More

Social Media

Light
Dark

বিশ্বকাপের ফ্রান্স বিস্ময়

দিদিয়ের  ফ্রান্সকে নিয়ে ছোট্ট করে করে ফেলি?

ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক দল একটা বিস্ময়। ফ্রান্স দলে আর সুযোগ পান না, তাঁদের নিয়ে যদি একটা দল গঠন করি, তাহলেও সেই দলটা হাসতে হাসতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল চলে যাবে।

স্টপার ব্যাক অপশনই দেখুন। জুলস কুন্ডে, উপমেকানো, ইব্রাহিম কনোতের সঙ্গে রয়েছেন রাফায়েল ভারান। প্রেসনেল কিম্পেম্বে না থাকলেও। মাঝ মাঠটাই একটা চিন্তার জায়গা। পগবা, কান্তে না থাকায় যদিও শুয়েমেনি, র‍্যাবিয়ট এবং কামাভিঙ্গা আছেন। তবুও এঁদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কম।

ads

ফরোয়ার্ড লাইনটা ভাবুন। করিম বেনজেমা নেই, গতবারের ব্যালন ডি’অর। প্রতিভাবান এঙ্কুঙ্কু নেই। তবু তাঁদের জায়গায় খেলছেন জিরু, এম্ব্যাপে, ডেম্বেলে, কিংস্লে কোম্যান। সঙ্গে আছেন লিলিয়াম থুরামের ছেলে। আর গ্রিজম্যানের প্রতি দেশ্যমের ভালোবাসাই অন্যরকম।

বার্সায় বা অ্যাটলেটিকোতে ফর্মে না থাকলেও গ্রিজমানকে ড্রপ করবেন না দেশ। বেনজেমা খেললে কী হত জানি না। কিন্তু না খেলায় টপ অব দ্য বক্সে পারফেক্ট ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে রয়েছেন জিরু, দুদিক দিয়ে ডেম্বেলে এবং এম্ব্যাপে। আর নিচে মাঝমাঠে আট নম্বরের জায়গায় গ্রিজমান খেলছেন। র‍্যাবিয় বক্স টু বক্স আর তাঁর পেছনে শুয়েমেনি।

সমস্যা একটা হতে পারত লুকাস হার্নান্দেজের চোটে, কারণ লুকাস দেশ্যমের ডিফেন্ডারদের মধ্যে সবথেকে ভার্সাটাইল। রক্ষণে যেমন আক্রমণেও। লেফট ব্যাক বা লেফট স্টপার হিসাবেও খেলতে পারেন। তাঁর ভাই থিও অবশ্য আক্রমণত্মক লেফট ব্যাক। লুকাস খেললে ও বেনজেমা খেললে থিওকে বাঁদিকে রেখে হয়তো গ্রিজমানকে মাঝ মাঠের ডানদিকে খেলিয়ে দিতেন দেশ। যাতে এমব্যাপের অফ দ্য বল রানটার একটা জুড়ি পাওয়া যায় এবং গ্রিজমান ডানদিকে পিভটের কাজটা করতেন। যেটা আর্জেন্টিনায় ডি মারিয়া করেন। তবে গ্রিজমানকে সাহায্য করার জন্য ডানদিকে পাভার্ড থাকতেন।

কাল কিন্তু পাভার্ড খেলেননি, জুলস কুন্ডে খেলেছেন। যাঁর আক্রমণাত্মক ক্ষমতা অতট আনা হলেও অব দ্য বল টেকনিক্যালি খুবই স্ট্রং। বার্সাতেও মাঝে মধ্যে জাভি খেলাচ্ছেন ওখানে। আর ডেম্বেলে গ্রিজমান থাকলে রাইট ব্যাকের ওঠার দরকার পড়বে না তো।

ডেনমার্কের ডিফেন্স খুব আঁটোসাঁটো এবং কোনও অবস্থাতেই শেপ হারায় না। আর বাম এবং ডানদিকের চ্যানেলে দুই উইঙ্গার ও দুই উইং ব্যাকের মুভমেন্ট খুব ভাল। লুকাস থাকলে তিনি এবং জুলস কুন্ডে থাকতেন। কিন্তু আজ প্রয়োজনে তিন ব্যাকে চলে গেলে, কুন্ডে নিচেই থাকছেন, উপমেকানোকে নিয়ে ভারান মাঝে ও বামদিকে। উপমেকানোর উপস্থিতি দরকার ছিল কারণ লম্বা লম্বা ডেনরা সেটপিসে দুর্দান্ত, উপমেকানোর লো লাইনে উপস্থিতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মাঝমাঠে এরিকসনের ফ্লুইড মুভমেন্ট ধ্বংস করার জন্য চৌমেনিকে রাখা ছিল। আর র‍্যাবিয়ট বাঁ পায়ের হবার দরুণ থিও ও কিলিয়ানের সঙ্গে একটা বামপ্রান্তিক বোঝাপড়া গড়ে তুলেছিলেন।

প্রথমার্ধে ডেম্বেলে বেশ জ্বালালেও, ডেনরা নিজেদের ডিফেন্সিভ শেপ হারায়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গ্রিজমান বড় বড় বল বাড়াতে শুরু করলে এমব্যাপে জায়গা পেতে শুরু করলেন। অফ দ্য বল কিলিয়ান এমব্যাপে ও আলফান্সো ডেভিসের গতি বোধহয় বিশ্ব ফুটবলে সবথেকে বেশি। আর তার সঙ্গে কিলিয়ানের গোল করার উদগ্র ইচ্ছা।

কিলিয়ান এমব্যাপে। অনেক সমস্যা আছে তাঁর, ইগোর সমস্যা, মনোমত কিছু না হলে খেলা থেকে হারিয়ে যাবার সমস্যা। কিন্তু সবুজ গালিচায় পা পড়লে এবং সব কিছু যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে কিলিয়ান এমব্যাপের জুড়ি বিশ্ব ফুটবলে কেউ নেই। অদ্ভূত ব্যালান্স বোধ, চকিত গতি বাড়াবার ক্ষমতা, ডিফেন্ডারকে সরাসরি ড্রিবল করার ইচ্ছা এবং ক্ষমতা আর যেনতেন প্রকারেণ বল তেকাঠিতে রাখার ক্ষমতা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সঠিক টেকনিক ব্যবহার করায় দুপায়ের শটে অত্যাশ্চর্য গতি।

এই ফ্রান্স ২০১৮ সালের ফ্রান্সের মত আঁটোসাঁটো নয়। ভারানের বয়স হয়েছে, কান্তে নেই। নেই পোগবার ক্রিয়েটিভিটি। কিন্তু কিলিয়ান রয়েছেন, যিনি বর্তমান পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের একজন। রয়েছে ডেম্বেলের গতি এবং দুপায়ে সমান দক্ষতা। জিরুর হোল্ডআপ প্লে এবং গ্রিজমানের পিভটে ভরসা। আর সর্বোপরি রয়েছে দিদিয়ের দেশ্যম। ট্রফি কীভাবে তুলতে হয় তাঁর থেকে ভাল কেউ বোধহয় আন্তর্জাতিক ফুটবলে কেউই জানেন না।

এই ফ্রান্স গতিশীল ক্রিয়েটিভ দলের বিরুদ্ধে আটকে যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা ডিঙিয়ে যেভাবে দুর্বার গতিতে ছুটছে তাতে ইংল্যন্ড বা পর্তুগালের একটা দুর্দান্ত দলগত পারফরম্যান্সই তাদের আটকাতে পারে। আর না হলে? গতবারের মত ফাইনাল বাঁধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link