More

Social Media

Light
Dark

এই ব্রাজিলকে হারাবে কে!

টোটাল ফুটবলের শুরুটা হয়েছিল হাঙ্গেরির হাত ধরে। ফুটবল মানচিত্রে সেই হাঙ্গেরি এখন ম্রিয়মাণ হয়ে গেলেও তাদের প্রবর্তিত কৌশল এখনো জনপ্রিয়। যদিও টোটাল ফুটবলের পূর্ণতা এসেছিল ডাচদের মাধ্যমে।

হঠাৎ টোটাল ফুটবলের ইতিবৃত্ত নিয়ে পড়লাম কেন? কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের পারফরম্যান্সে যেন সেই টোটাল ফুটবলেরই একটি ছাপ অঙ্কিত হল। ফুটবলের পরিভাষায়, পিওর ডমিন্যান্স বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমন একটা কিছুরই মঞ্চায়ন হয়েছিল এ ম্যাচে। এমন ম্যাচের পরে আসলে ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা এ বারের বিশ্বকাপে তাদের শিরোপা স্বপ্ন নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন তোলার কারণ নেই।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে কে ছিলেন সেরা পারফর্মার? এমন প্রশ্নের উত্তরে ইনডিভিজ্যুয়াল ব্রিলিয়ান্স বের করাটা বড্ড কঠিন। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল একাদশের বলতে গেলে সবাই ছিলেন পারফর্মার।

ads

এমনকি গোলবারের দায়িত্ব সামলানো এলিসন বেকারও ছিলেন দুর্দান্ত। গ্রুপ পর্বের ম্যাচের একটি বারের জন্যও তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। তবে এ ম্যাচে কোরিয়ানরা গোলমুখো শট দিয়েছিলেন বেশ কটি। কিন্তু সব বলই ফিরে এসেছে ‘বেকার’ নামক প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে। সব মিলিয়ে পুরো ম্যাচের ৫ টি সেভ করেছিলেন অ্যালিসন বেকার।

এতো গেল গোলরক্ষকের এবারের বিশ্বকাপে আলস্য ভাঙার গল্প। দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে এমন দৃশ্যপটেরও উদ্ভব হয়েছিল যে  যে, দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার মার্কিনিওস আর থিয়াগো সিলভাও উপরে উঠে বল তৈরির কাজে সহায়তা করেছেন।

আর রাইট উইং থেকে রীতিমত দুর্দান্ত ছিলেন রাফিনিয়া। গোলটাই শুধু পাননি। তবে ব্রাজিলের স্কোরশিটে প্রথম গোলের যোগানদাতা তিনিই ছিলেন। তাঁর বাড়ানো বল থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার জালে বল জড়ান ভিনিসিয়াস।

গোলমুখে এসে বল নিয়ে গুবলেট পাকিয়ে গোল মিস করার একটা বাজে অভ্যাস আছে ভিনির। কিন্তু এ ম্যাচে ভিনিকে দেখা গেল একদম অন্যরূপে। রাফিনিয়া থেকে বল রিসিভ করলেন। কিছুটা সময় নিলেন। এরপর শান্ত হয়ে দিলেন গোলমুখো শট। তাতে বেশ কিছু কোরিয়ান ডিফেন্ডারদের টপকে বল চলে গেল জালের ভিতরে।

ভিনিসিয়াসের ঐ গোলেই তাঁর গল্পটা শেষ হতে পারতো। কিন্তু ব্রাজিল যেমন প্রতি গোলের পর সাম্বা নৃত্যে মেতে উঠেছিল, তেমনি ভিনিও নিজের গোলের পর আরো বেশি ছন্দ পেতে শুরু করছিলেন। তাই ব্রাজিলের চার নাম্বার গোলটার উৎসও তিনিই হয়ে ওঠেন। ডি-বক্সে বল পেয়ে দারুণ এক ক্রস দেন পাকেটাকে। পাকেটাও সেই বাড়ানো বলটি বাড়িয়ে দেন গোলপোস্টের দিকে। আর তাতেই ৩৬ মিনিটের মাঝে ৪ গোলে লিড নেয় ব্রাজিল।

