More

Social Media

Light
Dark

বিজয়ের অশ্রুতে সিক্ত হবেন মেসি!

শান্ত, সৌম্য, তটস্থ- লিওনেল মেসির চিরায়ত স্বভাব বলতে এগুলোকেই ধরা হয়। কখনোই সাত পাঁচের মধ্যে থাকেন না। মাঠে ফুটবলটা উপভোগ করেন। ব্যস। ঐ টুকুতেই শেষ। মাঠের মেসিকে রূদ্রমূর্তিতে দেখা গেছে খুব কমই। আর এই শান্ত, সুন্দরের আতিশায্যে অনেক সময় সমালোচিতও হয়েছেন তিনি। তাঁর লিডারশিপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারংবার। বার বার বিদ্ধ হয়েছেন নিজের দেশ আর্জেন্টিনাকে কিছু না দিতে পারার ব্যর্থতার সমালোচনায়।

তবে সেই শান্তমূর্তিতে মুহ্যমান মেসিকে এবার দেখা গেল রূদ্রমূর্তিতে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে মেসিকে যে রূপে দেখা গিয়েছে তা বোধহয় পুরো ক্যারিয়ার খুঁজেও পাওয়া যাবে না। মাঠের মেসি খ্যাপাটে উদযাপন করছেন, হট্টগোলে নিজের সতীর্থদের আগলে রেখে প্রতিপক্ষের উপর আঙুল তুলে কথা বলছেন, ডাচ ডাগআউটে গিয়ে চুপ করার ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন- এমন সব রুক্ষ, আগ্রাসী মেসির দৃশ্যায়ন হয়েছে এই ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচেই। অবস্থাদৃষ্টে এমন হয়েছে যে, ডাচ-আর্জেন্টাইনদের এ যুদ্ধকে অনেকে আখ্যাই দিয়ে ফেলেছেন ‘ব্যাটল অব লুসাইল’ নামে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মেসি নামের সাথে এমন আচরণ কিংবা আগ্রাসনটা কি ঠিকঠাক যায়? ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পরে মেসির দাদা এক টেলিভিশনে গিয়ে মেসির সমালোচনা করে তাঁকে ‘লেজি’ তকমা দিয়েছিলেন। আসলে নশ্বর এ পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান ধারায় এক নাগাড়ে শান্ত পরিস্থিতিতে আমাদের ক্লান্তি চলে আসে। সেটা মাঝেমধ্যে বিরক্তিতেও রূপ নেয়।

ads

তাই দুই বিশ্বকাপের অতীত ইতিহাস নিয়েও মেসির বারবার ব্যর্থতায় নিশ্চুপ থাকা অনেককেই বিরক্তিতে ফেলেছিল। বিরক্তি ফেটে তাই সে সব সময়ে সমালোচনায় রূপ নিতেও সময় লাগে নি। এখন মেসির এমন খ্যাপাটে ভঙ্গিমাতেও আবার সমস্যা। কারণ গোটা বিশ্ব এমন মেসিতে অভ্যস্ত নয়। তাই এ সময়েও মেসির দিকে সমালোচনা নিশ্চিতভাবেই ধেয়ে আসবে।

নিশ্চুপ থাকাতেও সমালোচনা, কণ্ঠস্বর উঁচু করাতেও বিতর্কের শেষ নেই। কী অদ্ভুত এক বেড়াজাল। কিন্তু দিন শেষে কিংবদন্তিদের এমন সব বেড়াজালের ভিতর দিয়েই যেতে হয়। সেটা প্রতিষ্ঠিত কোনো নিয়ম নয়। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত ধারায় এ নিয়ম প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। সম্ভবত মেসিও সেই চিরায়ত ধারা ধরেই এগোচ্ছেন।

গ্রেটনেসের পথ যাত্রার চিরন্তন ধারা বাদ দেওয়া যাক। মেসি আর্জেন্টিনার ঐ আকাশী নীল জার্সির জন্য কতটা নিবেদিত থাকেন তার একটা উদাহরণ টানা যেতে পারে। গত বছর ব্রাজিলের মাটিতে কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার ২৭ বছরের শিরোপা খরা কেটেছিল ঐ বারেই। মেসি অশ্রুসিক্ত হলেন। সে সব পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু নিজ দেশের সামনে যখন শিরোপা নিয়ে অফিশিয়াল উদযাপন করলেন তখন মেসিকে দেখা গেল, হাউমাউ করে কাঁদছেন তিনি।

কারণটা গোটা দেশ শুধু মেসি মেসি করেছে সেদিন। স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক শুধু সেই গর্জনেই সুর তুলেছে। মেসির জন্য দর্শকদের উচ্ছ্বাস নতুন কিছু নয়। কিন্তু দেশকে ট্রফি জিতিয়ে সেটিই যে প্রথম দৃশ্য। তাই ট্রফির ক্যাবিনেট পূর্ণ মেসি কিংবা ব্যক্তিগত অর্জনে মহীয়ান মেসি এমন নতুন দৃশ্যে নিজেও কান্নায় ডুবেই গিয়েছিলেন।  মেসির সে অশ্রু ছিল বহুল প্রতীক্ষিত এক বিজয়ের।

গ্রেটনেস কিংবা লিডারশীপ নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্ক হয়েছে এই মেসিকে নিয়েই। আর সেগুলো হয়েছে ঐ ধারা মেনেই চূড়ান্ত এক মন্তব্য রূপায়ণের ফলে। কিন্তু মেসি লিডার হিসেবে তো আগেও সফল ছিলেন। যারা শিরোপার রেসে ফাইনাল পর্যন্ত যায় তারা কি ব্যর্থ? মেসির নেতৃত্বে সেই কাজটা আর্জেন্টিনা করেছে টানা তিনবার।

কিন্তু, ভাগ্য সহায় হয়নি। আর ঐ যে আমাদের চিরায়ত ধারার মত, টানা এমন সব দৃশ্যে একটা বিরক্তি চলে এসেছিল। আর তাতেই তির্যক সমালোচনার মুখে পড়ে গিয়েছিলেন মেসি। বাস্তবতা নিরিখে মেসি বারবার এখানেই দিন শেষে আটকে গিয়েছিলেন।

কোপা জয় না হলে হয়তো সেই সমালোচনার স্রোত এখনও প্রবাহমান থাকত। দিন শেষে সেটি হয়নি। মেসি জিতেছেন, জিতিয়েছেন দেশকে, জেতানোর পথেও আছেন। আর পুরো দলটার উৎসবের কেন্দ্র হয়েই আছেন এই মেসি। লিডারশিপ নিয়ে তাই মেসিকে এখন আর খাটো করার সুযোগ নেই। বিন্দুমাত্রও নেই।

আর মাত্র দুটি জয়। মেসির সারাজীবনের আক্ষেপ মিটে যাবে এই দুই ম্যাচ জয়েই। হ্যাঁ। পথটা এখনও কঠিন। তবে বন্ধুর পথ মসৃণ করার সক্ষমতা রয়েছে এই দলটার। শেষ বারের মত মেসি সেই দলটার আগ্রাসনের জন্য তাই তাকিয়ে থাকতেই পারেন। কাতার বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত কিংবদন্তিদের অশ্রসিক্ত চোখে প্রস্থান দেখেছে। শেষের অশ্রুটা না হয় একজন কিংবদন্তীর বিজয় দিয়েই হোক। হবে কি! আপাতত গোটা বিশ্বের চোখ সেদিকেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link