিটা রাউন্ডেই সিংহভাগ দলের বিদায় হয়।

শেষ পর্যন্ত শিরোপা দৌড়ে টিকে দুটি দল। আর শেষের আকর্ষণটা থাকে ঐ দুই দলের গ্রান্ড ফিনালকে ঘিরেই। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে ফাইনাল ম্যাচ ছাড়াও আরেকটি ম্যাচের দেখা মেলে। যে ম্যাচের গুরুত্ব নিয়ে রয়েছে প্রচুর বিতর্ক, অনেকের মতে সেটা, অতিরঞ্জিত ম্যাচ। সেই ম্যাচটা হল – তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা কি? সহজভাবে বললে সেমিফানালে হারা দুই দলের মধ্যকার একটি ম্যাচ। যে ম্যাচে নির্ধারিত হবে কারা হতে যাচ্ছেন এ বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা দল। এবারের কাতার বিশ্বকাপে এই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা হবে ক্রোয়েশিয়া আর মরক্কোর মধ্যে।

ads

প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছিল ক্রোয়েশিয়া। আর দ্বিতীয় সেমিতে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল মরক্কো। আর এই দুই পরাজিত দল নিয়েই ফাইনালের আগে একটি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ হতে যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বকাপ ফুটবলে এই ম্যাচটার গুরত্ব কী? এমনিতে তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। তবে ইতিহাস বলে, ১৯৫৪ বিশ্বকাপ থেকে এই ম্যাচের প্রচলন শুরু হয়েছিল। সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতাতেই এ ম্যাচটি এতদিন হয়ে আসছে।

আরেকটি কারণ হলো, অলিম্পিকে যেমন ব্রোঞ্জ মেডেলের জন্য বিজীত দুই সেমিফাইনালিস্ট নিয়ে ম্যাচ হয়, ফিফাও ঠিক সেই আদলেই এই ম্যাচটা আয়োজন করে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো, ফিফার লভ্যাংস আর প্রাইজমানি। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী এ ম্যাচে স্পন্সর ও সম্প্রচার স্বত্ত্ব থেকে ফিফা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্ক আয় করে। আর এ ম্যাচজয়ের উপরে প্রাইজমানিও কিছুটা নির্ভর করে।

যারা এ ম্যাচটি জিতবে তারা তৃতীয় হওয়ার সুবাদে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে আর ব্রোঞ্জ মেডেলও নিশ্চিত করবে। আর যারা এ ম্যাচটিতে পরাজিত হবে তারা মেডেল না পেলেও ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে।

তবে প্রাইজমানির এ সামান্য তারতম্য থাকলেও কোনো দলই এমন ম্যাচে খেলতে চাননা। মূলত দুই দলেরই বিশ্বকাপ মিশন শেষ হওয়ার পরে এমন ম্যাচ অতিমাত্রায় আনুষ্ঠানিকতার জন্ম দেয়। তাই এমন ম্যাচ নিয়ে মরক্কো আর ক্রোয়েশিয়ার কোনো কোচই সন্তুষ্ট নন।

কারণ ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ৭ টা ম্যাচ খেলানো তাদের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জের। মরক্কোন কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই তাই এ ম্যাচটা নামমাত্র আনুষ্ঠানিকতা মেনেই একাদশ সাজাবেন সাইডবেঞ্চে বসে পুরো বিশ্বকাপে তেমন সুযোগ না পাওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে।

মরক্কোর ২৬ সদস্যের স্কোয়াডে এখন পর্যন্ত ৪ জন মাঠে নামারই সুযোগ পাননি। রেগ্রাগুই তাই শেষ ম্যাচে তাদেরকে ঘিরেই একাদশ সাজাবেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিশ্বকাপে নিজেদের দারুণভাবে মেলে ধরতে পেরেছিল। আমাদের স্কোয়াডটা বেশ তারুণ্যনির্ভর। শেষ ম্যাচে তাই সেই ধারা অব্যাহত রাখারই পরিকল্পনা থাকবে। তবে যারা পুরো টুর্নামেন্টে কম সুযোগ পেয়েছে তাদের নিয়েই আমি দল সাজাবো।’

ক্রোয়েশিয়ায় ব্যাপারটা আবার পুরোটাই উল্টো। মরক্কো তারুণ্য নির্ভর দল হলেও ক্রোয়েশিয়া এবার বিশ্বকাপে এসেছিল অভিজ্ঞতায় ঠাঁসা এক স্কোয়াড নিয়ে। যাদের অনেকেরই এই বিশ্বকাপই শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। তাই ক্রোয়াট কোচ ডালিচ তাদেরকে ঘিরেই পরের ম্যাচে পরিকল্পনা আঁটছেন।

তিনি বলেন, ‘তারা অনেক কিছু অর্জন করেছে। আর ক্রোয়েশিয়ার এ দলটাই আমাদের সোনালি প্রজন্ম। তাই আমি তাদের বলেছি, ম্যাচটা জেতো, ব্রোঞ্জ মেডেল নিয়ে বাড়ি ফেরো। ক্রোয়াট সমর্থকদের জন্য সেটি ইহবে দারুণ কিছুর উৎস।’

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের নিরুত্তাপ বিষয় সম্ভবত এটিই। দুই দলের মাঝে কোনো বাকযুদ্ধ নেই। দুই দলই চাইবে ম্যাচটা জিতে শেষ করতে। কিন্তু সেই ম্যাচ আদৌতেও বিশেষ তেমন কিছু যোগ করে না। সেটা খেলোয়াড়রা জানেন, কোচরাও জানেন। এবারের তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচটা আবার একটু অন্যরকম। কারণ, মুখোমুখি দু’দল মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। তবে সে ম্যাচের ফল হয়েছিল গোলশূন্য ড্র।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link