তবে চোখে প্রশান্তি লাগার মতো গোলটি হয়েছিল ব্রাজিলের তিন নম্বর গোলটা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে দারুণ এক ওভারহেড কিক দিয়ে গোল করেছিলেন রিচার্লিসন। অনেকে সেই গোলটিকে এ বিশ্বকাপের সেরা গোল বলেই মানছেন। তবে রিচার্লিসনের এ ম্যাচের গোলটা যেন সেটিকেও ছাপিয়ে গেল।

কী ছিল না এ গোলটায়! অসাধারণ স্কিল, সাথে ড্রিবলিং, মার্কিনিওসের সাথে বল নিয়ে বোঝাপড়া, এরপর থিয়াগো সিলভার কাছে বল দিয়ে আবার রিসিভ করে দারুণ এক ফিনিশিং। একটা গোলে যত ধরনের রসদ থাকা প্রয়োজন ছিল তার প্রতিটাই উপস্থিত ছিল এই গোলটায়।

সবশেষ, নেইমার। যার উপস্থিতিই ছিল এ ম্যাচের প্রাণ। ইনজুরি থেকে ফিরে আসলেন, সাথে ব্রাজিলও যেন তাদের চিরায়ত খেলায় ফিরে এলো। ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটা এসেছিল তাঁর পা থেকেই। ব্রাজিল পেনাল্টি পেয়েছিল। আর তাতেই স্পটকিক থেকে গোল করে কাতার বিশ্বকাপে প্রথম গোলের দেখা পান নেইমার।

পেনাল্টিতেও আবার এক কাঠি সরেস। নেইমারকে বিভ্রান্ত করতে কোরিয়ান গোলরক্ষক একদম বাঁ পাশে ঝুঁকে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো বিকারই নেই নেইমারের। ডান দিকে আলতো করে ছুঁয়ে দিলেন। আর তাতে কোরিয়ান গোলরক্ষকই যেন বোকাবনে গেলেন।

ক্যামেরুন ম্যাচের পর ব্রাজিলকে নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বেশ। প্রশ্ন উঠেছিল, যে দলটা নিয়ে ব্রাজিল এসেছে, তেমন ফল কি আদৌ মিলবে? দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর এখন আর সেই প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। এই ব্রাজিল এক কথায় দুর্দান্ত। আরেকটু আগ বাড়িয়ে বরং এই প্রশ্ন তোলাটাও খারাপ হবে না যে, এই ব্রাজিলকে হারাবেটা কে?

শেষবার ব্রাজিল বিশ্বকাপ পেয়েছিল এশিয়ার মাটিতে। ২০ বছর বাদে, সেই বিশ্বকাপের পর এবারের বিশ্বকাপটাও হচ্ছে এশিয়ার মাটিতে। তাই সেই ঘটনার একটা পুনরাবৃত্তি ঘটনার দিকে চোখ রাখতেই পারে সেলেসাওরা। প্রতি গোলের পরে কোচও যখন উদযাপনে অংশ নেন সাম্বা নৃত্যের মাধ্যমে, তখন বলাই যায়, এই দলটা এক সুতোয় নিজেদের বেঁধে শিরোপা জয়ের জন্য একদম মুখিয়ে আছে।

তবে কি বিশ বছর আগের সেই রোনালদো, কাফুদের ফ্রেমবন্দী হওয়া স্থিরচিত্রগুলোর একটা অনুরূপ দৃশ্যায়ন হবে এবারের কাতার বিশ্বকাপে? আবারো কি সাম্বা নৃত্যের মুর্ছনায় মাতবে ব্রাজিল সমর্থকরা?

অসম্ভব নয়। যেমন দাপুটে পারফরম্যান্স ব্রাজিল এবার দেখাচ্ছে তাতে সেটা বরং খুব সম্ভবই। তবে এই নিপুণতার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। বেশি না। আর তিনটি ম্যাচে এমন পারফর্ম্যান্স দেখালেই বহুল আকাঙ্খিত হেক্সাচক্র পূরণের পথে এগিয়ে যাবে ব্রাজিল। আর সেটি হলে, ব্রাজিলের একটা নতুন প্রজন্ম ঐ সোনালি ট্রফির স্পর্শ পাবে। পূর্বসূরিদের সমৃদ্ধ ইতিহাস রক্ষা করতে এই স্পর্শটা যে আসলেও তাদের ভীষণ প্রয়োজন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link