More

Social Media

Light
Dark

আর্সেনালের বিস্ময় বালক থেকে বিশ্বকাপের হিরো

ভিনি, ভিডি, ভিসি – এ যেন এলেন, দেখলেন আর জয় করার মত ব্যাপার। ৫৭ মিনিটে বদলি হিসেবে নেমে ৮৩ মিনিটে জয়সূচক গোল করলেন। তাতেই ইতিহাস, ফেবারিট জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো এশিয়ার ব্রাজিলখ্যাত জাপান। আর তাঁদের জয়ের নায়কের নাম তাকুমা আসানো, ওয়ার্ক পারমিটের মারপ্যাঁচে ভেস্তে যেতে বসেছিল যার ক্যারিয়ার। 

তাকুমা আসানোর ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল দারুণভাবে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তাঁকে দলে ভেড়ায় জাপানের সেরা ক্লাব সানফ্রিস হিরোশিমা। প্রথম মৌসুমেই সফলতা না পেলেও ধীরে ধীরে নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে শুরু করেন এই তরুণ। দুই বছরের মাঝেই পরিণত হন দলের সেরা তারকায়। ২০১৫ সালে চার বছরের মাঝে হিরোশিমাকে তৃতীয় লিগ শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি নয় গোল করে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি। 

কেবল ক্লাব নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমানতালে পারফর্ম করছিলেন আসানো। ২০১৬ এশিয়ান অনুর্ধব- ২৩ চ্যাম্পিয়নশীপ ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে জাপান। সেই ফাইনালে জোড়া গোল করেন আসানো। এছাড়া সেই বছরের রিও অলিম্পিকেও তিন ম্যাচে দুই গোল করেন তিনি।  

ads

তাঁর এই দুরন্ত ফর্ম নজরে আসে আর্সেনালের তৎকালীন কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের। জহুরির চোখ দিয়ে হীরে চিনতে ভুল করেননি, জাপানি তরুণকে নিয়ে আসেন এমিরেটস স্টেডিয়ামে। আখ্যা দেন ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে। যদিও সবকিছু একদম সরলপথে যায়নি, শুরুতেই ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ায় বাঁধাগ্রস্থ হয় তাঁর আর্সেনাল অভিষেক।

তবে আর্সেনালের কর্তা ব্যক্তিরা একদম নিশ্চিত ছিলেন ডানপ্রান্ত দাপিয়ে এই ফুটবলার একদিন বিশ্বের সেরাদের একজন হবেন। ফলে কাজের অনুমতি পাবার মাঝের সময়টা যাতে বেঞ্চে বসতে না হয়, সে কারনে লোনে পাঠিয়ে দেয়া হয় জার্মানিতে। 

জাপানিজ গণমাধ্যম তাঁকে আখ্যায়িত করেন ইডেন হ্যাজার্ড এবং থিও ওয়ালকটের মানের ফুটবলার হিসেবে। তাঁরা লিখে, ‘খুবই গতিশীল এবং ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে জায়গা সৃষ্টি করতে জানে। কেবল গোল করা নয়, গোল বানিয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।’

জাপানে তাঁকে ডাকা হয় ‘জাগুয়ার’ নামে। সত্যিই তো বল পায়ে যেন জাগুয়ারের মতই ক্ষীপ্র হয়ে যান আসানো। ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য জাপানের প্রাথমিক দলেও ছিলেন তিনি। তবে ক্যারিয়ারে উত্থানের ন্যায় পতনও আসেন আসানোর জীবনে। ২০১৯ সালেও আর্সেনাল কাজের অনুমতি জোগাড় করতে না পারায় তাঁকে ছেড়ে দেবার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করে।

এছাড়া যে ক্লাবে তিনি খেলতেন সেই হ্যানোভারও তাঁর ব্যাপারে আগ্রহহীন হয়ে পড়ে। আসানোও ধীরে ধীরে আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। বলেন, ‘সেই মৌসুমটা আমার জন্য ভীষণ কঠিন এবং হতাশাজনক ছিল। আমি প্রতিদিন নিজের উন্নতি করতে চাইতাম।’

আসানো বুঝতে পারেন তাঁর নতুন শুরু দরকার। যোগ দেন সার্বিয়ান ক্লাব পার্টিজান বেলগ্রেডে, ধীরে ধীরে খুঁজে পান পুরনো ধার। গত মৌসুমে সার্বিয়ান লিগে ৩৪ ম্যাচে ১৮ গোল করার পর তাঁকে দলে ভেড়ায় বুন্দেসলিগার দল বুশাম। 

জাতীয় দলে আসানো অবশ্য বরাবরই এক আস্থার নাম। ডানপ্রান্ত দিয়ে গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে এলোমেলো করে দেয়াই তাঁর দায়িত্ব। বিশ্বকাপকেই বেছে নিলেন নিজের ফিরে আসার বার্তা দিতে, নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তাঁর গতিতে পরাস্ত জার্মানি। বদলি হিসেবে নেমে জার্মান ডিফেন্ডার নিকো শ্লোটারব্যাককে পরাস্ত করে দুরূহ কোণ দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। তাতেই হার জার্মান মেশিনের, এক আসানোই যেন হারিয়ে দিলেন গোটা জার্মানিকে। 

আর্সেন ওয়েঙ্গার সব সময়ই বলতেন আসানো ফুল হয়ে ফুটবেন। অবশেষে তিনি সত্য প্রমাণিত হলেন। কেবল সময়টা একটু বেশি লাগলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link