More

Social Media

Light
Dark

যেভাবে হেক্সা স্বপ্নের মৃত্যু!

মিনিট সত্তর পেরিয়ে গেছে ততক্ষণে। গোলের দেখা নেই কোনো দল থেকেই। ক্রোয়াট কোচ ডালিচ ক্রামারিচকে মাঠ থেকে উঠিয়ে তাঁর জায়গায় নামালেন পেটকোভিচকে। কোচের ঐ এক টোটকাতেই ব্রাজিলের এক বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের যেন অপমৃত্যু হয়ে গেল।

নব্বই মিনিট শেষে গোল নেই। এর মাঝে পেটকোভিচ পেলেন হলুদ কার্ড। সেই মুহূর্তটা আরো বিষণ্নতায় রূপ নেয় যখন অতিরিক্ত যোগ করা ৩০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়া একটি গোল হজম করে বসে।

নেইমারের দারুণ এক গোলে জয় থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরে ছিল ব্রাজিল। কিন্তু ঐ ১৫ মিনিটেই স্বপ্নের পথটা ভঙ্গুর হয়ে যায়। অপ্রত্যাশিত ভাবে ১১৭ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার ত্রাতা হিসেবে হাজির হন সেই পেটকোভিচ। দারুণ এক শটে ব্রাজিলের রক্ষণ ভেঙে অ্যালিসন বেকারের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে গোল করেন তিনি। আর এখানেই ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ফিরে আসে। ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শ্যুটআউটে।

ads

শেষবারের বিশ্বকাপে যখনই অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গিয়েছে সে সব ম্যাচ গুলোতে কখনোই ম্যাচ হারেনি ক্রোয়েশিয়া। এবারও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলো ক্রোয়াটরা। আর পেটকোভিচের বাঁচানো গোলের পর ম্যাচ জেতার দায়িত্বটা নেন ডমিনিক লিভাকোভিচ।

আগের ম্যাচেই পেনাল্টি শ্যুটআউটে রেকর্ড ৩ টি সেভ করে জাপানকে বলতে গেলে একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন লিভাকোভিচ। এবার সেই সুতোটা শক্ত করে টেনে এনেছেন ব্রাজিল ম্যাচেও। মূলত রদ্রিগোর পেনাল্টি সেভ করেই ক্রোয়েশিয়াকে প্রথম এগিয়ে দেন তিনি। অবশ্য তাঁর আগে ব্রাজিল গোলবারে বল জড়িয়ে পেনাল্টির স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছিলেন ভ্লাসিচ।

প্রথম পেনাল্টি শট মিস করার পর আর ফিরে আসতে পারেনি ব্রাজিল। কারণ ক্রোয়াটদের একের পর এক শট ঠেকাতে এ দিন ব্যর্থ ছিলেন অ্যালিসন বেকার। অপরদিকে প্রথম শট ঠেকিয়ে ব্রাজিলকে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লিভাকোভিচ।

ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ শট নিতে এসেছিলেন মার্কিনিওস। আর ঐ শটেই ব্রাজিলের পরাজয় নির্ধারিত হয়ে যায়। কারণ মার্কিনিওসের বামে বাড়ানো শটটি গোলবারের লেগে ফিরে আসে। মূলত বারে ধাক্কা খাওয়া বলটি ব্রাজিলের স্বপ্নেও নির্মক এক ধাক্কা লাগে। হেক্সাজয়ের স্বপ্নে কাতারে পাড়ি জমানো ব্রাজিলের ঐ শটের পরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়। এ স্বপ্নভঙ্গের দৃশ্য নির্মম।

তবে ফুটবলটা তো এমনই। এক দলের স্বপ্ন ফিকে হওয়ার দিনে আরেক দলের নতুন স্বপ্নের উদয় হয়। ক্রোয়েশিয়ার জন্যও তাই এ রাত দারুণ এক স্বপ্ন মঞ্চায়নের রাত। ৮ বছর আগে এই ব্রাজিলের কাছে হেরেই তো গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছিল তারা। এবার সেটা প্রতিশোধের মঞ্চ হয়ে রইল নাকি এগিয়ে যাওয়ার বার্তা হয়ে আসলো ফুটবল বিশ্বের কাছে তা নিয়ে এখন নিশ্চিতভাবেই কাব্যগাঁথা হতে পারে।

ক্রোয়েশিয়া অবশ্য গত বিশ্বকাপেই একটা কাব্য রচণা করেছিল। তথাকথিত সব হট ফেবারিটদের টপকে গিয়েছিল ফাইনালের মঞ্চে। অবশ্য ফ্রান্সের কাছে হেরে সে স্বপ্নের শিখরে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা। তবে এবার সেই পথেই আছে ক্রোয়াটরা। আগের বারের ফাইনালিস্ট উঠে এলো এবার সেমি ফাইনালে।

আর দুটি ধাপের প্রতিকূলতা টপকানো প্রয়োজন শুধু। মদ্রিচ, পেরিসিচ, লিভাকোভিচদের নিয়ে গড়া দলটার সেই সক্ষমতা আছে। ফাইনালে ওঠার ইতিহাস তো আগেই গড়েছিল তারা। এবার সেই রাশিয়া বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি নিশ্চিতভাবেই ঘটাতে চাইবে ক্রোয়াটরা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link