More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

সার্বিয়ার যুদ্ধ জয়ে, অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে

মিলোস দেগেনেক যুব পর্যায়ে সার্বিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া – দুই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু তাঁর জন্মস্থান তৎকালীন যুগোস্লোভিয়ার ক্রোয়েশিয়ায়। শেষমেশ অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের হয়েই ২০১৬ সালে অভিষেক ঘতে তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে খেলছেন চলমান বিশ্বকাপেও। মিলোস দেগেনেককে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন তিনি যুব পর্যায়ে সার্বিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া উভয় দেশে খেলেও, অস্ট্রেলিয়াকে বেঁছে নিয়েছেন। উত্তরে উঠে আসে তাঁর জীবনের অজানা এক গল্প।

মিলোস দেগেনেক বলেন, ‘আমি সার্বিয়ার হয়ে খেলার যোগ্য ছিলাম। তবে আমার অস্ট্রেলিয়ার প্রতি দারুণ কৃতজ্ঞতাবোধ রয়েছে। কারণ অস্ট্রেলিয়া আমার পরিবারকে ঠিকানা দিয়েছিল, আমার পরিবারকে কাজের জায়গা দিয়েছিল, বাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার এই ঋণ আমি অন্যভাবে শোধ করতে সক্ষম নই। তাই, আমি যা করতে পারি তা হলো এই দেশের জার্সিতে নিজেকে উজাড় করে দেয়া। আমার প্রতিভাকে এই দেশেই কাজে লাগানো, এই দলের নহয়ে জেতার চেষ্টা করা।’

মিলোস দেগেনেক জন্মের পর থেকেই যুদ্ধ দেখে বড় হয়েছেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র আঠারো মাস তখন তখন তাঁর পরিবার ক্রোয়েশিয়া থেকে বেলগ্রেডে পালিয়ে যায় ‘যুগোস্লোভ গৃহযুদ্ধক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতার যুদ্ধ’ এর ফলে। প্রায় নয়দিন ধরে একটি ট্রাক্টরে চড়ে, কেবল কিছু শুকনো খাবার ও দুটি স্যুটকেস সঙ্গী ছিল পরিবারটির। তবে বেলগ্রেডে গিয়েও শান্তিতে থাকতে পারলেন না দেগেনেকরা। বেলগ্রেডে শরনার্থী হিসেবে অবস্থান করাকালীন মাত্র ছয় বছর বয়সে পরিবারটি আবার কসোভো যুদ্ধের শিকার হয়। তখন ন্যাটো বাহিনী শহরটিতে বোমাবর্ষণ শুরু করে।

ads

মিলোস দেগেনেক বলেন, ‘আপনি এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে না গেলে, এর ভয়াবহতা অনুমানও করতে পারবেন না।’ দেগেনেকের পরিবার তখন অন্ধকার জানালাহীন ভূগর্ভস্থ একটি বাংকারে আশ্রয় নেয়। কোনরকম ক্যানড ফুড খেয়ে অনেকগুলো পরিবারের সাথে বাংকারে তাঁরা পালিয়েছিলেন। দূর থেকে কেবল ভুতুড়ে সাইরেন এবং দূরবর্তী স্থানে বোমার গর্জন শোনা যেত ৷ চারদিকে যুদ্ধ, ধ্বংসস্তূপ, অগ্নিকুণ্ড, ধোঁয়া ছাড়া যেন আর কিছুই ছিলনা। দেগেনেক, তাঁর ভাই ও বাবা-মায়ের সেই ভয়ার্ত চেহারা মনে পড়লে আজো শিহরিত হয়ে পড়েন।

মিলোস দেগেনেকের বাবা দুসান আটশ মিটার দৌড়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রানার ছিলেন। সেই তিনি পরবর্তীতে পরিবারসহ কোনরকমে অস্ট্রেলিয়ায় পলিয়ে আসেন। দুসান অস্ট্রেলিয়ায় এসে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে শুরু করেন এবং তাঁর মা নাদা ডিশওয়াশার হিসেবে কাজ করতেন। দুসান ও নাদা মিলে মিলোস দেগেনেক এবং তাঁর ভাইকে বড় করতে নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

আটাশ বছর বয়সী দুসান সেই দুঃসময়ে তিনি ও তাঁর পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার জন্য দারুণ কৃতজ্ঞ। কারণ এই অস্ট্রেলিয়াই তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নতুন জীবন দিয়েছিল। তিনি এবং তাঁর ভাই এখানেই বিয়ে করে নিজেদের পরিবার গড়তে পেরেছেন।

যদিও সার্বিয়াই দেগেনেকের প্রকৃত ফুটবল উচ্চাকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছিল। কারণ দেশ হিসেবে সার্বিয়া বড্ড ফুটবলপ্রেমী। দেগেনেকের মতে, ‘একজন ব্যক্তি যিনি নরকের মধ্য দিয়ে গেছেন, এবং তা বারংবার, ফুটবলের ক্ষেত্রে তাঁর জয়ী হওয়া আবশ্যক।’

২০০৬ সালে যুগোস্লোভিয়া রাষ্ট্রে ভাঙ্গন ধরে এবং তা থেকে আধুনিক সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্ম হয়। আজ অব্দি পার্পল স্টার বেলগ্রেড এবং পার্টিজান এই দুইটি ক্লাব সার্বিয়া ও যুগোস্লাবিয়ার দন্ধকে টিকিয়ে রাখে। দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সবচেয়ে কুৎসিত প্রচলন ঘটে এই দুইটি ফুটবল ক্লাবের মধ্য দিয়ে।

যেখানে পার্পল স্টার সমর্থকদের সার্বিয়ার সমর্থক হিসাবে এবং পার্টিজানের সমর্থকদের যুগোস্লাভ রাজ্যের সমর্থক বলে ভাবা হয়। এই দুইটি ক্লাবের মধ্যে মারামারি-হানাহানি খুব সাধারণ ঘটনা। ওয়ার্ল্ডওয়াইড জার্নাল অফ হিস্টোরিক্যাল পাস্ট অফ স্পোর্টে ‘অল অব ইট লিড টু ইন এন আনস্পোর্টিং অ্যাপ্রোচ: সার্বিয়ান সকার অ্যান্ড ডিজিন্টেগ্রেশন অব যুগোস্লাভিয়া’ লেখায় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।

মূল কথায় ফিরে আসি। মিলোস দেগেনেক বহু সংগ্রাম করে আজকের এই মিলোস দেগেনেক হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলকে বহুদূর এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর তিনি। অস্ট্রেলিয়ান এই ফুটবলার বেশ ভালো করেই জানেন যে হার মানা যাবে না।

এই যে বিশ্বকাপের আসরে ফ্রান্সের কাছে ১৪ ব্যবধানে তাঁর দল হেরেছে তাতে খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না তিনি। বরং পরের ম্যাচে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে ফিরতে বদ্ধপরিকর ছিলেন তিনি। আর সেই লড়াইয়ে সফলও হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link